প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। প্রতি দুই সপ্তাহে কোভিড-১৯ আক্রান্ত এক হাজার রোগীর সাশ্রয়ী উন্নত চিকিৎসার যে উদ্যোগ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ করোনা চিকিৎসা দল নিয়েছে, তাতে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার (১৯ এপ্রিল) এ চিঠি পৌঁছে দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। এদিন দুপুর ১টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
চিঠিতে জরুরিভাবে ১১টি কর্তব্য পূরণ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, অক্সিজেন, ওষুধ, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী থেকে বিশেষ SRO (Statutory Regulatory Order)-এর মাধ্যমে সব ধরনের শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, মূসক প্রভৃতি প্রত্যাহার করা। আইসিইউ পরিচালনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। সব ওষুধের মূল্য এবং রোগ পরীক্ষার পদ্ধতিসমূহের চার্জ সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া।
কারাগারে অবরুদ্ধ সব ব্যক্তিকে দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া এবং খুনের দায়ে এবং দুর্নীতির কারণে দণ্ডিত অভিযুক্ত ছাড়া অন্য সবাইকে জামিনে মুক্তি দেওয়া। সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজসমূহে প্রতি বছর ২০ হাজার ছাত্র ভর্তি করা এবং এমবিবিএস পাসের পর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে এক বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করানো। অতীতে এই নিয়ম চালু করে দুই সপ্তাহ পর তা প্রত্যাহার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ম আবারও চালু করার পরামর্শ দেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ড. ইউনূসকে বিশেষ দূত করার পরামর্শ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে চিঠিতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী উল্লেখ করেন, ট্রিপসের বাধ্যতামূলক (Compulsory) লাইসেন্সের মাধ্যমে ভ্যাকসিন উৎপাদন সুবিধা সৃষ্টির জন্য নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আপনার বিশেষ দূত করে ইউরোপে পাঠান।
চিঠিতে প্রস্তাব করা হয়, লকডাউন কার্যকর করার জন্য দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোকে সরাসরি আর্থিক প্রণোদনার পরিবর্তে বিনামূল্যে মাসিক রেশনে চাল, ডাল, আটা, আলু, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন প্রভৃতি দিতে হবে। রেশন বিতরণের জন্য সামরিক বাহিনী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং এনজিও কর্মীদের ব্যবহার সুফল দেবে।
ভ্যাকসিনে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি
চিঠিতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার প্রস্তাব করেন। তিনি উল্লেখ করেন, গত বছর দ্রুত সিনোভ্যাকের ট্রায়াল অনুমোদন না দিয়ে যে ভুল করা হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।
বিজন কুমার শীল বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না
চিঠিতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি-এন্টিজেন অনুমোদন এক বছরে হয়নি। ড. বিজন কুমার শীলের ভিসা না হওয়ায় বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না। ছয় মাস আগে চার বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে রিয়েল টাইম পিসিআর (Real time PCR) ল্যাবরেটরি স্থাপিত হলেও ব্যবহার শুরু করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর এখনও অনুমতি দেয়নি। ক্ষতি হচ্ছে দেশের, বিষয়টি আপনাকে পুনরায় অবগত করলাম।
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতির কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা সমধিক। শেষে প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও নববর্ষের শুভ কামনা করেন তিনি।