গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার আজহারুল ইসলাম (২৮), দেবহাটার আবুল কালাম (১৭) ও মারুফ হাসান ছোটন (২২), ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে এনামুল হক (৫৫), যশোরের অভয়নগরে রবিউল ইসলাম এবং ১ ও ২০ জানুয়ারি মেহেরপুরে আবদুল জব্বার (৫৫) ও তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৩৫) যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। বিচারবহির্ভূত এই ৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল আলাদা আলাদা হলেও প্রতিটি ঘটনার জন্য ‘বন্দুকযুদ্ধ’কে দায়ী করে নিরাপত্তা বাহিনী।
নিহতদের পরিবারের দাবি, যৌথবাহিনীর সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের একদিন-দুদিন আগে নিজ বাসা অথবা কর্মক্ষেত্র থেকে তাদের গ্রেফতার করে। পরে তাদের থানা হেফাজতেও রাখা হয়। এরপরই বিভিন্ন স্থানে তাদের লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের পক্ষ থেকেও গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারির শুরু থেকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪১ দিনে ৪৪ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর আগে বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে ১৯ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও ব্যাপকভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তোলা হয়।
তবে বিচারবহির্ভূত এসব হত্যকাণ্ডের প্রসঙ্গে আইন ও বিচারমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, সরকার কখনোই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অনুমোদন করে না। হত্যাকাণ্ডের কোনো অভিযোগ নিয়ে মামলা হলে সরকার অবশ্যই তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পৃথক স্থানে সংঘটিত ওই ৬টি হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের ভাষ্য ছিল প্রায় অভিন্ন। তাদের বক্তব্য, গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে তাদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার তথাকথিত তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অস্ত্রের ভাণ্ডার উদ্ধার অভিযানে বের হলে মাঝপথে সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যৌথবাহিনীর গুলিতে ঘটনাস্থলেই এসব ব্যক্তি নিহত হন।
কিন্তু নিহতের পরিবারগুলো বলছে, গ্রেফতারের পর বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনা যৌথবাহিনীর সাজানো নাটক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত এসব ব্যক্তিদের কারো বুকে, পিঠে, মাথায়, পেটে, পায়ে, মুখে ও কোমরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। গ্রেফতারের পর থানা হেফাজতে থাকার এক-দুদিন পর রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ওই ৬ জনই স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। তারা এলাকায় সক্রিয় ও জনপ্রিয় হিসেবেই সবার কাছে পরিচিতি ছিলেন।
বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনার পর পরই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যৌথবাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হলেও নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে তার সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।
তারা বলছেন, যৌথবাহিনীর তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা সাজানো নাটক। নিজ বাড়ি ও কর্মক্ষেত্র থেকে তাদের গ্রেফতার করে থানায় দিনভর নির্যাতনের পর গভীর রাতে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে থানা অথবা নির্জন কোনো স্থানে নিয়ে খুব কাছ থেকে গুলি করে পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনার পর গণমাধ্যম কর্মীদের দেয়া পুলিশের বক্তব্য অধিকাংশই একই রকম এবং একটি আরেকটির সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে। পুলিশের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই অধিকাংশ গণমাধ্যমে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবরের ব্যাপারে তাদের ক্ষোভও লক্ষ করা গেছে। সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় সরেজমিন পরিদর্শনে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
শুধু সাতক্ষীরা জেলাতেই গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ২৭ জন। এদের সবাই স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। এছাড়া আরও ২৫ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক ব্যক্তি।
অন্যদিকে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৪৩ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৩ নেতাকর্মী রয়েছেন। গত বুধবারও যৌথবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একরামুল্লাহ বাবু (৪০) নামে একজন নিহত হয়েছেন।
