রাজধানীতে সুন্দরী তরুনীদের প্রতারনা বেড়েই চলেছে। রূপ-যৌবন তাদের পুঁজি। আর তা দিয়েই ফাঁদে ফেলা তাদের পেশা। প্রথমে বিত্তশালী কারো সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। পরে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে যাওয়া। চলে দৈহিক মেলামেশা।
সুযোগ বুঝে একদিন কৌশলে বাসায় আটকে রেখে কুমারী পরিচয়ে বিয়ে পরে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি। কখনো বা গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করে তা দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা। মুক্তিপণ বা ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় হলেই ছেড়ে দেয়া হয় ভুক্তভোগীদের। লোক-লজ্জার ভয়ে কেউ এ বিষয়ে আইনি পদপেও নিতে চান না।
তাদের ফাঁদে পা দিয়ে একদিকে সর্বস্ব হারাচ্ছে, অপরদিকে মিথ্যা মামলার গ্লানী টানতে হচ্ছে অনেককে। সুন্দরী ললনাদের রক্ষায় রয়েছে প্রভাবশালী একটি চক্র। তারা (প্রতারকরা) র্যাব-পুলিশের হাতে প্রতারনার অভিযোগে আটক হওয়ার পর আবার জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছে। ফিরে যাচ্ছে আবারো সেই পুরোনো পেশায়।
জানা গেছে, রাজধানীর ব্যস্ততম ক্রাইম এলাকা যাত্রাবাড়িতে কুমারী পরিচয়ে ৫ লক্ষ টাকার কাবিনে ইয়াছিন হোসেন কিরনের সঙ্গে বিয়ে হয় প্রতারক কান্তা মনি-২৩। বিয়ের আগে কান্তা মনি ইয়াছিন হোসেন কিরনের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ভালোবাসার অভিনয় করে। ওই বিয়ের কাবিন হয় ১-১০-১২ইং তারিখে। কাবিনে কন্যার জন্ম তারিখ দেওয়া হয়-১৮-০১-১৯৯৪ইং। এতে বিয়ের বয়স ১৮ বছর উল্লেখ করে কান্তা মনি।
অপরদিকে বরের জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়-০২-০১-১৯৯১। ওই বিয়েতে কন্যার বাসস্থান উল্লেখ করা হয়-পিতা মো. শহীদ খান, মাতা-আছমা বেগম, সাং-৫/২ উত্তর যাত্রাবাড়ি-ঢাকা। বিয়ের কাজী ছিলেন মাওলানা মো. মামুনুর রশীদ খান, ৪৪ নং (সাবেক-৮০) ওয়াড, সুত্রাপুর-ঢাকা।
কিরনের পরিবারের অভিযোগ-বিয়ের কয়েকদিনের মাথায় কান্তা মনির আসল চেহারা উম্মোচন ঘটে। সে স্বামীকে না বলে প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়, মদ্যপান অবস্তায় বাসায় ফিরে গভীর রাতে।
এর পর একদিন ৬ ভরি স্বর্ন এবং প্রায় লক্ষাধিক টাকা নিয়ে হঠাৎ উদাও হয় কান্তা মনি। নিখোজের কয়েকদিন পর বাসায় ফিরে স্বামী কিরনকে বলে আমাকে কাবিনের দেন মোহর বাবদ পাওনা টাকা অতিশীঘ্রই দিতে হবে। তা না হলে তোমাদের পরিবারের সবাইকে আমি জেলে পোড়ে মারবো। এটাই আমার পেশা। সংসার করার জন্য আমি তোরে বিয়ে করিনি। এর পর কিরনের পরিবারের সদস্যদের নামে যাত্রাবাড়িসহ বেশ কয়েকটি থানায় নারি নির্যাতনের মামলা এবং জিডি করে কান্তা।
এর আগে নারায়ন গঞ্জের সোনারগাঁও থানার ধন্দি বাজার এলাকার মুত আফতাব উদ্দিন ভুইয়ার ছেলে মো. সুজন ভুইয়ার সঙ্গে কাবিন নামায় ১৮ বছর উল্লেখ করে এবং কুমারী সেজে ২৮-০১-২০১০ইং সালে কান্তা মনির বিয়ে হয়। ওই কাবিনে একলক্ষ টাকা দেনমোহরের পরিমাণ ধার্য করা হয়। ওই বিয়েতে কান্তা মনির বাসস্থান দেখানো হয়- পিতা শহীদ খান, মাতা-আছমা বেগম, থানা-যাত্রাবাড়ি, জেলা-ঢাকা। ওই বিয়ের কাজী ছিলেন-এম সাদেক উল্যাহ। ঠিকানা-২৮ জনশন রোড(দ্বিতীয় তলা) রায়সাহেব বাজার, কোতয়ালী-ঢাকা-১১০০।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, দুই বছরের ব্যবধানে কান্তা মনি দুইটি বিয়ে করেছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী কাউকে তিনি তালাক (ডিভোস) দেননি। উভয় স্বামীকে প্রতারনার জ্বালে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সর্বশেষ ইয়াছিন হোসেন কিরনের পরিবারের নিকট থেকে পুরো ৫ লাখ টাকা নিতে না পারায় তাদের বিরুদ্ধে নারি নির্যাতনের মামলা দিয়েছেন কান্তা মনি।
