সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবিদের বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা করে এক নারী আইনজীবীকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। এ সময় পাশে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
হামলার শিকার আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে।
রোববার বিকেল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন হামলা চালিয়ে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং প্রকাশ্যে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাংচুর চালায়। এ সময় তারা সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে থাকা একটি মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেয়। কিন্তু পুলিশ কাউকে বাধা দেয়নি।
এক পর্যায়ে রেহানা পারভীন নামের ওই নারী আইনজীবিকে জাতীয় পতাকার সাথে লাগানো লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা।
লাঠির আঘাতে রেহানা পারভীন তার বাম পায়ে আঘাত পান। তিনি বলেন, ”সরকারি দলের কর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটক খুলে ভেতরে ঢুকে আমাকে পিটিয়েছে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ১৮ দলীয় সমর্থক আইনজীবীরা সক্রিয় ছিলেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তারা ১৮ দলীয় জোটের মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসিতে অংশ নিতে সুপ্রিম কোর্ট এলাকা থেকে আইনজীবীরা মিছিল বের করলে জলকামান থেকে রঙিন পানি নিক্ষেপ করে পুলিশ।
এর পরও তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বের হওয়ার চেষ্টা চালালে দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। কয়েকবার পানি নিক্ষেপের গাড়িও বদল করতে হয়। বিরোধী দল ঘোষিত মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে অংশ নিতে শতাধিক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে সুপ্রিমকোর্টের মূল ফটক তালাবদ্ধ করে দেয় পুলিশ।
এ সময় আইনিজীবিরা প্রবেশ গেটে হাতে পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ জলকামান দিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তিনটি গাড়ি দিয়ে জলকামান নিক্ষেপ করা হলেও আইনজীবিরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এক পর্যায়ে দ্বিতীয় গেটে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার খোন্দকার মাহবুরের নেতৃত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, ব্যারিস্টার জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী ও ব্যরিস্টার শাজাহান ওমর। তারা বিরোধীদলের ওপর সরকারের দমনপীড়নের কঠোর সমালোচনা করেন।
এরপর দফায় দফায় আইনজীবিরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। বেলা ৩টার দিকে আবারো সংঘঠিত হয়ে আইনজীবীরা আদালতের প্রবেশ গেটে এসে হাতে পতাকা নিয়ে স্লোগান দেয়া শুরু করেন। পুলিশ কাউকেই বাইরে আসতে দেয়নি।
এ সময় হঠাৎ মিছিল নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা আইনজীবিদের ওপর চড়াও হয়। লাঠি সোটা ও হকিস্টিক হাতে তারা ধাওয়া করে আইনজীবীদের তাড়িয়ে দেয়। পরে সরকারি দলের ক্যাডাররা আবার সংগঠিত হয়ে দ্বিতীয় দফায় সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে প্রবেশ করে আইনজীবীদের ওপর হামলা করে। এ সময় ভয়ে আইনজীবিরা দ্বিতীয় তলায় উঠে যান।
পরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে প্রবেশ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী তারা সুপ্রিম কোর্টে ভাঙচুর চালায়। তারা আইনজীবি সমিতির একটি প্যান্ডেলেও আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বিতীয় তলার ছাদেও আগুন জ্বলতে দেখা যায়।