জানা গেছে, যৌথবাহিনীর বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাতক্ষীরার নাগরিকদের মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি সচচেয়ে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার রাজনীতিকরা। যৌথবাহিনী দেখলেই তারা পালাচ্ছেন। ভয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নারী-শিশু ও বৃদ্ধরাও। জনগণের ভোটে নির্বাচিত এলাকার জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রিয় নেতাকর্মীদেরও হত্যা করা হচ্ছে। কাউকে আটক করা হলেই তাকে হয় হত্যা, নয়তো পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। যৌথবাহিনীর ভয়ে এখানে পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাত শুরু হলেই আতঙ্কে বিভিন্ন স্থানে চলে যায় নারীরাও। প্রতি রাতেই ঘটছে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। অগ্নিসংযোগ ও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর।
রাজনৈতিক সহিংসতায় ও যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত পরিবারগুলো বর্তমানে চরম অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সাতক্ষীরা সফর করে নিহত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পরিববারগুলোকে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা দিয়েছেন। নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের অসহায় পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না কেউই।
হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল সাঈদীর রায়ের পর
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর থেকেই সহিংস হয়ে ওঠে সাতক্ষীরা জেলা। এছাড়া প্রধান বিরোধী দল ও জোটকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আরও বেড়ে যায়। নিহতের অধিকাংশই যৌথবাহিনীর গুলিতে মারা যান।
সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে জামায়াত-শিবিরের ৭ জন নেতাকর্মী নিহত হয়। এরা হলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রইচপুর গ্রামের আল মফিজুদ্দিনের ছেলে জামায়াত কর্মী সদর উপজেলার মুন্সিপাড়া এলাকার হাজি শাহাবুদ্দীনের ছেলে জামায়াত কর্মী আল আবদুস সালাম (৬০), একই উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে জামায়াত কর্মী মাহমুদুল হাসান (২০), ঘোনা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে জামায়াত কর্মী রবিউল ইসলাম (২৫), শিবপুর ইউনিয়নের খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে জামায়াত কর্মী সাইফুল ইসলাম (২০), শিবপুর ইউনিয়নের পায়রাডাঙ্গা গ্রামের অজিয়ার রহমানের ছেলে শিবির কর্মী শাহিন আলম (২০) ও আগরদাড়ি ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামের আবদুল বারীর ছেলে শিবির কর্মী ইকবাল হাসান তুহিন (২২)।
গত ২৭ জানুয়ারি তালা উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও ইসলামকাঠি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজহারুল ইসলামকে (২৮) বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় নেয়ার পর গুলি করে হত্যা করে যৌথবাহিনী। এর আগে ২৬ জানুয়ারি রোববার গ্রেফতারের পর থানায় দুদিন আটক রেখে নির্যাতনের পর নারকেলি গ্রাম নামক স্থানে নিয়ে যৌথবাহিনী গুলি করে হত্যা করে দেবহাটা উপজেলার নতুন বাজারের কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও দেবহাটা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আবুল কালাম (১৭) ও একই গ্রামের জামায়াত কর্মী মারুফ হাসান ছোটনকে (২২)।
গত ১৮ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের পদ্মশখরা গ্রামের শহর আলীর ছেলে শিবির নেতা আবু হানিফ ছোটনকে (১৯) ক্রসফায়ারে হত্যা করে যৌথবাহিনী। একই মাসের ১৩ তারিখে দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের আবদুল হামিদ গাজীর ছেলে জামায়াত কর্মী আনারুল ইসলামকে (৩০) গুলি করে হত্যা করা হয়। গত জানুয়ারি মাসেই সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা গ্রামের মৃত আবদুল আজিজের ছেলে আবদুল হাকিম (৫০) ও সদর উপজেলার আগরগাড়ি ইউনিয়নের জামায়াত কর্মী কামালু্দ্দীনকে গুলিতে নিহত হয়। ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন আগরদাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপির জনপ্রিয় নেতা মো. আনোয়ারুল ইসলাম (৪৫)। ২৩ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ঝাইডাঙ্গা ইউনিয়নের দবিন্দকাটি গ্রামের লোকমান দফাদারের ছেলে জামায়াত কর্মী হাফিজুল ইসলামকে (২২) যৌথবাহিনী গুলি করে হত্যা করে।
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সদর উপজেলার কুশখালী ্ইউনিয়নের সাতানী গ্রামের আবদুল ওয়াহেদের ছেলে জামায়াত কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে যৌথবাহিনী। ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর দেবহাটা ইউনিয়নের গরানবাড়ী গ্রামের সাবেদ আলীর ছেলে শিবিরকর্মী আরিজুল ইসলামকে (১৬) বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিন দেবহাটা উপজেলার সখীপুর গ্রামের ফজর আলীর ছেলে শিবিরকর্মী আবুল হোসেনকে (১৫), ২৭ নভেম্বর সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের আবদুল মাজেদের ছেলে জামায়াত কর্মী শামসুর রহমানকে (৩৫) যৌথবাহিনী গুলি করে হত্যা করে।
