আদনান রহমান ও জসীম উদ্দিন
ইউরোপে মানবপাচারের নতুন রুট ‘ভারত হয়ে উজবেকিস্তান’
ভারত থেকে উজবেকিস্তান, উজবেকিস্তান থেকে স্বপ্নের পোল্যান্ড— এমন লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা
ঢাকা থেকে প্রথমে ভারতের কলকাতায়। সেখান থেকে দিল্লি। দিল্লিতে ছয় মাস থেকে উজবেকিস্তানের বিজনেস ভিসার আবেদন। ভিসা পেলে উজবেকিস্তানের উদ্দেশে উড়াল। একবার দেশটিতে পৌঁছাতে পারলে সেখান থেকে সরাসরি স্বপ্নের দেশ ইউরোপের পোল্যান্ড! পোল্যান্ডে থাকা-খাওয়ার চিন্তা নেই, সব রেডি (প্রস্তুত)। সেখানে পৌঁছালে স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ নেবে। মাসে দুই-আড়াই লাখ টাকার চাকরি। খেয়ে-পরে দেশে পাঠানো যাবে লাখ খানেক টাকা!
এমন গল্প শুনতে ভালোই লাগে। তবে প্রবাস জীবনে এমন সুখের কথা কেবল গল্পেই শোভা পায়। এই সুখের সন্ধানে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরেছেন কমপক্ষে ১২ যুবক। স্বপ্নের পোল্যান্ড যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ১৪ মাসের মাথায় তারা জানতে পারেন, পাচারের শিকার হয়েছেন। এরপর পালিয়ে উজবেকিস্তান থেকে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। তাদের খুঁজে বের করে জানা গেল পাচারের নতুন এই রুটের কথা।
ফিরে আসা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট জানতে পারে, পাচারকারীরা পোল্যান্ডে চাকরি দেওয়ার নামে বাংলাদেশ থেকে দেশটির ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যান। ঢাকা থেকে প্রথমে তাদের নেওয়া হয় কলকাতায়, সেখান থেকে দিল্লি। দিল্লি থেকে তাদের উজবেকিস্তানের বিজনেস ভিসার জন্য আবেদন করা হয়। সেখানে লেগে যায় প্রায় ছয় মাস। অবশেষে ভিসা পেলে উড়াল দেন উজবেকিস্তানে। এরপর সেখানে মাসের পর মাস আটকে রেখে আদায় করা হয় টাকা।
ঢাকায় ফেরা যুবকরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এপ্রিল মাসে পালিয়ে বাংলাদেশে ফিরেছি। সেখানে একটি ফ্ল্যাটে এখনও সাত-আটজন পোল্যান্ড যাওয়ার উদ্দেশে আটক আছেন।
পাচারকারীরা পোল্যান্ডে চাকরি দেওয়ার নামে বাংলাদেশ থেকে দেশটির ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যান। ঢাকা থেকে প্রথমে তাদের নেওয়া হয় কলকাতায়, সেখান থেকে দিল্লি। দিল্লি থেকে তাদের উজবেকিস্তানের বিজনেস ভিসার আবেদন করা হয়। ভিসা পেলে উড়াল দেন উজবেকিস্তানে। এরপর সেখানে মাসের পর মাস আটকে রেখে টাকা আদায় করা হয়
পোল্যান্ডের কথা বলে আটকে রাখা হয় উজবেকিস্তানে
উজবেকিস্তান থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ফিরে আসেন মো. ফারুক হোসেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমার এক বন্ধু রবি কোম্পানির বিভিন্ন টাওয়ারে সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করতেন। বন্ধুর একজন সহকর্মী ছিল, নাম ইসমাঈল। ইসমাঈল সেখান থেকে দুই বছরের চাকরি নিয়ে পোল্যান্ডে চলে যান। আমার বন্ধু ও আমি ইসমাঈলের কাছে পোল্যান্ড যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে বললে ইসমাঈল জানায়, আহসানুল বারী নামের একজন তাকে পোল্যান্ড পাঠান। ২০১৯ সালে আমরা ইসমাঈলের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘ওআরবি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ নামের একটি এজেন্সির অফিসে যাই। সেই অফিসের মালিক আহসানুল বারী।
অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা
বারী আমাদের জানান, তিনি বৈধ ভিসায় পোল্যান্ডে লোক পাঠান। ১২ লাখ টাকা লাগে। প্রথমে এক লাখ টাকা দিতে হবে। বাকি টাকা ভিসা হওয়ার পর। ভিসা লাগানো হবে ভারত থেকে। আমরা তার কথায় রাজি হয়ে ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ১০ তারিখে পাসপোর্ট ও দুই লাখ টাকা জমা দিই।
২০২০ সালের মে মাসে তারা আমাদের পোল্যান্ডের একটা ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট দেখায় এবং তিন লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিলে তারা ২০২০ সালের নভেম্বরে বিমানযোগে আমাদের ভারতের কলকাতায় নিয়ে যায়। কলকাতা থেকে নেওয়া হয় দিল্লি। দিল্লিতে ১০ দিন থাকার পর আমাদের তোলা হয় উজবেকিস্তানের দূতাবাসে। আমাদের বিজনেস ভিসা হয়। ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ উজবেকিস্তানে পৌঁছাই। সেখানে যাওয়ার পর আমাদের একটি বাসায় আটকে রাখা হয়। পোল্যান্ডের ভিসা করা হবে বলে দুজনের কাছ থেকে মোট ১৮ লাখ টাকা নেওয়া হয়
ভুক্তভোগী মো. ফারুক হোসেন
টাকা পেয়ে বারী জানান, তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আমাদের ওয়ার্ক পারমিট চলে আসবে। ওয়ার্ক পারমিট আসলে ভারতে গিয়ে ভিসা করাতে হবে। ২০২০ সালের মে মাসে তারা আমাদের পোল্যান্ডের একটা ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট দেখায় এবং তিন লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিলে তারা ২০২০ সালের নভেম্বরে বিমানযোগে আমাদের ভারতের কলকাতায় নিয়ে যায়। কলকাতা থেকে নেওয়া হয় দিল্লি। দিল্লিতে ১০ দিন থাকার পর আমাদের তোলা হয় উজবেকিস্তানের দূতাবাসে। আমাদের বিজনেস ভিসা হয়। ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ উজবেকিস্তান পৌঁছাই। উজবেকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের একটি বাসায় আটকে রাখা হয়। সেখান থেকে পোল্যান্ডের ভিসা করা হবে বলে দুজনের কাছ থেকে মোট ১৮ লাখ টাকা নেওয়া হয়। ওই বাসায় গিয়ে আমরা দেখতে পারি আরও সাত-আটজন আমাদের মতো পাচারের শিকার হয়ে সেখানে আটক আছেন।
এরপর প্রায় চার মাস আমরা ওই বাসায় আটক ছিলাম। আহসানুল বারী আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। দীর্ঘদিন ওই বাসায় আটক থাকার পর আমরা দুই বন্ধু পালানোর সিদ্ধান্ত নিই। এক দিন কৌশলে বিমানের টিকিট কেটে বাংলাদেশে এসে পড়ি।
মাসুম সরদার নামের আরেক ভুক্তভোগী একই উপায়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে উজবেকিস্তান থেকে দেশে ফিরে আসেন। তার মোট ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় পাচারকারী চক্রটি। তিনি বলেন, গত ৮ জানুয়ারি দিল্লি থেকে উজবেকিস্তান যাই। সেখানে আমাদের একটি বাসায় আটকে রেখে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমি সেখানে ছয় মাস থেকে জুন মাসের ৩ তারিখে একজনের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসি।
দিল্লি থেকে উজবেকিস্তান নিয়ে একটি বাসায় আটকে রেখে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় টাকা
উজবেকিস্তানে যেভাবে দিন কাটত তাদের
শাহবুদ্দিন মিয়া নামের আরেক ভুক্তভোগী চার মাস সেখানে (উজবেকিস্তান) থেকে দেশে ফেরেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দের একটি বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখা হয়। সেখানে আমাদের সঙ্গে ছিলেন আহসানুল বারীর এক আত্মীয়। তিনি সার্বক্ষণিক পাহারা দিতেন। আমরা এক ফ্ল্যাটে সাতজন ছিলাম। ফ্ল্যাট থেকে বের হতে দিত না। কোনো কথা বলতে দিত না, যাচ্ছেতাই ব্যবহার করত। শুধুমাত্র টাকার প্রয়োজন হলে তারা আমাদের কাছে আসত। আমরা বাংলাদেশে ফোন করে টাকার কথা বলতাম। তারা আমাদের পাসপোর্ট আটকে রেখেছিল। এক ঘরেই একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে চার মাস কেটেছে আমাদের।
আমাদের উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দের একটি বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখা হয়। সেখানে আমাদের সঙ্গে ছিলেন আহসানুল বারীর এক আত্মীয়। তিনি সার্বক্ষণিক পাহারা দিতেন। আমরা এক ফ্ল্যাটে সাতজন ছিলাম। ফ্ল্যাট থেকে বের হতে দিত না। কোনো কথা বলতে দিত না, যাচ্ছেতাই ব্যবহার করত। তারা আমাদের পাসপোর্ট আটকে রেখেছিল। এক ঘরেই একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে চার মাস কেটেছে আমাদের
ভুক্তভোগী শাহবুদ্দিন মিয়া
উজবেকিস্তান রুটের ‘আবিষ্কারক’ যারা
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে চক্রটির পাঁচ-ছয়জনের সন্ধান পেয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলেন ওআরবি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মের মালিক আলমগীর অপূর্ব। তার ফার্মটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটের পাশে জগন্নাথপুরে অবস্থিত। মূলত তিনি পাচারের এই রুট আবিষ্কার করেন।
