হেফাজতের সাবেক নায়েবে আমির মধুপুরের পীর আবুদল হামিদ আসবেন তাই প্রয়াত হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ও উস্কানিদাতাদের গ্রেফতারপূর্বক বিচারকার্য দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা পর।
বুধবার (২ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনটি বেলা ১১টায় হবার কথা থাকলেও তা শুরু হয় দুপুর ১২টায়।
হেফাজতের সাবেক আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী পন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত হেফাজতের সাবেক নায়েবে আমির মধুপুরের পীর আবদুল হামিদ।
মধুপুরের পীরের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে। গত মার্চ ও এপ্রিলে মোদিবিরোধী সহিংসতায় তার মধুপুর হাফেজিয়া আসলামিয়া মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদেরও অংশগ্রহণ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। মধুপুরের পীর সেদিন পুলিশের গুলিতে আহতও হন। ২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং হেফাজত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় সিরাজদিখান থানায় হামলা করেন হেফাজত কর্মীরা। সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম জালাল উদ্দিনকে ধরে এনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে আহতও করা হয়। এই ঘটনায় করা মামলায় মধুপুরের পীরের পাঁচ ছেলেকে আসামি করা হয়। পরে মধুপুরের পীর আব্দুল হামিদের দুই ছেলে মোহাম্মদ আতাউল্লাহ ও মোহাম্মদ উল্লাহকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
যদিও সেই ঘটনার পর তিনি গত ২৮ মে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মোদিবিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন। একইসঙ্গে হেফাজতের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি মাওলানা আবদুল হামিদ (পীর সাহেব, মধুপুর) শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর নীতি ও আদর্শের ওপর অবিচল আছি এবং আজীবন থাকব ইনশাআল্লাহ। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই এবং নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির প্রতিও আমার কোনো সমর্থন নেই। এই কমিটিকে আমি বৈধ মনে করি না।’
মাওলানা আবদুল হামিদ আরও বলেন, ‘আমি হেফাজতে ইসলামের মোদিবিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের মধুপুরে অপ্রত্যাশিত ঘটনাবলীর জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বিশেষ করে আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন মেজর জেনারেল আবুল কালাম হুমায়ুনের আম্মার আহত হওয়ার খবর শুনে অত্যন্ত দুঃখিত ও ব্যথিত হয়েছি। বিশেষ করে মেজর জেনারেল সাহেবের বাড়িঘরসহ অন্যান্যদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। সব প্রশ্নের জবাব দেন হেফাজতে শফীর নেতৃত্বাধীন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। এদিকে আল্লামা শফী হত্যাকাণ্ডে পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘বাবুনগরী’সহ জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা ও হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটিকে অবৈধ ঘোষণার দাবিতে একাত্মতা জানান।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল শাহ আহমেদ শফির মৃত্যুকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে হেফাজতের সাবেক আমির জুনাইদ বাবুনগরীসহ দলের ৪৩ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। যদিও সেই প্রতিবেদনকে মিথ্যা ও বাস্তবতা বিবর্জিত বলে প্রত্যাখ্যান করেন বাবুনগরী।
মধুপুরের পীর কোনো চাপের মুখে কিংবা ছেলেদের বাঁচাতে শফীপন্থীদের দলে এসেছেন কিনা- এমন প্রশ্নে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি না, মধুপুরের পীরের (আবুদল হামিদ) মতো মানুষ চাপের মধ্যে নতিস্বীকার করে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। তিনি মেরুদণ্ড সোজা করে চলতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘মধুপুরের পীর আগে থেকেই তাদের পক্ষের মানুষ। আহমদ শফী যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন থেকেই তিনি আমাদের ধারার সঙ্গেই আছেন।’
বাবুনগরীর কমিটিতে মধুপুরের পীরের পদ প্রসঙ্গে ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা শুনে অবাক হবেন, বাবুনগরীর কমিটিতে অনেককে পদ দেয়া হয়েছিল, যারা নিজেরাও জানতেন না।’
তিনি বলেন, ‘উনি প্রথম থেকেই আমাদের মতের লোক ছিলেন। আল্লাম শফি যখন আজগর আলী হাসপাতালে ছিলেন, তিনি আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। উনি প্রথম থেকে আল্লামা শফি হত্যার বিচার চাইছেন। তিনি শফী সাহেবের অন্যতম সাথীও।’