১৬ জুলাই ২০১৩ তারিখে কালীগঞ্জ উপজেলার কুশলিয়া ইউনিয়নের বাজারগ্রামের আফতার উদ্দিনের ছেলে শিবিরকর্মী মোস্তফা আরিফুজ্জামানকে (১৭) গুলি করে হত্যা করে যৌথবাহিনী। একই দিন কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামের নুর ইসলাম গাজীর ছেলে জামায়াত কর্মী রুহুল আমিন (৩৭) যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
২০১৩ সালের ৫ মার্চ কলারোয়া উপজেলার যুগিখালী ইউনিয়নের ওফাপুর গ্রামের আবদুল মুজিদের ছেলে জামায়াত কর্মী শামসুর রহমানকে (৪৫) গুলি করে হত্যা করা হয়। ৪ মার্চ কলারোয়া উপজেলার যুগিখালী ইউনিয়নের কামারালী গ্রামের মৃত রহিম মোড়লের দুই ছেলে জামায়াত কর্মী আরিফ বিল্লাহ (৩৫) ও রুহুল আমিনকে (৩২) গুলি করে হত্যা করে যৌথবাহিনী।
এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলায় ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের ইলিয়াস হোসেনের ছেলে জামায়াত কর্মী সাইদুল ইসলাম (৩৩), একই বছরের ৫ নভেম্বর তালা উপজেলার সুরুলিয়া ইউনিয়নের সুরুলিয়া গ্রামে জাকের সরদারের ছেলে জামায়াত কর্মী আবদুস সবুর (৩৫) নিহত হন। ১৫ অক্টোবর শ্যামনগর উপজেলার কাশিমারী ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আফতাব উদ্দীনের ছেলে জামায়াত কর্মী শফিকুল ইসলাম (৪৪) ও আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের জামালনগর গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে আতিয়ার রহমান নিহত হন। এসব সংঘর্ষে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম উদ্দিন, ১৩ ডিসেম্বর কলারোয়া গোপীনাথপুর গ্রামের আজিজুর রহমান আজু, একই উপজেলার খড্ডবাটরার জজমিয়া, ৮ ডিসেম্বর জেলা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের এজাহার আলী মোড়ল (৪৫), ৫ ডিসেম্বর সদর উপজেলার কুচপুকুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, ৪ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলার ভাড়া শিমলা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন খোকন, ৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা-ভোমরা সড়কের মাহমুদপুর এলাকায় গিয়াসউদ্দিন সরদার, ২১ নবেম্বর দেবহাটা উপজেলা পারুলিয়া বাজারে আবু রায়হান, ২৬ নভেম্বর কলারোয়া উপজেলার মীর্জাপুরে মাহমুদুর রহমান বাবু, ২৬ আগস্ট সদর উপজেলার শিবপুরে রবিউল ইসলাম, ১৩ আগস্ট দুপুরে গড়ানবাড়িয়া এলাকায় আলমগীর হোসেন, ১৫ জুলাই দেবহাটার সখীপুর ইউনিয়নে আবদুল আজিজ নিহত হয়।
বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাবলী
২৮ বছর বয়সী আজহারুল ইসলামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাঠি ইউনিয়নের ঘোনা গ্রামে। বাড়িতে স্ত্রী চম্পা পারভীন (২৫), কন্যা দিশা (৩) ও বৃদ্ধ মা আরিফা বেগম (৫০), বড় বোন বিউটি (৩২) রয়েছেন। বাবা সিরাজউদ্দিন সরদার ২০০৫ সালে মারা যাওয়ার পর সরকারি কলেজে এইচএসসি পাশের পর অভাব-অনটনের সংসারের হাল ধরেন সে। আজহারুল তালা উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও ইসলামকাঠি ইউনিয়নের সভাপতি। গত ২৬ জানুয়ারি রোববার ভোর ৫টার দিকে তালা থানা পুলিশ এলাকার চাঁদপুর চিংড়ি ঘের থেকে আজহারুলসহ ছাত্রদল কর্মী তৌহিদ, রিপন ও আবদুল হাকিমকে গ্রেফতার করে। পরে তৌহিদ, রিপন ও হাকিমকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে চালান দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে আজহারুলকে থানায় রাখা হয়।
পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী জানায়, ২৬ জানুয়ারি রাত তিনটার দিকে হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় আজহারুলকে নিয়ে তালা থানার ওসি মতিয়ার রহমান, এসআই সাখাওয়াত ও এসআই শিমুলসহ যৌথবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র উদ্ধারে বের হয়। থানা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মাগুরা-চাঁদপুর সীমান্তবর্তী খেয়াঘাটে নিয়ে বুকে গুলি করে হত্যা করা হয় ছাত্রদলের এই নেতাকে। এ সময় গুলির শব্দ পেয়ে কেউ বাড়ি থেকে যেন বের হতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি বাড়ির সামনে দু-তিনজন করে পুলিশ পাহারা বসানো হয়।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আজহারুলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাতে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে তার বাহিনীর সদস্যরা যৌথবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণ করে। এ সময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা পাল্টা গুলি ছোড়ে। পালিয়ে যাওয়ার সময় আজহারুল গুলিবিদ্ধ হয়। তত্ক্ষণাত্ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজহারুলের স্ত্রী চম্পা পারভিন বলেন, ‘আমার স্বামী সক্রিয় রাজনীতি করতো বলেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশে তাকে গ্রেফতারের পর অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমার স্বামী নিরপরাধ। তার নামে কোনো মামলা নেই। নিহত আজহারুলের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী কোনো অপরাধ করলে দেশে আদালত আছে, বিচার ও সাজা হতো। কিন্তু কেন তারা আমার স্বামীকে এভাবে বিনা বিচারে হত্যা করলো? তাহলে আদালত কিসের জন্য? এই পুলিশ বাহিনী কি নিরীহ মানুষ হত্যার জন্য?
