ব্রেকিং নিউজ
Home / বাংলাদেশ / ভাইরাল ডা. জাহাঙ্গীর কবির অপচিকিৎসা করছেন: এফডিএসআর

ভাইরাল ডা. জাহাঙ্গীর কবির অপচিকিৎসা করছেন: এফডিএসআর

 

কিটো ডায়েটের পরামর্শদাতা ভাইরাল ডা. হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর কবিরের কর্মকাণ্ডকে অবৈজ্ঞানিক, অসত্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে মনে করেছে চিকিৎসকদের একটি সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিজ (এফডিএসআর)।

সাত দিনের মধ্যে বিভ্রান্তিকর ও অবৈজ্ঞানিক এসব ভিডিও কনটেন্ট অনলাইন থেকে না সরালে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার (১ আগস্ট) ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের ঠিকানায় কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো এক চিঠিতে সংস্থাটির পক্ষে বলা হয়, ডা. জাহাঙ্গীর কবির কিটো ডায়েট নিয়ে ভুল এবং অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এই ডায়েটের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো লিখিত বা মৌখিক কাউন্সেলিং করেন না।

বরং ডায়াবেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন রোগীদের ব্যাপকভাবে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিয়ে ক্ষতি করছেন। তিনি বিভিন্ন চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশনকে হেয় করে মন্তব্য করেছেন।

করোনার টিকা নিয়ে ইম্যুনোলজিবিষয়ক ভুল বক্তব্য দিয়েছেন।

চিকিৎসকদের এই সংগঠন জাহাঙ্গীর কবিরের এসব কার্যক্রমকে ম্যালপ্র্যাকটিস বা অপচিকিৎসা বলে আখ্যা দিয়েছে তা চিকিৎসাবিজ্ঞানের নীতিবিরোধী ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
এফডিএসআরের মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন সোমবার বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের এসব বিভ্রান্তিকর লেখা, ভিডিও ইন্টারনেট থেকে অপসারণ করা না হলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। বিষয়টি এরই মধ্যে লিখিতভাবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) জানিয়েছি। আজ সরাসরিও জানাতে পারি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা আইনি নোটিসও পাঠাব।

পাঠকদের জন্য এফডিএসআরের চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘‘২ আগস্ট ২০২১
ডা. জাহাঙ্গীর কবীর
বাসা ৩৯/১ (সিরাজ কনভেনশন সেন্টার), ৭ম তলা, ব্লক সি, আফতাবনগর মেইন রোড, আফতাবনগর, ঢাকা- ১২১২

ডা. জাহাঙ্গীর কবির,

আপনার সাম্প্রতিক সময়ের কর্মকাণ্ড আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়াতে আপনাকে এই পত্র লিখতে হচ্ছে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, চিকিৎসক হিসেবে আমাদের যেমন নানা রকম বিশেষ অধিকার রয়েছে তেমনি দায়িত্বও রয়েছে। চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিজ (এফডিএসআর) মনে করে, কোনো চিকিৎসকেরও দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করার ও অসত্য বলার অধিকার নেই এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আপনি জীবনধারা পরিবর্তন ও এর মাধ্যমে নানা রকম ক্রনিক রোগের চিকিৎসা করছেন বলে দাবি করেন। এ জন্য অনলাইন ও অফলাইনে মানুষকে সুস্থ জীবন গড়ে তোলার জন্য লাইফস্টাইল বা জীবনধারা পরিবর্তনের পরামর্শ দিচ্ছেন। এসবই আপাতদৃষ্টিতে চমৎকার কাজ। কিন্তু আপনার মনে রাখতে হবে, আপনার পরামর্শ হতে হবে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সমর্থিত ও বিজ্ঞানভিত্তিক। শুধু তা-ই নয়, এই সব পরামর্শ যাতে কারো ক্ষতির কারণ না হয়, সেদিকেও আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

আপনি কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিচ্ছেন। বিভিন্ন চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশনকে হেয় করে মন্তব্য করছেন। টিকা নিয়ে ইম্যুনোলজিবিষয়ক ভুল বক্তব্য দিয়েছেন। আপনি আপনার কোনো লেখায় বা বক্তব্যে আপনার সেবাগ্রহীতাদের কিটো ডায়েটের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো লিখিত বা মৌখিক কাউন্সেলিং করেন না। ইনফর্মড কনসেন্ট নেন না। আপনি ডায়াবেটিকস ও কিডনি রোগীকেও কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিয়েছেন বলে আমরা জানি। এই ডায়েটের ফলে দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি যেসব স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে, সেটা নিয়ে আপনি কখনো রোগীদের অবগত করেন না। এটা ম্যালপ্র্যাকটিস।

