বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা যাদের কারণে এখনো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন প্রবাসে থাকা প্রবাসযোদ্ধারা। এই যোদ্ধাদের মধ্যে কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ ১০ জেলার মানুষ বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এরপরও এসব রেমিট্যান্সযোদ্ধা থাকছেন প্রায় সময় অবহেলিত। এমনটি মনে করছেন অভিবাসনপেশার সাথে সম্পৃক্তরা।
এদিকে প্র্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত বছর অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য আলাদা একটি ইমিগ্রেশন লাইন তৈরি করা। যেসব রেমিট্যান্সযোদ্ধা দেশে ফিরছেন এবং বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের জন্যই মূলত আলাদা লাইন করার ব্যাপারে বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এতে করে তারা কোনো ধরনের ঝাক্কি ঝামেলা ছাড়াই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে পারবেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিমানবন্দরে আলাদা ইমিগ্রেশন লাইন চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি বলে জানা গেছে।
গতকাল রোববার বিকেলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো: ফখরুল আলম নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে বলেন, এখন তো লকডাউনের কারণে তিনটির মধ্যে ইমিগ্রেশনের শুধু একটি লাইন চালু আছে। ইমিগ্রেশনে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য পৃথক গ্রিন চ্যানেল চালু করা হবে এটা অনেক দিন থেকেই শুনছি। এ নিয়ে মিটিংও হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হওয়ার মতো কিছুই দেখছি না। তিনি বলেন, এখানে ইমিগ্রেশনের তিনটি লাইন রয়েছে। আরেকটা লাইনের জায়গা কোথায়? থার্ড টার্মিনাল চালু হলে তখন হয়তো প্রবাসীদের জন্য আলাদা ইমিগ্রেশন লাইন চালু হতে পারে। এটাও আমার ব্যক্তিগত মতামত।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে যত মানুষ বৈধভাবে কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গেছেন তার মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা জেলার মানুষ। অপর দিকে সবচেয়ে কম মানুষ গেছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে।
করোনা মহামারীর মধ্যেও ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট আড়াই লাখ কর্মী সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, মরিশাস, লেবানন, জর্দানসহ শ্রমবান্ধব দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালে কুমিল্লা থেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন ২৪ হাজার ৩৩৮ জন শ্রমিক। আর ১৪ হাজার ৪৭৪ জন মানুষ বিদেশ গিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। এরপরের অবস্থানে আছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। এই সময়ে চট্টগ্রাম থেকে গেছে ১১ হাজার ৪৬০ জন কর্মী। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চাঁদপুর, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল ও ঢাকা। এছাড়াও শীর্ষ ১০ জেলার বিদেশগামীদের মধ্যে আরো যে তিনটি জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে সেগুলো হচ্ছে নরসিংদী, সিলেট ও কিশোরগঞ্জ।
অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব রেমিট্যান্সযোদ্ধা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের জন্য কোটি কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে পরিবারের পাশাপাশি সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিও। তারপরও তাদের অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মীর কেউ কেউ বিদেশে থাকা দূতাবাসের শরণাপন্ন হয়েও পাচ্ছেন না সহযোগিতা। অনেকে রয়েছেন নানা সমস্যার মধ্যে। একইভাবে যারা প্রবাসজীবন শেষ করে দেশে ফিরছেন তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ বিমানবন্দরে এসে অহেতুক ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন বলে মাঝে মধ্যে শোনা যায়। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে আরো বেশি মনোযোগী হওয়ার জন্য তারা পরামর্শ দেন।
London Bangla A Force for the community…
