ব্রেকিং নিউজ
Home / অপরাধ জগৎ / চিকিৎসক তিনি ঠিকই, তবে বাকি ডিগ্রি-পদবি সবই ‍‘ভুয়া’। গ্রেফতারকালে বাসায় পাওয়া গেছে মদ ও ইয়াবা

চিকিৎসক তিনি ঠিকই, তবে বাকি ডিগ্রি-পদবি সবই ‍‘ভুয়া’। গ্রেফতারকালে বাসায় পাওয়া গেছে মদ ও ইয়াবা

 

ভুয়া অনেকে চিকিৎসক ধরা পড়ার খবর এলেও এবার একজন আসল চিকিৎসককেই ধরেছে র‌্যাব; তবে ইনিও নামের পাশে অনেক ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে আসছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইশরাত রফিক ঈশিতা (৩৫) নামে এই চিকিৎসক নিজের পরিচয় দিতেন ‘বিজ্ঞানী’ বলে। তার কথিত ‘আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ পাওয়ার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসেছে, যদিও সেটাও ভুয়া বলে র‌্যাব জানায়।

তিনি নামের আগে লিখতেন ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’, ইন্টারপোলের সঙ্গেও নিজের সংশ্লিষ্টতার রয়েছে দাবি করে তা ফলাও করে লিখতেন কার্ডে। কিন্তু এর একটিও ঠিক নয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব শনিবার রাতে ঈশিতাকে গ্রেপ্তার করার পর এই ধরনের নানা ‘চমকপ্রদ’ প্রতারণার তথ্য পায় বলে বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন রোববার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।

ইশিতা এমবিবিএস পাস করেছিলেন, এটুকু ঠিকই আছে। ময়মনসিংহের বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেন তিনি।

২০১৩ সালে এমবিবিএস পাস করার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। তবে চার মাস পর শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সেই চাকরি হারানোর পর তিনি প্রতারণার জাল ছড়িয়ে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন বলে র‌্যাব জানায়।

আল মঈন বলেন, “ঈশিতা এমবিবিএস পদবির বাইরে এমপিএইচ, এমডি ডিও নামের পদবিগুলো ব্যবহার করতেন, যা তিনি কখনই গ্রহণ করেননি। তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বলেও পরিচয় দিতেন। প্রতারণার কৌশল হিসাবে ঈশিতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদও ব্যবহার করতেন।

“তাকে আমরা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, দেশের বাইরে একটি সংগঠন থেকে ৪০০ ডলার দিয়ে এই পদবি কিনেছেন। এর ন্যূনতম সত্যতা আমরা পাইনি।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, সম্প্রতি অনিবন্ধিত ‘ইয়ং ওয়ার্ল্ড লিডারস ফর হিউমেনিটি’ নাম দিয়ে এক সেমিনার আয়োজন করেন ঈশিতা। সেখানে ৬০ জন চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেন এবং নিবন্ধন ফি হিসাবে ৩ হাজার টাকা করে নেন, যা অবৈধ।

“এই সংগঠনের নাম দিয়ে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে অর্থের বিনিময়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন ঈশিতা।”

করোনাভাইরাস পরীক্ষার সনদ দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৩/৪ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগও র‌্যাবের কাছে এসেছে।

ইশিতাকে ভারতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে, থাইল্যান্ডে বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলে যে খবর তিনি গণমাধ্যমে দিয়েছেন, তাও ভুয়া বলে র‌্যাব জানায়।

কমান্ডার আল মঈন বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তিনি তার বাবার সাথে জার্মানিতে বেড়াতে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশে কখনই যাননি। এমনকি ভারতেও যাননি। অথচ বলে বেড়ান তিনি অর্ধশতাধিক দেশ ঘুরেছেন।”

২০১৮ সালে জার্মানিতে এক পুরস্কার পাওয়ার যে দাবি তিনি করেছেন, সে বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “ওই সময় তার বাবার সাথে জার্মানিতে বেড়াতে গিয়েছিল ঈশিতা। ওই সম্মেলন যোগ না দিলেও তার আশেপাশে গিয়েছিল। এরপরেই দেশে এসে প্রচার চালায় এ ধরনের সম্মেলনে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে তিনি যোগ দেন।”

ঈশিতাকে মিরপুরে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তারের সময় ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৩০০ ইয়াবা ট্যাবলেট, বিভিন্ন ধরনের সনদ-প্রত্যায়নপত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শহিদুল ইসলাম দিদার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাব বলছে, বিভিন্ন সংস্থার সনদ ডাউনলোড করে সেখানে ঈশিতার নাম বসানোর কাজটি করতেন দিদার।