জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িত নেপথ্য মদতদাতাদের খুঁজে বের করতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘তদন্ত কমিশন’ গঠনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এই কমিশনে কাদের রাখা হবে সেই চিন্তাভাবনা চলছে।
রবিবার (১ আগস্ট) দুপুরে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমন তথ্য জানান।
কমিশন গঠনের সর্বশেষ অগ্রগতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘আপনারা দেখছেন, কোভিড-১৯-এর কারণে আমাদের সব কাজ প্রায় স্থবিরের মতো। তবু আমরা যে চিন্তাভাবনা ও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছি, সেটার দিকে এগুচ্ছি। আমরা চিন্তাভাবনা করছি কাকে কাকে এই কমিশনে রাখা হবে।’
এর আগে রবিবার সকালে সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার নেপথ্যকারীদের প্রসঙ্গে কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী মাসের শুরুতে কৃষক লীগ আয়োজিত ‘রক্ত ও প্লাজমা’দান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার হত্যার বিচার করেছি। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা সেটা এখনও আবিষ্কার হয়নি। তবে এটা ঠিক তা একদিন না একদিন আবিষ্কার হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটা কাজ ছিল, যারা প্রত্যক্ষভাবে হত্যার সঙ্গে ছিল তাদের বিচার করা। আর সবচেয়ে বড় কাজ হলো—এ দেশটাকে নিয়ে দেশের মানুষকে নিয়ে জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, দেশের মানুষের উন্নয়ন করা, সেই উন্নয়ন করাটাকে আমি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তাই পেছনে (বঙ্গবন্ধু হত্যার) কে ষড়যন্ত্র করেছে, কী করেছে না করেছে, সেদিকে না গিয়ে আমার প্রথম কাজ হচ্ছে ক্ষুধার্ত ও দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে তাদের জীবনমান উন্নত করা।’ তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা বলেছিলাম, ২০২১ সালে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা করবো। আজ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’
প্রসঙ্গত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত বছর আগস্ট মাসে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত সাবেক সেনা সদস্যদের বিচার হলেও এর পেছনের রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে তদন্ত হয়নি। সেজন্য তারা কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কমিশন গঠনের ব্যাপারে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন উল্লেখ করে তিনি মুজিবর্ষেই একটা কিছু দেখতে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছিলেন।
গত বছর শোক দিবসে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল শোকসভায় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে উদ্দেশ করে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, এই কমিশনের কর্মপরিধি কী হবে, কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে আমাদের এখন থেকেই চিন্তাভাবনা করা উচিত। কারণ, এ দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয় ও আইন কমিশনের ওপরই পড়বে।
পরে গত বছর ১৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরেও কমিশন গঠনের কথা পুনরুল্লেখ করেছিলেন তিনি। ওইদিন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে—কমিশন কাদের নিয়ে কীভাবে গঠিত হবে, কমিশনের কাজের পরিধি কী হবে ইত্যাদি নির্ধারণে সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছেন।