সামিউল ইসলাম খান ওরফে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি এবং কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও রাষ্ট্রচিন্তার মো. দিদারুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আফসার আহমেদ গত ১০ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছেন। আদালতের রমনা জেনারেল রেকডিং (জিআর) শাখা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নিজাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চার্জশিটের অপর আসামিরা হলেন সুইডিশ-বাংলাদেশের সাংবাদিক নেত্র নিউজ সম্পাদিক তাসনীম খলিল, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, ব্লগার আশিক মোহাম্মাদ ইমরান ও মো. ওয়াহিদুন-নবী।
অন্যদিকে কারাগারে থাকা অবস্থায় লেখক মোস্তাক আহম্মেদ মৃত্যুবরণ করায় এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন গণের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় ও ফেসবুক আইডি ফিলিপ শুমাখার নাম ঠিকানা না পাওযায় তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলাটির পূর্বের তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহসীন সর্দার প্রথম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। সেখানে কার্টুনিস্ট কিশোর ও রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল এবং লেখক মোস্তাককে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি ও মিনহাজ মান্নান, আশিক মোহাম্মাদ ইমরান, তাসনীম খলিল ও মো. ওয়াহিদুন-নবীসহ আটজনকে অব্যাহতি চাওয়া হয়েছিল।
চার্জশিটে আল-জাজিরা টেলিভিশনে সরকারপ্রধান এবং সেনাপ্রধানকে নিয়ে প্রচারিত প্রতিবেদনে প্রধান চরিত্র হিসেবে সামিউল ইসলাম খান ওরফে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি অব্যাহতি পাওয়া নিয়ে সংবাদপত্রে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ায় মামলাটি পরে অধিকতর তদন্তে পাঠানো হয়। অধিকতর তদন্ত শেষে এবার সাতজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হলো।
আসামিদের মধ্যে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি অবসর প্রাপ্ত লে. কর্নেল আব্দুল বাতে খানের ছেলে। ২০০৬ সালের ২০ জুলাই র্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটের এ জে টেলিকমিউনিকেশন থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার মোবাইল ফোন কিনে একটি ভুয়া চেক দেন সামিউল। একইভাবে প্রাইজ ক্লাব নামক একটি কম্পিউটার ফার্ম থেকে ল্যাপটপ কেনা নিয়েও প্রতারণা করেন। চেক ডিজঅনারের অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-১ তাকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনার পর অনিয়ন্ত্রিত ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য সামিউলকে ত্যাজ্য করেন তার বাবা লে. কর্নেল (অব.) আবদুল বাসেত। ঠিক এর পরদিন কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসার পথে ২০০৬ সালের ২৩ জুলাই এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বাসেত। সামির প্রকৃত নাম সামিউল আহমেদ খান। তবে তথ্য গোপন করে সামিউল তার নামে যে পাসপোর্ট করেন, সেখানে তার নাম দেওয়া হয় জুলকার সায়ের খান। এমনকি পাসপোর্টে বাবার নামও বদলে কর্নেল ওয়াসিত খান করেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৫ মে র্যাব-৩-এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মোস্তাক আহমেদ, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহামারি করোনাভাইরাস সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তারা রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন মর্মে অভিযোগ আনা হয়।
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মুস্তাক আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আই অ্যাম বাংলাদেশি (ইংরেজি হরফে লেখা) নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির’ অভিযোগ আনা হয়। মামলার পর গ্রেপ্তার হয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মিনহাজ মান্নান ও দিদারুল ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পান। কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মোস্তাক কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ২৫ মে মোস্তাক কাশিমপুর কারাগারে মারা যান।