সাম্প্রতি সময়ের কর্মকা’ণ্ডের জন্য হেফাজতকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পরতে হয়েছে। সারাদেশে নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিসহ একের পর এক হুংকার, সরকারী অফিস ভাংচুর, জ্বালাও একই সাথে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মা’ওলানা মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারি কারনে হেফাজতের ভাঙ্গন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত । হেফাজতের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছেন যে, আল্লামা শফীর মৃ’ত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের কর্তৃত্ব নেন।তিনি হেফাজতের আমীর নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু আমীর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি হেফাজতকে বিতর্কিত করেছেন, একটি রাজনৈতিক আবরণ দিয়েছেন। এখান থেকেই এখন হেফাজতের ভাঙ্গনের সূচনা হয়েছে। জানা গেছে যে, গত কয়েকদিনে আল্লামা শফীর পুত্র আনাস মাদানী নেতৃত্বে হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্বের অনেকেই বৈঠক করেছেন, তারা আলাপ আলোচনা করছেন। ঈদের আগেই হেফাজতের একটি নতুন অংশ আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
তবে মজার ব্যাপার হল যে, জুনায়েদ বাবুনগরী যখনই হেফাজতের আমীর নির্বাচিত হয়েছিলেন সেই সময়ে হেফাজতের প্রধান অংশ পুরোটাই ছিল জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর পক্ষে। সেই সময়ে আল্লামা শফীর পুত্র এত সংখ্যালঘু ছিলেন যে, তিনি আলাদা অবস্থান শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেননি। এমনকি যখন তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তখনও তিনি তার প্রতিবাদ করতে পারেননি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে দ্রুতই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। বিশেষ করে হেফাজতের একটি বড় অংশ মনে করছেন যে, সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে কওমী মাদরাসা সহ যে অর্জনগুলো হেফাজত করেছিল সেই অর্জনগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে আবাসিক কওমি মাদ্রাসাগুলো বন্ধের ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। আর এজন্য তারা দুষছেন জুনায়েদ বাবুনগরীকে। তারা মনে করছেন যে, যদি ভাস্কর্য বিরোধী এবং নরেন্দ্র মোদি বিরোধী আ’ন্দোলন না করা হতো তাহলে এই পরিস্থিতি হতো না। এখন হেফাজতের অনেক শিক্ষক এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মনে করছেন যে বর্তমান নেতৃত্ব যদি অব্যাহত থাকে তাহলে হেফাজতকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে এবং মাদ্রাসার যে সুযোগ-সুবিধা সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আর এই প্রেক্ষাপটেই হেফাজতের নতুন নেতৃত্বের মেরুকরণ হচ্ছে।
জানা গেছে যে, হেফাজতের জুনায়েদ বাবুনগরীর যে কমিটি আছে সেই কমিটির অন্তত ৬০ শতাংশ এখন আনাস মাদানীর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং তার প্রতি আনুগত্য দেখাচ্ছেন। একাধিক সূত্র বলছে, আনাস মাদানীর সঙ্গে সরকারের একটি অংশের বিশেষ স’ম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে সরকারের অনেকেই আল্লামা শফীকে পছন্দ করতেন, তাকে একজন আলেম হিসেবে মানতেন। কিন্তু জুনায়েদ বাবুনগরীকে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের ওই অংশ। যার ফলে জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে এখন কোন ধরনের আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতা করার পক্ষপাতী নয় সরকার। সরকার বরং আনাস মাদানীর নেতৃত্বে যদি হেফাজত হায়, তার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। আর এই প্রেক্ষাপটেই শক্ত একটা ভিত পেয়েছেন আনাস মাদানী। যারা আগে তাকে উপেক্ষা করেছিল, যারা তার নেতৃত্ব সেই সময় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তারাই এখন আনাস মাদানীর সঙ্গে নিজেরাই যোগাযোগ করছেন। তাদের যোগাযোগের কারণেই এখন নতুন একটি হেফাজতের জন্মগ্রহণ সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একাধিক সূত্র বলছে যে, আনাস মাদানী খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে হেফাজতের নতুন কমিটি গঠন করবেন যে কমিটিতে জুনায়েদ বাবুনগরী মামুনুল হকের মত বিতর্কিত ব্যক্তিরা থাকবেন না। আনাস মাদানী সকলকে বলছেন হেফাজতকে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে রাখতে হবে এবং অরাজনৈতিক পরিচয়ে হেফাজত শক্তিশালী হবে। যদি হেফাজতের কোন রাজনৈতিক আবরণ তৈরি হয়, তাহলে হেফাজতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই মতাদর্শ বিশ্বা’স করছেন হেফাজতের অনেকেই। যার ফলে খুব শিগগিরই হয়তো হেফাজতের ভাঙ্গন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং নতুন একটি হেফাজত দেখা যাবে।