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মো. আনোয়ারুল ইসলামের (৪৫) দোতলা বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসে আনোয়ারুলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক হিসেবে পরিচিত জনগণের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের বরখাস্ত করে সরকার। পরিবারের অভিযোগ, যৌথবাহিনীর লোকজন গভীর রাতে বুলডোজার দিয়ে তার বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনার ১৫ দিন পর গত ৩০ ডিসেম্ব্বর সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যৌথবাহিনীর ৭-৮ জন সদস্য একটি মাইক্রোবাসে করে সাংবাদিক পরিচয়ে আনোয়ারুলের বাড়িতে গিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া বাড়ি-ঘরের ছবি তুলতে থাকে। সাংবাদিক আসার খবর শুনে আনোয়ারুল ও তার ভাইসহ বেশ কয়েকজন বাইরে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে এক পর্যায়ে তারা আনোয়ারুলকে জোর করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিয়ে যায়। এরপর ওইদিন দুপুরের দিকে আনোয়ারুলের গুলিবিদ্ধ লাশ শিকড়ির একটি কলাবাগানের মাঠে পড়ে থাকতে দেখে পরিবারকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয়রা জানায়, যৌথবাহিনীর লোকজন ওইদিন থানায় নেয়ার পর আনোয়ারুলকে বেধড়ক মারপিট ও দুই হাত-পা ভেঙে দেয়। দুপুর একটার দিকে সদর উপজেলার শিকড়ি এলাকার একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে তার বুকে, পেটে ও পায়ে পরপর কয়েকটি গুলি করে। এতে আনোয়ারুল ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
ঘটনার পর সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বেলা পৌনে ১টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিকড়ি এলাকায় অভিযানে বের হন। সেখানে পৌঁছলে পাশের কলাবাগান থেকে যৌথবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা পাল্টা গুলিবর্ষণ করলে আনোয়ারুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
নিহত আনোয়ারুল সদর উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে। তার বড় ভাই আবদুল গফ্ফার জানান, ওইদিন সকাল ৯টার দিকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে কয়েকজন লোক তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে আমরা জানতে পারি আনোয়ারুলের গুলিবিদ্ধ লাশ শিকড়ির একটি কলাবাগানের মাঠে পড়ে আছে। তার দেহ, মাথা, বুকের বাম পাশে ৫টি, পেটে ও পায়ে মোট ৯টি গুলির চিহ্ন ছিল। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের বক্তব্য সাজানো নাটক ছাড়া কিছু নয়।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম জানান, আনোয়ারুল একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছিলেন। বিএনপির নেতা হিসেবে তিনি আন্দোলন সংগ্রামে সামনের সারিতে থাকতেন। আর এজন্যই সরকার তাকে টার্গেট করে হত্যা করেছে।
গত ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় যৌথবাহিনীর সদস্যরা দেবহাটা উপজেলার নতুন বাজারের কুলিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে উপজেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আবুল কালাম (১৭) গ্রেফতার করে। একইদিন দুপুরে কুলিয়া এলাকার জামায়াত নেতা কস্ফারী আশরাফুল ইসলামের ছেলে জামায়াত কর্মী মারুফ হাসান ছোটনকে (২২) তার শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর দুজনকে দেবহাটা থানায় নিয়ে যায়। এর দুদিন পর ওই দু’জনের গুলিবিদ্ধ লাশ হাসপাতাল থেকে পুলিশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
দেবহাটা থানা পুলিশের দাবি, কালাম ও মারুফকে সঙ্গে নিয়ে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী অন্য আসামি ধরতে গেলে শিবিরের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ বাধে। এতে তারা গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ২ পুলিশ কনস্টেবলসহ যৌথবাহিনীর তিন সদস্য আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ২টি পাইপগান, ৫ রাউন্ড কার্তুজ, ৫টি হাতবোমা ও ২টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, বাড়ি থেকে গ্রেফতারের পর দুদিন থানায় ব্যাপক নির্যাতনের পর ২৬ জানুয়ারি রোববার ভোর সোয়া ৫টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা কালাম ও মারুফকে