সিলেটে আইনজীবী আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহজাহান চৌধুরী মাহি এক সপ্তাহেও গ্রেপ্তার হয়নি। মাহি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেটের আইনজীবীরা। গতকাল দুপুরে সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণে একটি মানবাধিকার সংগঠনের ব্যানারে আইনজীবীরা উপস্থিত হয়ে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পুলিশ বলছে- মাহিকে ধরতে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া শিপা বেগমকে আজ পুলিশি হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। সিলেটে খালাতো ভাই শাহজাহান চৌধুরী মাহির সঙ্গে স্ত্রী শিপা বেগমের পরকীয়া প্রেমের বলি হয়েছেন জেলা বারের পরিচিত আইনজীবী আনোয়ার হোসেন। মামলার এজাহারেই নিহত আনোয়ার হোসেনের ভাই মনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেছেন তার ভাই এডভোকেট আনোয়ার হোসেন সকালে যখন কর্মস্থলে চলে যেতেন তখন মাহি মোটরসাইকেল নিয়ে তার বাসার সামনে আসতো। এ সময় শিপাকে নিয়ে মাহি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করতো।
এডভোকেট আনোয়ার হোসেন বাসায় আসার আগেই মাহি প্রেমিকা শিপাকে বাসার সামনে এসে নামিয়ে দিয়ে যেতো। বিষয়টি জানার পর এডভোকেট আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে শিপা বেগমের সাংসারিক দূরত্বের সৃষ্টি হয়। এবং মৃত্যুর পূর্বে তারা দু’জন দুই কক্ষে বসবাস করতেন। গত ৩০শে এপ্রিল রমজানের দিনে মারা যান এডভোকেট আনোয়ার হোসেন। ফজরের নামাজের পর তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। বিকাল ৩টায় স্ত্রী শিপা বেগম স্বজনদের ফোন করে জানান আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর খবর। শিপার কথায় স্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিয়ে আনোয়ার হোসেনকে স্বজনরা গ্রামের বাড়ি সিলেট শহরতলীর শিবের বাজারে দাফন করেন। কিন্তু আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় স্ত্রী শিপা বেগমের বিয়ের খবর নিয়ে আনোয়ার হোসেনের পরিবারের স্বজনদের সন্দেহ হয়। এরপর তারা খবর নিয়ে জানতে পারেন খালাতো ভাই শাহজাহান চৌধুরী মাহির সঙ্গে শিপা বেগমের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এবং এডভোকেট আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর শিপা তার প্রেমিক মাহিকেই বিয়ে করেছেন। পরবর্তীতে ফোনালাপে শিপা মামলার বাদী মনোয়ার হোসেনের কাছে সেটি স্বীকার করেন। ১লা জুন এ ঘটনায় আদালতে এডভোকেট আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে মামলা করেন তার ভাই মনোয়ার হোসেন। আদালতের নির্দেশে সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড করে শিপাকে গ্রেপ্তার করেছে। মাহি ও শিপা ছাড়া এ মামলার আসামিরা হলেন- শিপার মা গোলাপগঞ্জের রণকেলী গ্রামের আজমল আলীর স্ত্রী রাছনা বেগম, কোতোয়ালি থানাধীন রায়নগর ১০৪নং বাসার মোতাহির আলীর ছেলে এনামুল হাসান, জৈন্তাপুরের হরিপুর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে এসএম জলিল, বিমানবন্দর থানাধীন কালাগুল এলাকার মৃত কালা মিয়ার ছেলে জাকির আহমদ, গোয়াইনঘাটের ছোটখেল গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে ফয়সল আহমদ ও সুবিদবাজার এলাকার লন্ডনী রোডের নাইমার। আদালত শিপার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে শিপাকে আজ পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) মো. ইউনূস। তিনি জানান- শিপাকে গ্রেপ্তারের পর থেকে মাহি পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে- শিপা ও মাহির কললিস্ট সংগ্রহের জন্য পুলিশ আবেদন করেছে। কললিস্ট পেলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। এদিকে- আনোয়ার হোসেনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে গতকাল দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি আয়োজিত মানববন্ধনে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ আইনজীবীরা উপস্থিত হন। এখন পর্যন্ত প্রধান আসামি শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে গ্রেপ্তার না করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি সিলেট জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট আল আসলাম মুমিন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ উদ্দিন অনতিবিলম্বে সিলেট জেলা বারের বিজ্ঞ সিনিয়র এডভোকেট আনোয়ার হোসেনের হত্যাকারী খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসন আরও আন্তরিক হলে অপরাধীরা কোনো অবস্থাতেই ছাড়া পাবে না। তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মানববন্ধনে অতিথি হিসেবে ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে এডভোকেট মাহফুজুর রহমান ও এডভোকেট ফজলুল হক সেলিম, সাবেক সভাপতি একেএম সমিউল আলম, সাবেক সভাপতি মো. লালা, মাওলানা আব্দুর রকিব, পান্না লাল দাস, ওবায়দুর রহমান, জালাল উদ্দিন, খোরশেদ আলম খোকন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোস্তফা দিলোয়ার আল আজহার, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মহসিন আহমদ চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সত্তার, ড. এম শহিদুল ইসলাম, সৈয়দ নুরুজ্জামান, বদিউল আলম লিটন, সেলিম মো. আলী আসগর, সৈয়দ আকরাম আল সাহান, ফখরুল হক, তাজ উদ্দিন মাখন, শফিকুল ইসলাম শফিক, ইসরাফিল আলী, সমাজসেবী মুর্শেদ মিয়া, সাব্বির আহমদ বাবলু, খালেদ আহমদ জুবায়ের, বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, সলমান উদ্দিন, সাইফুর রহমান রানা, ওবায়দুর রহমান ফাহমি, নেপাল চন্দ্র, মুসলিম উদ্দিন, মো. আজিম উদ্দিন, আব্দুল মুকিত অপি, মোবারক হোসেন, সৈয়দ কাওছার আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক, ঝরনা বেগম, রেদোয়ান আহমদ চৌধুরী, সালেহ আহমদ, সাদিদুর রহমান রিপন, মামুন আহমদ, সুলতানা রাজিয়া ডলি, নজরুল ইসলাম, আনিসুল হক, বিজিত লাল তালুকদার, আব্দুর রকিব, কামাল হোসেন, কানন আলম, রাকিব আল মাহমুদ, আবু ফাহাদ, টিপু রঞ্জন, মুজিবুর রহমান, নজরুল ইসলাম ও নিহত আনোয়ার হোসেনের ভাই বাদী মনোয়ার হোসেন লিটু প্রমুখ।