ঈশ্বরদী শহরের রূপনগর কলেজপাড়া নিবাসী ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদের (৩৫) চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। দেবর-ভাবির প্রেমঘটিত ঘটনায় এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে। স্ত্রী ও ভাই মিলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুশনচাপা দিয়ে শাকিলকে হত্যা করে।
বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান ও ঈশ্বরদী থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিহত শাকিলের ছোটভাই সাব্বির আহমেদ (২৮) ও স্ত্রী মীম খাতুনকে (২২) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের দুজনের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ঈশ্বরদী থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, প্রাথমিক তদন্ত ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়; সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কিছু বিবাদ ও পরকীয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাকিল গত ১৯ মে তার স্ত্রীকে নিয়ে ঈশ্বরদী শহরের রূপনগর কলেজপাড়া মহল্লায় জনৈক আহসান হাবীবের বাড়ির ২য় তলায় ভাড়াটিয়া হিসাবে উঠে। এতে মীম এবং সাব্বির একে অপরের থেকে কিছুটা দূরে চলে যাওয়ায় তারা উভয়ই শাকিলের প্রতি মনে মনে ক্ষিপ্ত হয়। তারা শাকিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
সেই অনুযায়ী শাকিলের স্ত্রী মীম গত ২৭ মে রাত ১০টার দিকে পানির সঙ্গে তিনটি ঘুমের ট্যাবলেট গুঁড়া করে মিশিয়ে শাকিলকে খাওয়ায়। পরদিন শাকিল সারাটা দিন ঘরের মধ্যে শুধু ঘুমাতে থাকেন। ২৮ মে সাব্বির সন্ধ্যার পর শাকিলের ভাড়াবাসায় যাবে মর্মে পূর্বেই মীমকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছিল।
সাব্বির গোপনে শাকিলের বাসায় যায়। তখনো শাকিল ঘুমের ওষুধের প্রভাবে খাটের ওপর ঘুমচ্ছিল। সাব্বির এবং মীম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শোফাসেটের কুশন নিয়ে শাকিলের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে শাকিলকে ঘুমন্ত অবস্থায় নাকে-মুখে কুশনচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। শাকিলকে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর ফলে শাকিল তেমন কোনো প্রতিরোধ করতে পারেননি।
ওসি আসাদুজ্জামান আরও জানান, মীম ও সাব্বির ভিকটিম শাকিলকে হত্যার বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সাব্বির ওড়না দিয়ে মীমের দুই পা, শাকিলের পাঞ্জাবি দিয়ে দুই হাত এবং মীমের ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে বাহির দরজার কাছে রেখে ঘরের দরজা বাহির থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।
এ সময় সাব্বির তার ভাবি মীমের সঙ্গে গোপনে কথা বলার জন্য তাকে দেয়া মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় এবং বাসার মেইন গেটের চাবি পাশের বাসার দেওয়ালের ওপর রেখে দেয়।
ওসি জানান, সাব্বিরের কাছ থেকে মীমের কথা বলার গোপন মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মীমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও কোন আসামি জড়িত আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আসামি সাব্বিরকে চার দিনের পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলাটি তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।