সখীপুর ইউনিয়নের নারকেলি গ্রামে এনে বুকে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় ৮-১০ রাউড গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। পরে তাদের দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমে সখীপুর হাসপাতাল ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত কালাম সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ও বিবাহিত মারুফ ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে তাদের সংসার চালাতো। বাড়িতে তার স্ত্রী তাসলিমা এবং তামিমা নামে তার আট মাসের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
কালামের পিতা মো. আকবার আলী গাজী জানান, আমার আদরের সন্তানকে ধরে নেয়ার পর দুই রাত ও একদিন একনাগাড়ে তারা নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। তার সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। দুদিন পর রোববার ভোরে তার বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে। যখন লাশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করে তখন দেখি ওর বুকে, হাতে ও পায়ে গুলির চিহ্ন ছিল।
নিহত মারুফ হাসানের ভাই মাকফুর জানান, মারুফকে ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে দেবহাটা থানায় নিয়ে পুলিশ শারীরিক নির্যাতন চালায়। দুদিন থানায় আটক রেখে নির্যাতনের পর আদালতে হাজির না করে অস্ত্র উদ্ধারের সাজানো নাটক সাজিয়ে ২৬ জানুয়ারি রোববার ভোরে দেবহাটার নারকেলি এলাকায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে যৌথবাহিনী। তার বিরুদ্ধে কোনো নাশকতার অভিযোগ নেই, থানায় কোনো মামলাও নেই। শুধু জামায়াতের রাজনীতি করার কারণে তাকে হত্যা করা হলো।
একইভাবে যৌথবাহিনীর গুলিতে গত ২৭ নভেম্বর রাত সাড়ে চার টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিয়ালডাঙ্গার আবেদুরহাট গ্রামের চৌরাস্তা মোড়ে রাজমিস্ত্রী শামসুল হকের (৩৫) নিহত হন। দিনমজুর শামসুলের স্ত্রী তাহমিনা বেগম জানান, ওইদিন রাতে চৌরাস্তা মোড় থেকে শামসুরকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। সে কোনো মিছিল-মিটিংয়ে যেত না, তেমনি রাজনীতিও করতো না। তারপরেও কেন যে যৌথবাহিনীর লোকজন আমার নিরীহ স্বামীকে হত্যা করলো! এখন আমি আমার নাবালক তিন সন্তান নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকবো।
এভাবেই গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ২৭ জনসহ রাজনৈতিক সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪৩ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া ২৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে আরও কয়েক শতাধিক ব্যক্তি। গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে অনেক নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশেই যৌথবাহিনী এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল করিম আমার দেশ-কে জানান, গত ডিসেম্বরের মধ্যভাগ থেকে এর পরে কিছু বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন ব্যক্তি নিহত হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা ‘লিগ্যাল’ কারণেই হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এর বাইরে গত এক বছরে ৪৩ জন নিহতের খবর সম্পর্কে আমার জানা নেই। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাকে সাজানো নাটক বলে অভিযোগ করা হয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির জানান, নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কী অভিযোগ করা হলো কী না হলো, সে বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এটা তাদের বিষয়।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম আমার দেশ-কে জানান, জনপ্রতিনিধি শুধু নয়—কোনো সাধারণ মানুষও যৌথবাহিনীর কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হোক, এটা আমরাও সমর্থন করি না। তিনি বলেন, গত এক বছরে আওয়ামী লীগের ১৬ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। এগুলো বিএনপি-জামায়াতের লোকজনই করেছে। তবে বিএনপি ও জামায়াতের যারা মারা গেছে, এগুলো যৌথবাহিনীই করেছে। তিনি আরও জানান, কিছু জায়গায় দলের মধ্যে গ্রুপিং রয়েছে। এ গ্রুপিংয়ের সুযোগে হয়তোবা কোনো হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।