এভাবেই প্রতিনিয়ত চলছে রাজধানীজুড়ে সুন্দরী নারিদের প্রতারনার কৌশল। কতিপয় আইনের লোকদের আশ্রয়ে বার বার তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েও মুক্তি পাচ্ছে।
সুত্র মতে, পুলিশ-র্যাবের পৃথক অভিযানে সম্প্রতি উজ্জ্বল নাগ (৪৩) নামের এক গার্মেন্ট কর্মকর্তাকে এভাবেই দেহের ফাঁদে ফেলে আটকে রাখে একটি চক্র। এরপর তার কাছে প্রথমে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই জানালে শেষে ১০ লাখ টাকায় রফা হয়।
এর মধ্যে এক বন্ধুর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েও যায় চক্রটি। পরে পরিবার ও গার্মেন্ট কারখানার পক্ষ থেকে পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হলে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তিন দিনের মাথায় উজ্জ্বল নাগকে বাসাবোর কদমতলার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করেন।
এসময় আটক করা হয় রোজী আক্তার তানহা (২৩) ও তার চার সহযোগীকে। অন্যরা হলো- নিলয় আহমেদ রাজু (২৫), ইসমাইল (১৮), মিলন (১৮) ও ইব্রাহীম (১৯)। আটককৃত রাজু ও তানহা বাসাবোর ওই বাসায় লিভটুগেদার করতো বলেও স্বীকার করেছে।
এর আগে র্যাব-১ এর একটি দল সম্প্রতি বারিধারার ডিওএইচএসের ৭ নম্বর লেনের ৪৪৮ নম্বর অ্যাপার্টমেন্টের তৃতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে বার জনকে আটক করেছে। তারাও বিভিন্ন গার্মেন্ট মালিকসহ ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওই বাসায় ডেকে আনতো। পরে অফিসে থাকা মহিলাদের সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা করার সুযোগ করে দিতো। কৌশলে এসব দৃশ্য ভিডিও করা হতো। পরে আপত্তিকর অবস্থার সেই ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। আদায় করা হতো বিপুল অর্থ। কখনো কখনো অবৈধ অস্ত্র দেখিয়ে শারীরিক ভাবে নির্যাতন এবং সাদা স্ট্যাম্পে স্বার রেখেও টাকা আদায় করতো তারা।
এদিকে, মুন্নি আক্তার নামের ফেসবুক আইডির ফাঁদে পা দেয়া এক যুবককে উদ্ধার করেছে নরসিংদী সদর থানা পুলিশ। সেই সাথে ৪ প্রতারক-অপহরণকারীকেও আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া যুবক টংগী থেকে নরসিংদী এসেছিলেন মুন্নি আক্তারের সাথে দেখা করতে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মুন্নি অক্তার নামে ফেইসবুক আইডি ব্যবহার কারী সুমন মিয়া (২৩), হিমেল মিয়া (২৬), রাসেল (২২) ও সোহেল মিয়া (২২)। এ ঘটনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
এর আগে আগের বিয়ে গোপন রেখে কুমারী দাবি করে পুনরায় বিয়ে করে স্বামীর সাথে প্রতারনা করার অভিযোগে স্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সম্প্রতি বরিশালের চীফ মেট্রোপলিটন আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন নগরীর ব্রাউন কম্পউন্ড এলাকার বাসিন্দা মৃত নেহাজ উদ্দিন মৃধার ছেলে জিয়াদুল হাসান।
লিপির পুর্বের বিয়ের কথা গোপন রেখে নিজেকে কুমারি দাবি করে জিয়াদুল হাসানকে বিয়ে করেন। জিয়াদুল হাসান বিয়ের পরেই সে জানতে পারে তার সাথে সদ্য বিয়ে হওয়া স্ত্রী পিপির আগে একটি বিয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, “রাজধানীতে একাধিক প্রতারক ব্ল্যাকমেইলিং করছে। ইতিমধ্যেই আমরা এ চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”