ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বিএনপি। তবে সরকার পতনের লক্ষ্যে চলমান আন্দোলনও চালিয়ে যাবে দলটি। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে নির্বাচনের অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে মেয়র পদে হেভিওয়েট প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা করছে দলটি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু ঢাকা উত্তর থেকে মেয়র পদে প্রার্থী হতে পারেন। আর ঢাকা দক্ষিণে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বা দুই যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু কিংবা রুহুল কবির রিজভী মেয়র প্রার্থী হতে পারেন।
গত কয়েকদিন ধরে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শের পর থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিএনপিপন্থী একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে যায়। সাক্ষাতের সময় সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন খালেদা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমেদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সদস্যদের একজন মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, ‘দলে দুই ধরনের চিন্তা রয়েছে। দলের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে একপক্ষ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে এবং ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন’ হতে না দেওয়ার পক্ষে।
সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, ‘আরেকটি পক্ষ মনে করে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জেলে কিংবা পালিয়ে থাকার ফলে নির্বাচন বয়কট করা উচিত। দলের কর্মীদের নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। তাই নির্বাচনে অংশ নেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না বলে তারা মনে করে।’
বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় আত্মগোপনে আছেন বুলু আর মিন্টু পলাতক। গয়েশ্বর ও রিজভী আছেন কারাগারে।
৬ জানুয়ারি থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে আসছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। অবরোধ ও হরতালে পেট্রোলবোমা হামলায় অনেক প্রাণহানি হয়েছে। সরকারকে পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে এ আন্দোলন করছে বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, নির্বাচনের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে হরতাল শিথিল করা যায় তবে সারাদেশে অবরোধ চলবে। জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পার্থক্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া আমাদের আন্দোলনের অংশ হবে।’
তিনি জানান, দলের তৃণমূলের অনেক নেতা মনে করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হলে সরকারবিরোধী আন্দোলন নতুন গতি পাবে।
তিনি বলেন, অবরোধ হরতাল কার্যকারিতা হারিয়েছে। নির্বাচনে ভালো ফলাফল আন্দোলনকে চাঙ্গা করবে।
সম্প্রতি বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জয়ী হন। তবে বেশিরভাগই এখন কারাগারে রয়েছেন অথবা সরকার দ্বারা অকার্যকর আছেন।
আরেক শীর্ষনেতা জানান, সরকার ক্রমাগত নিজের কৌশল পরিবর্তন করছে। তাই বিএনপিকেও তার কৌশল বদলাতে হবে সরকারকে মোকাবেলায়। তিনি বলেন, বিএনপির উচিত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাতে করে আওয়ামী লীগের মুখে চুনকালি মারতে পারে। যদি তারা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তারা আরও পিছিয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, যদি বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে তাহলে সরকার বিপুল ভোটার উপস্থিতি দেখিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলবে যে, জাতীয় নির্বাচনে ভোটার কম উপস্থিতির কারণ ছিল বিএনপির সন্ত্রাস।
দলটির মধ্যম পর্যায়ের এক নেতা জানান, নোয়াখালীর প্রচুর মানুষ থাকায় ঢাকা দক্ষিণে বুলুকে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে বুলু নোয়াখালী থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে গয়েশ্বর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন। তাই এ বিষয়টিও ভাবছে সরকার। এলাকাটি সম্পর্কে গুয়েশ্বরের ভালো ধারণাও রয়েছে। প্রার্থী হিসেবে তৃতীয় বিবেচনায় থাকছেন রুহুল কবির রিজভী। তার একটি ‘ক্লিন ইমেজ’ ও সহমর্মিতা রয়েছে।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেড় মাস ধরে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে।