দেশে গণতন্ত্র এখন মৃত। মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। কথা বলার অধিকার থাকলে শুধু সংবাদ সম্মেলন করার কারণে আমাকে গ্রেপ্তার করা হতো না। ফ্যাসিবাদী সরকার বলে এটা সম্ভব হয়েছে। সদ্য কারামুক্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান এক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে ঘিরে বিএনপি নেতাদের ব্যাপক ধরপাকড় চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংবাদ সম্মেলন করার পর গত ৭ই জানুয়ারি নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর গাজীপুরের
কাশিমপুর কারাগারে কাটিয়েছেন ১০ দিন। গতকাল বেলা সোয়া ১১টার সময় মুক্তি পান তিনি। নাতিদীর্ঘ কারাগার জীবনের স্মৃতি বর্ণনা করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দোয়া-দরুদ ও হাদিসের বই পড়ে সময় কাটতো। প্রতিদিন দুটি দৈনিক পত্রিকা দেয়া হতো। ডেইলি স্টার ও যুগান্তর। রুমে কোন টেলিভিশন দেয়া হয়নি। তাই তাৎক্ষণিক বাইরের কোন খবরাখবর পেতাম না। খবরাখবরের জন্য শুধু পত্রিকাই একমাত্র মাধ্যম ছিল। তবে পরিবারের সদস্যরা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে গিয়েছিলেন। তাদের কাছ থেকেও দলের খোঁজখবর নিয়েছি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে সেলিমা রহমান বলেন, বর্তমান সরকার একতরফা নির্বাচন করে একদলীয় সরকার গঠন করেছে। সঠিকভাবে হলে তো এই সরকারের একদিনও টেকার কথা নয়। সরকার যদি গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় তাহলে সেটা তাদের ওপর নির্ভর করবে। নিজের গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গে সেলিমা রহমান বলেন, দেশে যদি গণতন্ত্র থাকতো, কথা বলার অধিকার থাকতো তাহলে আমাকে গ্রেপ্তার করার কথা নয়। এটা ছিল সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণ। কারণ দেশে এখন গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। গণতন্ত্র এখন মৃত। তিনি বলেন, দলের চেয়ারপারসন অহিংস কর্মসূচি দিয়েছেন। আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হবে। মামলা-হামলা ও সরকারের নির্যাতনে এতদিন দলের যেসব নেতাকর্মী আত্মগোপনে ছিলেন তারা ওই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আবারও উজ্জীবিত হবেন। দলের সাংগঠনিক কাঠামোও শক্তিশালী হবে। এছাড়া তৃণমূল কর্মীরাও এর মাধ্যমে চাঙ্গা হবেন। রাজধানীতে দলের অঙ্গসংগঠনের নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে বিএনপির সিনিয়র এ মহিলা নেত্রী বলেন, রাজধানীর বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর বেশির ভাগ নেতাকর্মীর নামেই একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়েছে সরকার। বাসা থেকে বের হলেই গ্রেপ্তার করা হতো। আমাদের মিছিল-মিটিংয়ে সরাসরি গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছদ্মবেশে ধরে নিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সরকারের এ ধরনের স্বৈরাচারী আচরণের কারণেই রাজধানীতে নেতাকর্মীরা নামতে পারেননি। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করলে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে- সরকারের এই প্রস্তাবের সম্পর্কে সেলিমা রহমান বলেন, আমরা কাকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করবো আর কাকে ছাড়বো- সেটা আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তো আমরা রাজনীতি করবো না। আমরা আমাদের আদর্শ ও নীতি অনুযায়ী রাজনীতি করবো। দলের অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে সুসংগঠিত করার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি গতকাল মুক্তি পেয়েছি। আগামী ২০শে জানুয়ারি সমাবেশ রয়েছে। ওই সমাবেশকে সফল করতে মহিলা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করবো। এছাড়া আগামী দিনের কর্মসূচিতে রাজপথে থাকবে দলের নেতাকর্মীরা।