গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া কথোপকথন অসত্য নয় বলে জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের উদ্যোক্তা মাহমুদুর রহমান মান্না। তবে সম্প্রতি নাগরিক সমাজ নামে একটি সংগঠনের হয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ চেষ্টার অন্যতম অংশীদার মান্না দাবি করেছেন, তার কথোপকথন নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তার শিরোনামটি ঠিক হয়নি। সংবাদের উপস্থাপনায় তার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়া এই নেতা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া কথোপকথন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কত লোকের সঙ্গেই আমার কথা হয়। খোকা (সাদেক হোসেন খোকা) ভাইয়ের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তিনি রাজনীতিক আমিও রাজনীতির সঙ্গে আছি যে কারণে রাজনীতি নিয়েই আমাদের মধ্যে প্রায়ই কথা হয়। কিন্তু তার আমাদের ফোনালাপকে যেভাবে বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রের অংশ।’
রবিবার রাতে দেশের গণমাধ্যমে মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার মধ্যকার ফোনলাপ ফাঁস হয়ে যায়। এনিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে দেশের বিভিন্ন মহলে।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ’ ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসুর সাবেক সভাপতি মান্না বলেন, ‘পুরো ফোনালাপের কোথাও কি আমি বলেছি লাশ চাই? খোকা ভাইকে আমি বলেছি আপনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে গেছেন। ওখানে আবার ঢোকার চেষ্টা করেন। তিনি বললেন, ঢোকার চেষ্টা করলে তো সংঘাত হবে। মানুষ মারা যাবে। তখন কথার কথা বলেছি, এখন যদি কেউ মারা যায় তাহলে আপনার কী করার আছে। তার মানে তো এই নয় যে, আমি লাশ চেয়েছি।’
সোমবার ঢাকায় নাগরিক ঐক্যের গণমিছিলের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘লোক চাইতে আমার নিউইয়র্কে ফোন দিতে হবে কেন? ঢাকায় আমার কর্মসূচি এ জন্য আমি নিউইয়র্কে ফোন দেবো? সরকার তো বিরোধী দলের লোকজনদের মিটিং, মিছিল করতে দিচ্ছে না। তাছাড়া আমারটা তো কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এটা সাধারণ মানুষের একটা প্লাটফর্ম। কিন্তু তারপরও কেন সরকার আমার উপর এত খড়গহস্ত হয়েছে আমার বুঝে আসছে না। আমাকে বেকায়দায় ফেলতে এসব করা হচ্ছে।’
আপনি কি গ্রেপ্তার, মামলা হামলার আশঙ্কা করছেন? জবাবে মান্না বলেন, ‘আমার তো এর চেয়ে বেশি কিছু মনে হচ্ছে। তা না হলে এভাবে আমার ওপর ক্ষ্যাপার কারণ কী?’
‘অজ্ঞাত’ ব্যক্তির সঙ্গে সেনা হস্তক্ষেপ নিয়ে ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘অনেকেই আমাকে ফোন দেন। বলেন, ভাই এভাবে আর কতদিন চলবে। অবস্থার কি পরিবর্তন হবে না? যে লোকটার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আমি তাকে চিনিও না। দ্বিতীয়বার তার সঙ্গে কোনো কথাও আমার হয়নি। সে বলেছে, কাদের কাদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবে। আমি বলেছি, ঠিক আছে কেউ কথা বললে বলবো। এর বেশি কিছু নয়। তাই বলে আমি সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছি এটা কেমন কথা?’
তার ব্যাপারে সমালোচনার বিষয়ে মান্না বলেন, ‘টিভি টকশোতে আমাকে নিয়ে যেভাবে কথা হচ্ছে তা শুনে মনে হয় আমি রাজনীতির ভিলেন হয়ে গেছি। কী এমন যেন আমি করে ফেলেছি। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এখন যদি দেশের সচেতন সাংবাদিক সমাজ ও গণমাধ্যম এগিয়ে না আসে তাহলে তো এই বিপদ থেকে রক্ষা মিলবে না।’
ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তর) নির্বাচনে মেয়র পদে লড়তে চান মান্না। বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। সরকার যখন দেখছে আমার পক্ষে জনসমর্থন বেশি, তখন অকৌশলে আমাকে মানুষের কাছে হেয় করার জন্য এসব করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো, এটা ভাবা ঠিক হবে না।’