ব্রিটিশ রাজপরিবারের বধূ প্রিন্সেস ডায়ানার প্রেম নিয়ে গুঞ্জনের শেষ ছিল না। তার সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন শেষ প্রেমিক মিসরীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক দোদি আল ফায়েদ। তাই দোদির সঙ্গে ডায়ানার প্রেমটাই সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তবে বহুল আলোচিত এই রাজবধূর সত্যিকারের প্রেমিক দোদি নন, বরং নিভৃতে থাকা এক পাকিস্তানি চিকিৎসক ছিলেন।
রাজপরিবারের লেখক ইনগ্রিদ সিওয়ার্ড এ তথ্য জানিয়েছেন।
১৯৯৫ সালে হাসপাতালে এক বন্ধুকে দেখতে গিয়ে ডায়ানার সঙ্গে পরিচয় হয় ৩৭ বছরের হাসনাত খানের সঙ্গে। প্রথম দর্শনেই হাসনাতের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়। এরপর ডায়ানা ও হাসনাতের প্রেমের সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়। এরপর প্রায় দুই বছর টিকে ছিল দুজনের প্রেমের সম্পর্ক। ক্যামেরার চোখ এড়াতে অধিকাংশ সময়ই দুজন কেনসিংটন প্রাসাদে সময় কাটাতেন। চেলসিতে হাসনাতের বাড়িতেও যেতেন ডায়ানা। ওেই সময় তিনি কালো পরচুলা ও সানগ্লাস পরতেন।
রাজপরিবারের লেখক ইনগ্রিদ সিওয়ার্ড বলেন, ‘এটা হঠাৎ আবেগের বিষয় ছিল না। তিনি হাসনাতকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন ও সন্তান নিতে চেয়েছিলেন, সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে কন্যাসন্তান। তিনি ভেবেছিলেন, তাদের ভিন্ন জাতিগত ঐতিহ্য হয়তো একটি চমৎকার পরিবার তৈরি করবে। এটা ছিল কল্পনা, তবে এক সময় তিনি এটা বিশ্বাস করতে শুরু করেন। অবশ্য এটা কখনো হওয়ার ছিল না। কারণ হাসনাতের পরিবার চেয়েছিল তাদের ছেলে এক জন মুসলিম নারীকে বিয়ে করবে এবং ডায়ানার যে সার্কাস তার অংশ হতে পারবে না হাসনাত। অবশ্য ডায়ানা সত্যিকারার্থে ভালোবাসতো তাকে। আর এ কারণে আমি মনে করি না যে ডায়ানা হয়তো দোদিকে বিয়ে করতো।’
সিওয়ার্ড বলেন, ‘দোদির অসাধারণ আকর্ষণীয় ক্ষমতা এবং ডায়ানা যা চাইতো তার সবকিছু দেওয়ার সামর্থ্য অবশ্য যথেষ্ট ছিল না। তবে রাজকন্যার সঙ্গে যেমন আচরণ করা হয় তার সঙ্গে তেমনটাই করতেন দোদি। সে যখন বলতো চলো নৈশভোজে যাই, তখন হয়তো তাকে নিয়ে ব্যক্তিগত বিমানে করে প্যারিসের রিৎজে ছুটতেন দোদি।
ডায়ানার সাবেক পরিচারক পল বারেল হাসনাতের ব্যাপারে বলেছেন, ‘ডায়ানার সত্যিকারের প্রেম ছিল হাসনাত, দোদি নয়। যদিও সে ডায়ানার সঙ্গে মারা গেছে এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ৩০ দিনের। আমি মনে করি দুর্ঘটনাটি না ঘটলে তিনি হাসনাতের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কটি পুনরায় জাগিয়ে তুলতেন। হয়তো তাদের বিয়ে হতো না কিন্তু সুখ মিলতো হয়তো।’
সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করতেন হাসনাত। একেবারেই সাধারণ ছিল তার জীবনযাত্রা। সাপ্তাহিক ছুটিতে হাসনাত খানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে জন্য রান্নাও করতেন ডায়ানা। সাধারণ নারীর মতো সময় কাটাতে পছন্দ করতেন তিনি। এমনকি হাসনাতের থালাবাটি পরিষ্কার ও তার কাপরচোপড় গুছিয়ে দিতেন তিনি।
মৃত্যুর এক বছর আগে ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের লাহোরে হাসনাতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ডায়ানা। ধারণা করা হয়, ওই সময় তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা ভেবেছিলেন।
ডায়ানার বন্ধুদের ভাষ্য, হাসনাত ছিলো তার জীবনের ভালোবাসা। তবে ডায়ানাকে কতোটা ভালোবাসতেন কিংবা ডায়ানা তাকে কতোটা ভালোবাসতো সে বিষয়ে হাসনাত কখনোই মুখ খোলেননি। তবে ২০০৮ সালের মার্চে ডায়ানার মৃত্যুর রহস্য তদন্তকারী বিচারপতি লর্ড স্কট বেকার্সের কাছে দেওয়া লিখিত বিবৃতিতে হাসনাত জানিয়েছেন, ১৯৯৫ সালের গ্রীষ্মে তাদের সম্পর্ক শুরু হয়। তারা বিয়ে নিয়েও কথা বলেছিলেন।
তদন্ত চলাকালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে বলেছিল, ‘ডায়ানার যেসব প্রেমিক ছিলেন তাদের মধ্যে খান পত্রিকা ও প্রকাশকদের ব্যাপক চাপ ও লাখ লাখ পাউন্ডের বিনিময়েও ডায়ানার সঙ্গে থাকা তার গল্প বিক্রি করেননি।’
কার্ডিয়াক সার্জন হাসনাত খান ডায়ানার মৃত্যুর পরও বেশ কয়েক বছর যুক্তরাজ্যে ছিলেন। তবে তদন্ত যখন পুরোদমে চলছিল তখন তিনি পাকিস্তানে চলে যান। ২০০৬ সালে তিনি অভিজাত আফগান পরিবারের মেয়ে হাদিয়া শের আলিকে বিয়ে করেন। পারিবারিক এই বিয়ে অবশ্য দুই বছরের বেশি টেকেনি। ওই সময় ডায়ানার সঙ্গে তার সম্পর্ক ও বিচ্ছিন্ন হওয়াটা তার জীবনে প্রভাব ফেলেছিল বলে তদন্তকারীদের কাছে স্বীকার করেছেন হাসনাত।
ডায়নার সঙ্গে তার সম্পর্ক কেন চূড়ান্ত পরিণতি পেলো না সে বিষয়ে কখনো সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেননি হাসনাত। তবে তার বাবা আব্দুর রশিদ খান জানিয়েছেন, দুজনের মধ্যে সাংস্কৃতিক ব্যবধানই বিচ্ছেদের কারণ বলে তার ছেলে তাকে জানিয়েছিল।
আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হাসনাত আমাকে বলেছে, আমি যদি তাকে বিয়ে করি তাহলে এটা হয়তো এক বছরের বেশি টিকবে না। সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের দুজনের ব্যবধান অনেক বেশি। তিনি শুক্র গ্রহের আর আমি মঙ্গলের। এটা যদি কখনো হতোই তাহলে তা হতো দুই ভিন্ন গ্রহের বিয়ে।’
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সংসারে থিতু হয়েছেন হাসনাত। ২০১৭ সালে তার চেয়ে অনেক কম বয়সী সোমি সোহাইলকে বিয়ে করেন তিনি। এখন তিনি যুক্তরাজ্যে বাস করেন। ৬২ তে পা দেওয়া হাসনাত এখন সৌদি আরব, ইথিওপিয়া ও পাকিস্তানে দাতব্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।