সরকারবিরোধী আন্দোলনের ‘রোডম্যাপ’ চূড়ান্ত করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। নতুন বছরের শুরু থেকেই নতুন নির্বাচনের দাবি নিয়ে আন্দোলনে মাঠে নামছে বিএনপি জোট। প্রাথমিকভাবে আগামী ৫ জানুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি জনসভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে ২ জানুয়ারি একই স্থানে আরেকটি জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আজ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বৈঠক করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন।
জানা যায়, নতুন নির্বাচনের দাবিতে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত একটি আল্টিমেটাম দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারি জনসভার অনুমতি না দেওয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে টানা ৭২ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি আসতে পারে। এরপর থেকে টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতেই থাকবে বিএনপি জোট। দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক মহল থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই বিএনপি আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে বলেও সূত্র জানায়।
জানা গেছে, সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি সরকারকে আর সময় দিতে রাজি নয়। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন বছর শুরু করতে চায় তারা। এ জন্য আন্দোলনের একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ নেতার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এবং নগর বিএনপির প্রথম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মহানগর বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং সদস্য বরকত উল্লা বুলু উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১২টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টার এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে মির্জা আব্বাস এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হওয়া টানাপড়েন সম্পর্ক অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানা যায়। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। তিন নেতা তাদের অভিমানের কথা বলেছেন এবং আগামী সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল করতে এক হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, নগর কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ রাতে খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসায় ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সেখানে আন্দোলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত হবে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানিয়েছেন, জনসভাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার অনুমতি চাইবে বিএনপি। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে তার দলের দাবি তুলে ধরবেন। এরপর ৫ জানুয়ারির জনসভার অনুমতি না দেওয়া হলে ফের সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি চেয়ারপারসন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। বৈঠকে উপস্থিত অপর এক নেতা জানিয়েছেন, ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের জনসভায় খালেদা জিয়া আরও জোরালো বক্তব্য রাখবেন। ওই জনসভায় আন্দোলন সম্পর্কে নেতা-কর্মী এবং জনগণকে একটি ধারণা দিয়ে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানাবেন তিনি। এর আগে ২৪ ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার নিম্ন আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক শো ডাউন করবে দলটি। এদিকে প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এবার ১৭ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের র্যালি করেনি বিএনপি। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা জানিয়েছেন, ‘আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। আমাদের কাছে খবর এসেছে, ওই দিন র্যালিতে ‘দুর্বৃত্তরা’ বোমা হামলা করে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেফতার করত।