সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪: যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। সোমবার সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটের জরুরী সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অবশ্য এর আগে সোমবার দুপুর দেড়টায় সুষ্ঠ তদন্তের সার্থে একই সাথে পদত্যাগপত্র জমা ও ছুটির জন্য আবেদন করেন ড. সাইফুল ইসলাম।
এদিকে তাকে বহিষ্কারের জন্য ৭ দিনের আল্টিমেটাম ও তার বিরুদ্ধে মামলার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এদিন নাট্যকলা বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সাইফুল ইসলামকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এসময় তাকে চাকুরিচ্যুত করার দাবি তোলেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলীসহ বিভাগীয় শিক্ষক অধ্যাপক শাহমান মৈশান কয়েকজন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে রাতে সিন্ডিকেট সভায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা তাকে ছেড়ে দেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, সাইফুল ইসলাম এর আগেও অনেক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাকে আজীবন চাকরিচ্যুত করার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ঢাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ছাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
ওই ছাত্রীর অভিযোগ, পরীক্ষায় নম্বর নিয়ে সম্যসা হলে সাইফুল ইসলাম বিভাগের মাধ্যমে ওই ছাত্রীর সাথে যোগাযোগ করেন। এরপর শনিবার বিকালে তিনি ঐ ছাত্রীকে ইন্টারন্যাশনাল হলের ৫ তলার একটি রুমে আসতে বলেন। তিনি সেখানে গেলে বিভিন্ন কথার শেষে ওই শিক্ষক তাকে সোফা থেকে টেনে বিছানায় নেয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নির্ধারিত ক্লাস শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁকে কিছু কথা বলার জন্য থাকতে বলেন। পরে তিনি রাজি না হলে ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁকে আটকে রাখেন।
তারা জানান, রোববার যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ওই ছাত্রী ঢাবির উপাচার্য বরাবর একটি অভিযোগপত্র পেশ করেছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা বাধ্য হয়েছি আন্দোলন করতে। আমাদের দাবি তাঁকে ঢাবি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হোক।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বলেন, মেয়েটির অভিযোগপত্র পড়েছি, তার(ছাত্রী) মোবাইলের রেকর্ডও শুনেছি। তাতে বুঝেছি ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ সত্য। তিনি আরও বলেন, ঢাবির শিক্ষকদের যে আদর্শ থাকা উচিত, যে নৈতিকতা থাকা উচিত, যেটা শিক্ষার্থীরা অনুসরণ করবে তার বিপর্যয়ের কথা শুনেছি আমি ওই রেকর্ডে। সোমবার সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটের সভায় এব্যাপারে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমার বাসায় ঐদিন কেউ আসেনি।
আপনার নীরবতায় কী প্রমাণ করে আপনি দোষী ? এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো ধরনের অপরাধ করিনি। আমি যদি নিজেকে দোষী মনে করতাম তবে কি আজকে ক্লাস নিতে আসতাম? তবে কী ধরণের ষড়যন্ত্র এবং কেন করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলেন নি।
বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের একটি সূত্র জানিয়েছে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সাদা দলের কলাভবনের যুগ্ম-আহ্বায়ক। এটি তাঁর বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, সাইফুল ইসলামের বিষয়টি আমরা সবাই জানি। কিন্তু তোমাদের আইন হাতে তুলে নিলে চলবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সবার সঙ্গে আলোচনা করে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নৈতিকতা চর্চার দিকে সবসময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। যে অভিযোগ উঠেছে সেটা নিয়ে জরুরী সিন্ডিকেট সভা থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তার পদত্যাগ গৃহীত হবে কিনা সেটাও সিন্ডিকেট ঠিক করবে বলে জানান তিনি।