আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একক প্রার্থী বাছাই নিয়ে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের চিত্র দলের জন্য এখন পর্যন্ত অনুকূলে নয়। অধিকাংশ জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে কোন্দল রয়েছে। অবশ্য কোন্দল নিরসন, সংগঠনকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একক প্রার্থী মিশন নিয়ে দলটি মাঠে নেমেছে। একক প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য দলের হাইকমান্ড থেকে মাঠ পর্যায়ে ইতিমধ্যে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ৭টি টিম একক প্রার্থী বাছাইয়ের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে কাজের মনিটরিং করছে। দলের প্রেসিডিয়াম ও উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যরা এসব টিমের প্রধান এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমন্বয়ক হিসাবে কাজ করছেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ছয় দফায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এরমধ্যে ২১৫টি উপজেলার নির্বাচনের তফসিল সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৭টি ও ২৪ ফেব্রুয়ারি ১টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১১৭টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের জন্য আগ্রহী প্রার্থীরা ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এই দুই ধাপের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ যথাক্রমে ৩ ফেব্রুয়ারি ও ১১ ফেব্রুয়ারি। অনেক উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এ নিয়ে দলের হাইকমান্ড উদ্বিগ্ন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত অধিকাংশ উপজেলায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর বিষয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত সমঝোতার মাধ্যমে প্রত্যেক উপজেলায় একক প্রার্থী করার জন্য দলের প্রতি জেলা ও উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী বাছাইয়ের নির্দেশ দেন। কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়টিও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে গত সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি একক প্রার্থী বিষয়ে তদারকি করার জন্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দেন। এরপর গত ২৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনা এ বিষয়ে দলের সংসদ সদস্যদেরকেও একই নির্দেশনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় টিমের সমন্বয়ক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি গতকাল জানান, এই বিভাগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ৩৩টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। কোন কোন উপজেলায় দল সমর্থিত একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই একক প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য দলের সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা কমিটি হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে। আমাদের বিভাগীয় কমিটি তাদের কাজ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। সমঝোতার ক্ষেত্রে কোন সংকট হবে না বলে তিনি আশাবাদী।
আমাদের রংপুর প্রতিনিধি ওয়াদুদ আলী জানান, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিনজন প্রার্থী। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল দেখা দিয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ কে এম ছায়াদত্ হোসেন বকুলকে দলের একক প্রার্থী করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে অপর দুই প্রার্থীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে দাবি করে মোদাব্বেরুল ইসলাম সাজু জানান, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমি যাব না। তবে আশাবাদি, দল আমাকেই সমর্থন দেবে। অপর এক প্রার্থী মেশকোয়ারা হাবিব মুক্তি আওয়ামী লীগের ব্যানারেই চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নিজেকে দাবি করে বলেন, অন্য কাউকে প্রার্থী করা হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে তিনি নির্বাচন করবেন। এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহারুল হক বাবলু জানান, একক প্রার্থী করার বিষয়ে আমরা অটল।
শুধু আওয়ামী লীগ নয়, এই উপজেলায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন সাবেক এমপি ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ মন্ডল এবং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান মন্ডল।
আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত এই দুই দলের একক প্রার্থীর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি লিটন বাশার জানান, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে এ জেলার বাকেরগঞ্জ ও গৌরনদী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। বাকেরগঞ্জের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু প্রার্থী হয়েছেন। দল সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে মীর মো. মহসিন এবং এস এম আতিকুর রহমান মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গতকাল পর্যন্ত দলের একক প্রার্থী করার বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি।
ইত্তেফাকের রাজশাহীতে নিজস্ব প্রতিনিধি আনিসুজ্জামান জানিয়েছেন, এ জেলার মোহনপুর উপজেলায় আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একক প্রার্থী হয়েছেন দলের উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুস সালাম। তবে এখানে বিএনপি সমর্থিত দুই জন এবং জামায়াত সমর্থিত একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। একক প্রার্থী নিয়ে এই দুই দলে রয়েছে সংকট।
ঝিনাইদহ থেকে ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি বিমল কুমার সাহা জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সংখ্যা ৪ জন। তারা হলেন আব্দুর রশীদ, কনক কান্তি দাস, জে এম রাশিদুল আলম ও গোলাম সারোয়ার সৌদ। এখানে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে বিভক্ত। যে কারণে সদ্য অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হন। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত একক প্রার্থীর ব্যাপারে সমঝোতার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।