অথচ কিটো ডায়েটের জন্য রোগীর ইনফর্মড কনসেন্ট নেওয়া বাধ্যতামূলক। এই ডায়েটের ফলে হৃদরোগ বৃদ্ধি ও কিডনির ক্ষতি, মাংসপেশির ক্ষতি, হাড়ের ক্ষতিসহ নানা রকম প্রতিক্রিয়ার বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। আপনি সম্প্রতি বলেছেন, কভিড ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শরীরে অ্যান্টিবডি প্রবেশ করানো হয়। আরো বলেছেন, ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাকসিন দরকার। এ রকম ভুল ও অসত্য তথ্য দিয়ে আপনি আপনার অজ্ঞতাপ্রসূত পোস্ট মারফত কোটি কোটি মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন, যা জনবিরোধী কাজ। আপনার টিকা নিয়ে অজ্ঞতা দেশের চিকিৎসকদের মর্মাহত ও লজ্জিত করেছে। আপনার কোনো অধিকার নাই মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে ক্ষতি করার।

আপনি বিভিন্ন চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র পোস্ট করে তাতে ওষুধের সংখ্যা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। যে রোগীর হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনির অসুখ আছে তার জন্য অনেকগুলো ওষুধ প্রয়োজন হতেই পারে। আপনি এটি নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যঙ্গ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, আপনি বলেছেন, জীবনধারা বদলালে ওষুধ লাগে না। আর জীবনধারা ভালো না হলে ওষুধ কাজ করে না। এভাবে আপনি ওষুধের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার চেষ্টা করেছেন, যা অসাধু কাজ ছাড়া কিছু না।

আপনার কথা অনুযায়ী তাহলে লাইফস্টাইল না বদলালে কোলেস্টেরল লোয়ারিং এজেন্ট কাজ করার কথা না। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কাজ করার কথা না। সব ধরনের অ্যাকিউট অ্যাটাকে কোনো ওষুধ কাজে লাগার কথা না। এমনকি ভিটামিনও কাজ করার কথা না। বহু রোগী আছেন হাঁপানির, যাদের জীবনধারার সঙ্গে তাদের শ্বাসকষ্টের সম্পর্ক নেই। আপনার কথা অনুযায়ী, ইনহেলার ও অ্যালার্জির ওষুধও কাজ করার কথা না। তার মানে আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।

রক্তকে এসিডিটিক করার বিষয়ে আপনার বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই। আপনি লিখেছেন, ডায়াবেটিসের ওষুধ কিডনি নষ্ট করে। আপনি একাধিকবার বলেছেন, লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করলে ওষুধ লাগবে না। যে রোগের কারণের মধ্যে লাইফস্টাইল আছে, সেখানে ওষুধের দরকার নাই। এ রকম ভুল কথা বলা অন্যায়। কারণ আপনি জানেন যে রোগের কারণ বা রোগের প্রভাবক দূর করলেই রোগ সেরে যায় না। শরীরের বহু টিস্যু; আছে যা একবার নষ্ট হলে তা রিভার্স করা যায় না।
আপনি নিজে কিটো ডায়েটের ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া নিয়ে মানুষকে অবগত করেন না। কিন্তু চিকিৎসকরা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে রোগীদের বলে না, বিনা কারণে ইনসুলিন দেয় এসব কথা বলে বিষোদগার করেন।

আপনাকে এই পত্র প্রদানের মাধ্যমে মূলত আমরা অবগত করতে চাই যে আপনি যে ধরনের কর্মকাণ্ড করছেন তা চিকিৎসাবিজ্ঞানের নীতিবিরোধী ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আপনি নিয়মিত বিভিন্ন চিকিৎসা ও পরামর্শ দিচ্ছেন যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে বর্ণিত রোগনিরাময়ের পদ্ধতির সাথে সাংঘর্ষিক। সামাজিক মাধ্যমে নানারকম ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। চিকিৎসকদের চিকিৎসা নিয়ে যুক্তিবিবর্জিত বিষোদগার করছেন যা সাধারণ মানুষের মধ্যে অহেতুক চিকিৎসকদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ বৃদ্ধি করছে। আপনার এই কর্মকাণ্ড ম্যালপ্র্যাকটিস বা অপচিকিৎসা ছাড়া আর কিছু নয়।

অতএব, এই পত্রপ্রাপ্তির এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি সকল মাধ্যম থেকে আপনার ভুল ও বিকৃত তথ্যাদি অপসারণ করবেন। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিষোদগারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে দেশের আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। ‘