নানা ইস্যুতে অনেকটাই চাপে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক রিসোর্টে ধরা পড়ার পর এক ধরনের ধাক্কা খেয়েছে হেফাজতের সাংগঠনিক কার্যক্রম। তদুপরি সংগঠনটি সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা আটক হয়েছেন। তাদেরকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন শীর্ষ নেতারা। এমতাবস্থায় সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে হেফাজত।
ধরপাকড়, মামলা, গ্রেপ্তার ও সরকারের চাপ মোকাবিলায় নানা তৎপরতা শুরু করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তারা দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন, জেলায় জেলায় আইনি সহায়তা সেল গঠন এবং বিভিন্ন দূতাবাসে স্মারকলিপি দেওয়াসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া সমমনা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবে হেফাজত।
রোববার হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আগামী ২৯ মে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সারা দেশের ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে সম্মেলনের আগে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল। তবে নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার বেড়ে যাওয়ায় শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়েও নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
হেফাজত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে হেফাজতের কমিটি রয়েছে। এর বাইরে সারা দেশে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করাসহ সংগঠনকে এগিয়ে নিতে ‘সাংগঠনিক সেল’ গঠিত হয়। এই সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয় যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসেনকে। তাদের মধ্যে ইসলামাবাদী বৈঠক শেষে বাড়ি ফেরার পর গ্রেফতার হন। শাখাওয়াতও ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়ে গেছেন।
জুনায়েদ আল হাবিব বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, সাংগঠনিক সেলের মাধ্যমে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সারা দেশের কমিটিগুলোর কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করা হবে। এ জন্য রোববারের সভায় তিনজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীদের মুক্তি ও মামলা পরিচালনার জন্য আইনি সহায়তা সেল গঠনের সিদ্ধান্ত হয় ওই সভায়। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় দুই থেকে তিন সদস্যের আইনি সহায়তা সেল গঠন করা হবে আইনজীবীদের নিয়ে। হেফাজতের কার্যক্রম, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
হেফাজত নেতারা জানান, আগামী ২৯ মে যে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাতে হেফাজতে ইসলামের বাইরে চরমোনাই পীর, ছারছিনার পীর, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতসহ সমমনা ইসলামি দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম, উপদেষ্টা মাওলানা আবুল কালাম, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মাহফুজুল হক, অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা জসিমউদ্দীন, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুনির হোসাইন কাসেমী, ঢাকা মহানগর সহ-সভাপতি মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, সহ-প্রচার সম্পাদক ফয়সাল আহমদ, সহ-অর্থ সম্পাদক মাওলানা জাকির হোসাইন কাসেমী, সহকারী সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা গাজী ইয়াকুব, ঢাকা মহানগর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা ফজলুর রহমান প্রমুখ।