চক্রের অন্যতম সদস্য আহসানুল বারী। বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের ভিসা, ভিসা আবেদনের যোগ্যতা, ব্যাংকে টাকা দেখানোর পরিমাণ, ভিসা আদায়ের কৌশল নিয়ে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। নিজস্ব এজেন্টদের দিয়ে পাচারের জন্য কর্মী সংগ্রহ করতেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, আহসানুল বারী ঢাকায় ওআরবি’র অফিস স্টাফ ছিলেন। এর আগে দীর্ঘদিন তিনি তুরস্কে ছিলেন। সেখানে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন। অভিবাসীদের সহযোগিতা করার মাধ্যমে তার বিভিন্ন দেশের ভিসা, টিকিটপ্রাপ্তি ও যাতায়াতের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। ইংরেজি, তুর্কিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় কথা বলতে পারেন তিনি।
বিভিন্ন সময় সিআইডির হাতে আটক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা
চক্রের অপর সদস্য ইয়াসির বারী আল আহাদ (হৃদয়)। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার বাড়ি, গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। আহাদ নিজেকে কাস্টমের সিনিয়র কমিশনার হিসেবে দাবি করেন। এছাড়া তার বাবা আব্দুল বারীকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি মূলত নিজ এলাকার পরিচিতজনদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের পোল্যান্ডে গিয়ে ভালো জীবনযাপনের পরামর্শ দিতেন। সবার কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে এক লাখ টাকা ও পাসপোর্ট সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল তার। এছাড়া তার সহযোগী হিসেবে কর্মী সংগ্রহ করতেন দালাল আনিছ।
এই রুটে যারা যেতেন তাদের অধিকাংশের বয়স ৩০ থেকে ৩৬ বছরের ঊর্ধ্বে। তাদের সবাই একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছেন, অসংখ্যবার সরকারি চাকরির আবেদন করেছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাননি। ফলে হতাশ হয়ে এদিকে-ওদিকে ঘোরাঘুরি করতেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে গিয়ে বিদেশে কাজ ও চাকরির জন্য ধরনা দিতেন। মূলত তাদের টার্গেট করতেন লিডা ও ইয়াসির বারী
চক্রের অপর সদস্য ইয়াসিরের স্ত্রী হাবিবা খাতুন (লিডা)। লিডা নিজেকে বনানীর ‘এশিয়ান ট্রাভেল গুরু’ নামের একটি এজেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলে দাবি করতেন। মূলত তিনি ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ একজন স্টাফ। প্রতিষ্ঠানটি বিদেশগামীদের বিমানের টিকিট, ভিসা ও ট্যুর প্যাকেজ তৈরি করে দিত। লিডা ট্রাভেল এজেন্সিতে আসা গ্রাহকদের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা রেখে তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করতেন। তাদের বিদেশে পাঠানোর অফার দিতেন। এই চক্রের সদস্য হিসেবে তিনি টাকা সংগ্রহও করতেন। ঢাকা পোস্টের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী তার ব্র্যাক ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
এই চক্রের আরেক সদস্য হলেন জোনায়েদ। তিনি আহসানুল বারীর নিজস্ব কর্মী। তিনি মূলত ভারতে পাচার হওয়া কর্মীদের কলকাতা থেকে দিল্লি নিয়ে যেতেন। সেখানে উজবেকিস্তানের ভিসা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র ঠিক করে তাদের ভারতে অবস্থিত উজবেকিস্তানের দূতাবাসে ভিসার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দিতেন। এছাড়া ভিসা পাওয়ার পর তিনি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে প্লেনে উজবেকিস্তান যেতেন। উজবেকিস্তানে পৌঁছে বাংলাদেশিদের বিমানবন্দর থেকে নির্দিষ্ট বাসায় নিয়ে আটকে রাখতেন।
উজবেকিস্তানে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীদের মোবাইল ফোনসহ সবকিছু হাতিয়ে নিতেন জোনায়েদ। বারীর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কাকে, কখন, কত টাকা দিতে হবে; জোনায়েদ ভুক্তভোগীদের সেসব তথ্য জানাতেন।
এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তারা হলেন- আলমগীর অপূর্ব, আহসানুল বারী, ইয়াসির বারী আল আহাদ (হৃদয়) ও তার স্ত্রী হাবিবা খাতুন (লিডা)। সিআইডি জানায়, সুমন নামের একজনকে এই চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সুমন আগে গুলিস্তানের একটি হার্ডওয়্যার দোকানের মালিক ছিলেন। তিনি অনেককে বিদেশ যেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বর্তমানে তিনি ভারত বা উজবেকিস্তানে অবস্থান করছেন। তাকে ধরতে পারলে চক্রটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে বলে সিআইডির ধারণা।
মূলত চাকরির বয়স পার হওয়া এমন যুবকদের টার্গেট করত পাচারকারী চক্রটি
টার্গেট যারা
ভুক্তভোগী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই রুটে যারা যেতেন তাদের অধিকাংশের বয়স ৩০ থেকে ৩৬ বছরের ঊর্ধ্বে। তাদের সবাই একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছেন, অসংখ্যবার সরকারি চাকরির আবেদন করেছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাননি। ফলে হতাশ হয়ে এদিকে-ওদিকে ঘোরাঘুরি করতেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে গিয়ে বিদেশে কাজ ও চাকরির জন্য ধরনা দিতেন। মূলত তাদের টার্গেট করতেন লিডা ও ইয়াসির বারী।
মানবপাচারের মামলাগুলো তদন্তে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই মামলার সাক্ষীরা ঠিক মতো আদালতে হাজির হন না। কারণ, তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। অনেকে আছেন, যাদের আদালতে আসার গাড়িভাড়া পর্যন্ত নেই। এছাড়া অধিকাংশ মানবপাচারের ঘটনায় ভুক্তভোগীর বিদেশে থাকা স্বজনদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তারা ভুক্তভোগীর টাকা ফেরত দেন। এ কারণে কেউ মামলা নিয়ে আগ্রহ দেখান না
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার সাঈদুর রহমান খান
এছাড়া এই রুটে উজবেকিস্তানে যাওয়া সবাই শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের বাসিন্দা। কারণ, এই দুই জেলার অনেক প্রবাসী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। তাদের বাড়িঘর ও চলাফেরা দেখে অন্যরাও যেকোনো মূল্যে ইউরোপ যেতে চাইতেন।
মানবপাচার মামলার পরিসংখ্যান, তদন্তে কেন ধীরগতি
মানবপাচার সংক্রান্ত ঘটনাগুলো নিয়ে কাজ করছে পুলিশের সিআইডি ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। তাদের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭০টির মতো মানবপাচারের মামলা হয়েছে দেশে। সিআইডি বর্তমানে ১১০টি মামলার তদন্ত করছে। এর মধ্যে লিবিয়াফেরত ভুক্তভোগীদের মামলার সংখ্যা ১৪টি। ইতোমধ্যে ১৩টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি।
উজবেকিস্তানে নেওয়ার পর একটি বাসায় আটকে রাখা হতো ভুক্তভোগীদের। পরে টাকার বিনিময়ে মিলত মুক্তি
সিআইডি জানায়, মানবপাচারের শিকার ভুক্তভোগীরা দেশে ফিরে মামলা করতে চান না। কারণ, অধিকাংশ ভুক্তভোগী অবৈধভাবে দেশগুলোতে যান। তারা নিজেরাই নিজেদের অপরাধী মনে করেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস, মানবপাচার) সাঈদুর রহমান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানবপাচারের মামলাগুলো তদন্তে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই মামলার সাক্ষীরা ঠিক মতো আদালতে হাজির হন না। কারণ, তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। অনেকে আছেন, যাদের আদালতে আসার গাড়িভাড়া পর্যন্ত নেই। এছাড়া অধিকাংশ মানবপাচারের ঘটনায় ভুক্তভোগীর বিদেশে থাকা স্বজনদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তারা ভুক্তভোগীর টাকা ফেরত দেন। এ কারণে কেউ মামলা নিয়ে আগ্রহ দেখান না।
তিনি আরও বলেন, একটি পাচার প্রক্রিয়ায় অনেক সময় ৫০ থেকে ৬০ জনও জড়িত থাকেন। মামলার এজাহারে এত মানুষের নাম দিলে তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যেক ব্যক্তি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হয়। আবার অনেক অপরাধী দেশে থাকেন না। এ কারণে তদন্ত দীর্ঘায়িত হয়।
সূত্র ঢাকাপোস্ট