ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন ৬ জন লেকচারার। এর মধ্যে রয়েছেন বিভাগের ১৯ তম স্থান অধিকারী ইমাউল হক সরকার টিটু। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের স্টাডিজ বিভাগে নিয়ম বহির্ভূত এই নেতাকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগের প্রতি ব্যাচের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এবং সব কিছুতেই অধিক যোগ্য যিনি তিনিই নিয়োগ পেয়ে থাকেন। যেখানে ছাত্রলীগের ওই নেতার কোনটাই নেই বলে বিভাগের একটি সূত্র অভিযোগ করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ৭ জন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্টকে টপকিয়ে ছাত্রলীগের এই নেতাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। নিয়ম বহির্ভূত এইরুপ নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ পুরো ক্যাম্পাসে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নানা মহলে চলছে ব্যাপক গুঞ্জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগের সংখ্যা নিয়েও দুর্নীতি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে দু’জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা জানালেও সেখানে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে ৬ জন শিক্ষককে। আর এর পেছনে নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগকে ‘হালাল’ করার জন্য বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের পছন্দ অনুযায়ী যোগ্য কয়েকজন প্রার্থীকেও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যাতে অনিয়ম নিয়ে যেন কোন কথা না উঠে।
জানা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীরা হলেন- ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমাউল হক সরকার টিটু, রফিকুল ইসলাম, বিভাগে প্রথম নারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ফারজানা ইসলাম, আমির হোসেন, বাকিবিল্লাহ মাসুম এবং জাহিদুল ইসলাম সানা।
বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, ৩১ ডিসেম্বর বুধবার তাদেরকে বিভাগের নিয়োগ পত্র প্রদান করা হবে। এর আগে শিক্ষক বাছাই কমিটিতে তাদেরকে অনুমোদন দেয়া হয়। বাছাই কমিটিতে ছিলেন, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমদ, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদ, বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুল মালেক ও অধ্যাপক ড. আব্দুল বাকী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, প্রো-ভিসির (শিক্ষা) সঙ্গে ছাত্রলীগের ওই নেতার দলগত লবিং রয়েছে। মূলত তার দলীয় লবিংয়ের কারণেই তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে যোগ্যতাকে কোনভাবেই মূল্যায়ন করা হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়।
যেখানে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েও অনেকেই নিয়োগ পাননি সেখানে ১৯ তম হয়ে ছাত্রলীগের এই নেতার শিক্ষক হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
এছাড়া শিক্ষকরা আরো বলেন, নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম সানা নামের প্রার্থীও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। সাবেক এই নেতার বিরুদ্ধে হলের ক্যান্টিনে ফাউ খাওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে নিয়োগ বঞ্চিত বিভাগের ইতিহাসে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট প্রাপ্ত একমাত্র শিক্ষার্থী সিরাজাম মুনিরা বলেন, আমার মৌখিক পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। কিন্তু আমাকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিভাগের শিক্ষকরা তার প্রতি অবিচার করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, বিভাগে বরাবরই আমার রেজাল্ট ভালো ছিল। বিজ্ঞপ্তিতে চাওয়া হয়েছিল এসএসসি এইচএসসিতে ৪.২৫ (জিপিএ), অনার্স মাস্টার্সে ৩.৫০ (সিজিপিএ)। অথচ আমার ছিল এসএসসি এইচএসসিতে ৫.০০ (জিপিএ) এবং অনার্সে ৩.৯১ ও মাস্টার্সে ৩.৯৩ (সিজিপিএ)।
জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই উল্লেখ করে বলেন, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। তারা যেটা ভালো মনে করেছে সেটাই করেছে। নিয়োগ নিয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করা হয়নি। এক্ষেত্রে নিয়ম মেনেই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন নিয়ম নেই যে, ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্টদের নিয়োগ দিতে হবে। যারা যোগ্য তাদেরকেই মূলত শিক্ষক হিসেবে বাছাই করা হয়েছে।