ব্রেকিং নিউজ
Home / বিনোদন / ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধে হাসপাতালে বেসবাবা সুমন এবং একটি খোলা চিঠি

ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধে হাসপাতালে বেসবাবা সুমন এবং একটি খোলা চিঠি

sumonব্যান্ডসঙ্গীতের শ্রোতাদের কাছে তিনি বেজবাবা সুমন বলে পরিচিত। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড অর্থহীন-এর ভোকাল সুমন ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ক্যান্সারের সাথে লড়ছেন। পাঁচ বছর ধরেই ক্যানসারে আক্রান্ত জনপ্রিয় ব্যান্ড অর্থহীনের দলনেতা ও ভোকাল। কিন্তু বিষয়গুলো মিডিয়া কিংবা জনসম্মুখে খুব কমই প্রকাশ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে ১০টি সার্জারি হয়েছে সুমনের। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংককে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে হয়েছে তার ১১তম সার্জারি। এ সার্জারির কয়েক ঘণ্টা আগে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন সবার উদ্দেশ্যে।

২০০৫ সালে সুমনের চোয়ালের হাড়ে মারাত্নক সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসক বলেন যে, সুমনের আগের মত গান করতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম।

বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে তার অবদান অনেক। নানা বিষয় নিয়ে তিনি প্রায়শই তুলে ধরেন নানা সঙ্গতি-অসঙ্গতি। অপারেশনের আগে তিনি নিজের ফেসবুকে পাঠকদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। সাথে নিজের একটি ছবিও আপলোড করেছেন হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী। ক্যাপশন লিখেছেন- হ্যালো ওয়ার্ল্ড!

sumon 1

পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু প্রকাশ করা হলো।

“আর কয়েক ঘন্টা পর আমার গুরুত্বপূর্ণ ২ টি সার্জারি হবে। গত ৫ বছরে এটা আমার ১১তম সার্জারি! জ্বী,… ঠিকই পড়েছেন। এটা কোন টাইপো নয়। একাধিক ক্যান্সার ফাইট করেছি আমি। সুতরাং সার্জারি ব্যাপারটা ইদানিং একটা অভ্যাসের মত হয়ে গেছে! ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করলে যা হয়, মৃত্যু ভয়ও কমে যায় একটা সময়। অন্তত আমার বেলায় তাই হয়েছে।

কিছুদিন আগে আমি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ফেসবুকে। জনৈক মিউজিশিয়ান এবং টিভি চ্যানেল নিয়ে। আমাকে এবং আমার শ্রদ্ধেয় এক সিনিয়র মিউজিসিয়ানকে হিউমিলিয়েট করা নিয়ে। আশাকরি, আগামীকাল আমার ঠিকমত জ্ঞান ফিরবে। আশা করছি, এবারও আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিবেন। কিন্তু কোন কারণে যদি সেটা না হয়, তবে আমার লেখা একটি খোলা চিঠি পাবেন ইন্টারনেট, রেডিও, সাপ্তাহিক পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে। সেখানে আমি বিশিষ্ট এক ‘সিনিয়র মিউজিশিয়ান’ এর আমার বিরুদ্ধে নোংরা পলিটিক্স-এর ভিতরের কাহিনী তুলে ধরব। সময়মত এই চিঠি সব মিডিয়াতে চলে আসবে। মুখোশ খুলে যাবে তার।

এই ব্যাপারটা আমি কেন করছি সেটা নিয়ে অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন। অনেকেই বলছেন কেন এই ‘কাঁদা ছোঁড়াছঁড়ি’? এই প্রশ্নের উত্তর যে কাদা ছোঁড়া শুরু করেছেন তাকে করলেই মনে হয় ব্যাপারটা ভাল হবে, আমাকে নয়।

কুকুর আপনার পায়ে এসে কামড় দিলে আপনার তার পায়ে কামড় দেবার দরকার নেই। চিৎকার করে কুকুরকে তাড়িয়ে দিন, অথবা লাঠির বাড়ি দিন। আমার কাউকে কামড়ানোর কোন ইচ্ছা নেই। কিন্তু আমার লাঠি প্রস্তুত। আমাকে অন্যায়ভাবে একজন মিউজিশিয়ানের এবং একটি টিভি চ্যানেলের অপমান করা আমি ছেড়ে দিব কেন?

