টানা আট দিন ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এখনো সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন ঢাকা বিভাগে। আগের তুলনায় খুলনায় মৃত্যু কমে এলেও এখন চট্টগ্রাম ও সিলেটে মৃত্যু দ্রুত বাড়ছে।
সোয়া এক বছরের মধ্যে দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন সবচেয়ে খারাপ। এক মাস ধরে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের মতো। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন রোগীও বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। গত এক সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ দিনই প্রায় ১৫ হাজার করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। নতুন রোগী বাড়লে আনুপাতিক হারে মৃত্যুও বাড়ে। সে হিসাবে সামনের দিনে দৈনিক মৃত্যু আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছিল সরকার। এর প্রভাবে এপ্রিলের মাঝামাঝি বিধিনিষেধ ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছিল। এ কারণে ঈদের পর থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। জুলাই মাসে এসে পরিস্থিতি ভয়ংকর আকার ধারণ করে।
শুরু থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি ছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে। গত জুন থেকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে থাকে। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলে সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয়। একপর্যায়ে দৈনিক মৃত্যুতে ঢাকাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল খুলনা বিভাগ। তবে গত এক সপ্তাহে খুলনায় মৃত্যু কমে এসেছে। বিপরীতে সিলেট ও চট্টগ্রামে আবার মৃত্যু বাড়ছে।
গত এক সপ্তাহে (২৬ জুলাই থেকে ১ আগস্ট) সবচেয়ে বেশি ৪৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপর সবচেয়ে বেশি ৩৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। খুলনায় মারা গেছেন ২৩৬ জন। তার আগের সপ্তাহে (১৯-২৫ জুলাই) মৃত্যুর দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে ছিল খুলনা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুলনায় মৃত্যু কমেছে ৬ শতাংশ।
শতকরা হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বেড়েছে সিলেটে, ৬৮ শতাংশ। তবে সংখ্যার দিক থেকে সিলেটে এক সপ্তাহে মোট মৃত্যু এখনো ১০০-এর নিচে। গত সপ্তাহে সিলেট বিভাগে করোনার সংক্রমণে মোট ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে সিলেটের পর মৃত্যু বেড়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, প্রায় ৫২ শতাংশ। আর ঢাকায় বেড়েছে ৯ শতাংশ।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৭ জন মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৯ হাজার ৫২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৮৪৪ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ৯১৬ জনের।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পবিত্র ঈদুল আজহার আগে দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও তার ইতিবাচক প্রভাব সংক্রমণচিত্রে দেখা যায়নি। ঈদের কারণে মাঝখানে আট দিন বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছিল। ঈদের পর থেকে নতুন রোগী আরও বাড়ছে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা চালুর ঘোষণায় দুই দিন ধরে হাজার হাজার কর্মী ঢাকায় আসছেন স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে। এতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য বুলেটিনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হলে তা সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যেভাবে বিভিন্ন কারখানার কর্মীরা ঢাকায় ফিরছেন, তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। যাঁরা সংক্রমিত নন, তাঁরাও এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমিত হতে পারেন।