ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান দেশে আসার বিষয়ে সরকার এখনো সুনির্দিষ্ট করে জানতে না পারায় চলমান টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান হারে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হতে থাকলে মজুতে থাকা ভ্যাকসিন আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
বর্তমানে দৈনিক প্রায় দুই লাখ মানুষ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ও প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রথম ডোজ নিচ্ছেন।
দেশে মজুত থাকা এক কোটি দুই লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে সেরামের স্থানীয় এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন জানান, তারা সেরামের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
‘সেরাম আমাদেরকে জানিয়েছে যে, তারা (ভ্যাকসিন) রপ্তানি করতে প্রস্তুত। কিন্তু, এজন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র প্রয়োজন। সেরাম এখনো সে ছাড়পত্রটি পায়নি’, জানান পাপন।
সেরাম কখন এ তথ্য জানিয়েছে, জানতে চাইলে বেক্সিমকো এমডি বলেন, ‘যখনই আমরা যোগাযোগ করি, তখনই তারা এটা বলে। এ সপ্তাহেও সেরাম একই কথা জানিয়েছে। ছাড়পত্রটি পেলেই আমরা জানতে পারব যে, সেরাম ভ্যাকসিনের কতগুলো ডোজ আমাদেরকে পাঠাতে পারবে এবং কখন পাঠাতে পারবে।’
সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে মোট ছয়টি চালানে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার জন্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছিল। কিন্তু, দ্বিতীয় চালানে ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসে।
তৃতীয় চালানের ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন মার্চের শেষ সপ্তাহে দেশে আসার কথা থাকলেও দ্বিতীয় চালানের পর সেরামের কাছ থেকে আর কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যায়নি।
মার্চে ভারত সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের সব ধরনের রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিত করে। তারা জানায়, ভারতে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যেতে পারে এবং সে কারণে তাদের নিজস্ব টিকাদান কর্মসূচির জন্য আরও বেশি পরিমাণ ভ্যাকসিন প্রয়োজন।
সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনাওয়ালা চলতি মাসের শুরুর দিকে গণমাধ্যমকে জানান, ভারতে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় ‘সেরামের কোভিশিল্ড উৎপাদন কার্যক্রম খুবই চাপের মুখে রয়েছে’।
ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন সরবরাহে বিলম্বের কারণে সেরামকে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
চলমান পরিস্থিতিতে টিকাদান কর্মসূচিতে বিঘ্ন ঘটবে কি না, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে, আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি বিষয়টির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করার।’
‘যদি সেরামের কাছ থেকে দ্রুত ভ্যাকসিন পাওয়া না যায়, তাহলে আমরা অন্যান্য উৎস থেকে একই ভ্যাকসিন জোগাড় করার চেষ্টা করব’, যোগ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, এ মুহূর্তে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম একইসঙ্গে চালানোটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজগুলো দেওয়া যাবে কি না, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা এখন চিন্তিত। কারণ আমাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন নেই’, সূত্রটি বলে।
London Bangla A Force for the community…
