প্রশাসনের প্রতিটি স্থানে স্তরে এখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেরই জনবল। দুইদফা উপজেলা নির্বাচনে ভরাডুবির পর বাকী উপজেলা নির্বাচনগুলো দখলের জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে সরকার দলীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে স্থানীয় পুলিশ ও জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। যেখানেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা শক্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেখানেই পুলিশ-র্যাবসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার জনবল ঝাপিয়ে পড়ছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর। ফলে প্রতিটি জেলা ও উপজেলার গ্রাম-গঞ্জ থেকে অন্যস্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিএনপি দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকাও ছাড়া এখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিএনপির কোনো নেতাই হোক সে সাবেক মন্ত্রী কিংবা এমপি, নিজের এলাকায় দাঁড়াতেই পারছেন না। এসব তথ্য সরেজমিনে খোঁজ নিয়েও জানা গেছে। আর এসব কথা স্বীকারও করেছেন বিএনপির নেতারা।
তাদের অভিযোগ, সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ অন্যান্য মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা প্রতিদিন যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলে পড়ছে। নেতা-কর্মীদের বানিয়ে দেনয়া হচ্ছে উগ্র মৌলবাদী জঙ্গি। এরপরই তাদের খুঁজে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্রসফায়ারে। আর প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে সন্ত্রাসী ধরতে গিয়ে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। বিএনপির দলীয় তথ্য মতে এযাবৎ সন্ত্রাসী দেখিয়ে সরকার ৩ শতাধিক বিএনপির নেতা-কর্মী সমর্থকদের হত্যা করেছে। এর সঙ্গে রয়েছে গুম করার বিষয়টিও। সূত্র : সাপ্তাহিক আজকাল, নিউইয়র্ক
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার-দলীয় নেতারা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তাদের কারণে বিএনপি সমর্থক প্রার্থীরা এলাকায় দাঁড়াতেই পারছে না। কেউ সহাস করে দাঁড়ালে তাদেরকে সন্ত্রাসী জঙ্গি বানিয়ে গুম হত্যা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম হাত-পা কেটে দেওয়ার যেসব হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন তাতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলে পড়বে। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের ঢোলের বাড়িতে লাফিয়ে লাফিয়ে হামলে পড়বে আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, দেশে এখন উপজেলা নির্বাচন চলছে। এই অবস্থায় দায়িত্বশীল পদে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. কাজী রকিব উদ্দিন কিভাবে বিদেশ সফরে যান। অবশ্য তিনি ইতিমধ্যে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। তার বিদেশ সফরের মাধ্যমে আরও বিতর্কিত হয়ে পড়বেন তিনি।
এদিকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কারো কারো অভিযোগ, বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদেরকে প্রার্থী হতে দিচ্ছেন না ঐ সময়ে পালিয়ে থাকা দলের শীর্ষ নেতারা। নিজেদের অবস্থান সংহত করতে তারা নিজেদের পকেটের নেতাকর্মীদের প্রার্থী করছেন। একারণেও কোথাও কোথাও হারছে দলের প্রার্থী। গত রোববার রাজশাহী জেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান মারকুনীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ মারকুনী সর্বশেষ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। একইভাবে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সেক্রেটারী মুকুটকে উপজেলায় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। যদিও মুকুট আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, সে যোগ্য প্রার্থী নয়। তার চাইতেও যোগ্য প্রার্থী থাকায় মুকুটকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, যুগ্ম মহাসচিবরা মহাব্য¯ত্ম। তাদের কাছে জানতে চাইলে যুগ্ম মহাসচিব মো: শাহজাহান বলেন, তার এলাকায় প্রার্থীসহ দলের নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা এখন ঘরে থাকতে পারছেন না। ইতিমধ্যে সেখানে একজন মারা গেছেন।
সিতাকুন্ডের বাড়বকুন্ড ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুল জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী সালাহউদ্দিনসহ তারা নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। তার সঙ্গে যারা ভোট চাইতে যাচ্ছেন তাদের ওপর হামলে পড়ছে পুলিশ। নির্যাতন করছে। এমনকি সমর্থকদের পর্যন্ত ধরে এনে নির্যাতন করে পুরোনো মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যারা জামিন পাচ্ছেন তাদের জামিন না দিয়ে পুনরায় মামলা দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে টাকা নিয়েও কাজ করছে না।
রাজশাহীতে পুলিশ হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আশরাফুল ইসলাম জেলা বিএনপি নেতাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। আসামীরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এডভোকেট শাহীন শওকত, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জল, যুগ্ম আহ্বায়ক জামিলুর রহমান ও মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ডা. মোহাম্মদ জাহঙ্গীর। এর আগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ কয়েকজন নেতার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়।
খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচনে তিনি ও তার দলের প্রার্থীরা কম করে হলেও বিশটি ফ্যাক্স করেছেন নির্বাচন কমিশনকে। একটিকেও গুরুত্ব দেয়নি কমিশন। দ্বিতীয় দফায়ও একই অবস্থা।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রিজাইডিং অফিসাররা আগে থেকেই ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর করে রাখেন। এরপর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা প্রশাসনের সামনে জাল ভোট দেয়। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি দাঁড়িয়ে দেখে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদেরকে তাড়িয়ে দেয়।
বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, এমন নির্বাচনে জীবনে আগে দেখিনি। প্রশাসন আমাদের প্রার্থী ও সমর্থকদের তাড়িয়ে বেড়ায় আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহায়তা করে। কোথাও কোথাও আগে থেকেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখে।