আগামী পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘প্রতিহত’ করতে বিএনপির ডাকা গণতন্ত্রের অভিযাত্রার দ্বিতীয় দিনে ঢাকার প্রবেশ পথগুলেতে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঢাকার প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসিয়ে সাধারণ মানুষকে তল্লাশি করছে।
রবিবারের মতো সোমবারও ভোর থেকে বিএনপির কর্মসূচি প্রতিরোধে ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বহিনীর সদস্যরা। যেকোনো নাশকতা মোকাবেলায় তারা তৎপর রয়েছে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নেওয়ার কথা থাকলেও খুব সকালে তাদের কাউকে রাজপথে দেখা যায়নি। এমনকি গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় অংশ নিতে আসা ১৮ দলেরও কাউকে দেখা যায়নি।
গাবতলী: সেখানে দুরপাল্লার কোন যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করেনি। যানচলাচল একেবারে নেই কবললেই চলে। লোক সমাগম খুবই কম। জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে বেরিয়েছেন তাদের অধিকাংশ পায়ে হেটে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
আবদুল্লাহপুর: ঢাকার আরেক প্রবেশপথ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর। সেখানকার খবর নিয়ে জানা গেছে দুরপাল্লার কোন যানবাহন সেখানে প্রবেশ করেনি। ঢাকার এই ব্যস্ততম এলাকায় লোকসমাগম খুবই কম। তবে আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন যায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
এছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুর, মিরপুর ফার্মগেট, নিউমার্কেট, আজিমপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে লাঠি হাতে অবস্থান করছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ও ছত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সুলতানা রাজিয়া রোর্ডের একটি বাসায় আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর সদস্যরা গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে বিপুলসংখ্যক হাতবোমা উদ্ধার করেছে। সেখান থেকে তিনজনকে আটক করেছে তারা।
প্রেসক্লাব ও হাইকোর্ট এলাকায় অপ্রতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়ন করা হয়েছে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্কলা বাহিনীর সদস্য। হাইকোর্টের প্রবেশপথে চেকপোস্ট থাকায় কার্ড দেখিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে আইজীবীদের। রবিবারের সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া পল্টন মোড়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ফকিরাপোল, মতিঝিল এলাকায় ব্যাপকসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। সেখানে গণতন্ত্রের অভিযাত্রার সমর্থনে এখনও কাউকে চোখে পড়েনি। তবে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি প্রতিরোধে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শক্ত অবস্থানে নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এখান থেকে বিরোধী দলের কর্মসূচির প্রতিবাদে একটি লাঠিমিছিল করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন করেন বিরোধীনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ কর্মসূচির নাম দেন ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’।
কিন্তু রবিবার তিনি কার্যত অবরুদ্ধ থাকেন। বাড়ির বাইরে বের হবার চেষ্টা করলেও পুলিশের বাঁধায় তিনি বের হতে পারেন নি। পুলিশি বাঁধার কারণে তিনি নয়াপল্টনে যোগ না দিতে পারায় এবং সরকারের কঠোর অবস্থানে কর্মসূচি পণ্ড হওয়ায় আজ সোমবারও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন খালেদা জিয়।
এরপর সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহসভাপতি হাফিজউদ্দিন আহমেদ অনির্দিষ্টকালের জন্য গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দেন। এমন ঘোষণা দিয়ে প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়ার সময় তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।