অবরোধ হরতালের নাশকতা প্রতিহত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যখন ব্যস্ত। এমন সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ছিঁচকে থেকে শুরু করে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা পর্যন্ত। রাজধানীসহ সারা দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ। এদিকে চলমান সহিংসতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকায়, অন্যান্য অপরাধ প্রবণতা রোধে তেমন কোন ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না। ফলে অপরাধীদের দৌরাÍ ক্রমেই বাড়ছে।
গত বুধবার মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে রমজান নামে ২৫ বছর বয়সী এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘন্টা পার হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি কোন অপরাধী।
এমনকি পুলিশ আটক করতে পারেনি নিহতের রুমমেট ও কথিক বন্ধুকেও।
এ ছাড়াও সম্প্রতি রাজধানীর কদমতলীর ওয়াসা রোডে জলিল নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার তদন্ত করে জড়িত ৪-৫ জনকে শনাক্ত করেছে ডিবি পুলিশ। এ ছাড়া গত নভেম্বর মাসে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ সোর্স আসলামকে খুন করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নয়জনকে গ্রেফতার করে ডিবি। তাদের মধ্যে পাঁচ জনের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আরও ৪ জনের নাম উঠে আসে। পরে তাদের অবস্থানও শনাক্ত করা হয়। তবে রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকায় পুলিশের পক্ষে এসব সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে একই মাসে আজিমপুরের শহীদ মাজার এলাকায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে একটি চক্র। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই চক্রের চার সদস্য জুলহাস, ছোট সাত্তার, বড় ছাত্তার ও এমদাদকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সপ্তাহ তিনেক পার না হতেই জামিন পেয়ে তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। এরপর রামপুরায় গাড়ি ছিনতাইয়ের একটি ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ফের ওই চক্রটির জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। শুধু রামপুরায় এ ঘটনা নয়, রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় এখন খুনি, চোর, ডাকাতসহ পেশাদার অপরাধীদের অনেককে শনাক্ত করা হলেও তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশের অধিকাংশ সদস্যই এখন ব্যস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যে সহিংসতা চলছে তা মোকাবেলায়। তাই মামলার তদন্ত ও বিপদগ্রস্ত সাধারণ মানুষের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় মামলার চার্জশিট ও ফাইনাল রিপোর্ট দাখিলের সংখ্যাও কমেছে। চাঞ্চল্যকর অনেক মামলার তদন্তও থেমে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকেই এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
পুুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে কৌশলে মাদকের দুটি চালান ঢাকায় পৌঁছে।
এ ছাড়া সীমান্তের আরেকটি জেলা থেকে আসে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র। পুলিশ এসব অপরাধীর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় মনোসংযোগ করতে না পারায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ বলছে, গত ৫ জানুয়ারির পর রাজধানীতে খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই আগের তুলনায় অনেক কমেছে। এর কারণ হিসেবে দুটি বিষয় উল্লেখ করছে তারা। প্রথমত রাজনৈতিক অস্থিরতায় টার্গেট করে অপরাধ কার্যক্রম চালানো কিছুটা কষ্টসাধ্য। দ্বিতীয়ত সহিংসতার কারণে রাস্তায়, পাড়ার অলিগলিতে পুলিশের টহল ও নজরদারি বেড়েছে। এ কারণে সাধারণ অপরাধীরা কিছুটা কোণঠাসা।
এদিকে পুলিশের একাধিক সূত্র বলেছে, তাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবেলা করে জনমনে স্বস্তি বজায় রাখা। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো ক্লুলেস হত্যা মামলা, মাদকসম্রাট, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও দাগি সন্ত্রাসীদের নিয়ে নিবিড় অনুসন্ধান করে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। পেশাদার অপরাধীদের পেছনে সময় ব্যয় করতে না পারলেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় রাস্তায় বেশি সময় পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, রাজধানীর ৪৯ থানায় মাসিক গড়ে দুই হাজার মামলা দায়ের হয়। প্রতিমাসেই দায়ের মামলার অর্ধেক তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তবে চলমান সহিংসতা মোকাবেলায় সে ক্ষেত্রে কিছুটা বিঘ হয়েছে।