‘ফর দ্যা গ্রেটার গুড অফ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি’? একটা কথা বলি, গ্রেটার গুড অফ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করেই কিন্তু এইসব মানুষের চেহারা সাধারণ শ্রোতার সামনে আনা উচিত। আপনি মিউজিক ভালবাসেন? আপনি চান বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ভালো হোক? তাহলে আমাদের এখান থেকে এইসব জঘন্য মিথ্যাচারকে বিদায় দিতে হবে। ইটস নট অ্যাবাউট রিভেঞ্জ, ইটস অ্যাবাউট জাস্টিস! কারণ আমি যদি মরেই যাই, তবে রিভেঞ্জের প্রশ্ন আসবে কোথা থেকে?

আমার শেষ ব্লগটা লেখার পর অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় একজন রেস্পেক্টেড মিউজিশিয়ান একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল। সেটার জন্য কি সেই টিভি চ্যানেলে রিপোর্ট হওয়া উচিত নয়? সেই স্ট্যাটাস নিয়ে কি আমি বলতে পারি না যে আমাকে নিয়ে লেখা হয়েছে? কোথায় গেল সেই চ্যানেল? কেন এখন চুপ?

আমাকে যিনি টিভি চ্যানেলে ছোট করেছেন, এটা তার প্রথম কাজ নয়। বেশ কয়েক বছর আগে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাতেও আমাকে নিয়ে বেশ কিছু মিথ্যা কথা তিনি বলেছিলেন, যেটার রিপোর্টার ছিল তার খুব কাছের একজন মানুষ। তখন কিছু বলিনি। অন্য কিছু সিনিয়র মিউজিশিয়ান এর অনুরোধে চুপ করে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন যা বুঝলাম, মানুষ এত সহজে বদলায় না। চুপ করে থাকা বোকামি।

সবকিছুর ভিডিও, স্ক্রিনশট ইত্যাদি নিয়ে আমার ‘চিঠি’ তাই প্রস্তুত করলাম। সেই সময়ের সাপ্তাহিক পত্রিকা থেকে শুরু করে এ সময়ের এই টিভি অনুষ্ঠানের ভিডিও, স্ক্রিনশট… সবকিছুই দেখতে পারবেন আপনারা। আপনাদের কাউকেই অনুরোধ করবো না আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য। শুধু অনুরোধ করবো, আমি যদি এই ফেসবুকে আর না ফিরি তবে আপনারা আমার চিঠিটা ঠান্ডা মাথায় পড়বেন/দেখবেন। এবং নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে জাজ করবেন।

আমার জন্য কাল যদি কারো চোখ থেকে এক ফোঁটা পানিও পরে, তবে তাকেই বলব, “আমার এবং আমার ফেলো মিউজিশিয়ানদের উপর যে অন্যায় করা হয়েছে, তার বিচার করবেন প্লিজ”। এটাই আমার অনুরোধ।

ফিরে আসছি আমার শারীরিক অসুস্থতার ব্যাপারে। আগেই বলেছিলাম কি পরিমান অসুস্থতার ভিতর দিয়ে আমি শেষ ৫ বছর গিয়েছি। অনেকবার মনে হয়েছে, আমার বুঝি সময় শেষ। কিন্তু আল্লাহ অশেষ রহমতে আমি বেঁচে গেছি। এটা সম্ভব হত না যদি আমার জন্য এত মানুসের দোয়া না থাকতো। আপনারা না থাকলে আজ হয়ত আমি বেঁচে থাকতাম না। মানুষের ভালবাসা না থাকলে এটা সম্ভব হত না। আমার পাশে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ দেবার ভাষা আমার নেই। আগামীকাল যদি আমার জ্ঞান ফেরে, তাহলে আপনাদের জন্যই ফিরবে এবং ইনশাআল্লাহ আপনাদের নিরাশ করবো না। সবাই ভাল থাকবেন।

শীঘ্রই আবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ!”

সুমন
অর্থহীন
বামরুংগ্রাদ হসপিটাল, ব্যাংকক
সেপ্টেম্বর ২০১৪