স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির আগে অধিদপ্তর তাদের কাছে কোনো নথি পাঠায়নি, কোনো প্রস্তাবও পাঠায়নি। তবে ওই হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। সেই দাওয়াতেই মন্ত্রী উপস্থিত হয়েছিলেন।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র গতকাল মঙ্গলবারও বলেছে, মন্ত্রণালয়কে জানিয়েই তারা চুক্তি করেছে, চুক্তির আগে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেই প্রমাণ তাদের কাছে আছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজ বুধবার মন্ত্রণালয়ের কাছে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধিদপ্তর ওই লোকটাকে (রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ) ওখানে এনেছে। কে এনেছে, কীভাবে এনেছে, জানি না। অধিদপ্তরই ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের শর্ত ঠিক করেছে। তারপর আমাদের দাওয়াত দিয়েছে। আমাদের তারা জানিয়েছে, “আপনারা থাকলে একটু ভালো হবে, প্রেস কভারেজ ভালো হবে।” তাই আমরা হাসিখুশিভাবেই চুক্তি করেছি। কিন্তু এর আগের কাজ তো অধিদপ্তর করেছে। হাসপাতাল পরিদর্শন করা তো তাদের কাজ। তারা সেটা করেছে কি না, সেটাই এখন দেখতে হবে। সেই দায় মন্ত্রণালয়ের না।’
আপনি চুক্তি পড়েননি? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা এমন কোনো কাজ না। আর মন্ত্রীরা এসব চুক্তি পড়তেও যান না। অজস্র চুক্তি হয়। চুক্তি সই তো তারা (অধিদপ্তর) করেছে। তাদেরই সবকিছু জানার কথা।’
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তৎকালীন সচিব কি আপনাকে কিছু জানাননি? ‘সেটা আমার মনে নেই। আমি শুধু জানি, আমি ওই লোককে (মো. সাহেদ) চিনি না। তবে চুক্তি করার আগে হাসপাতালে পরিদর্শন না করার দায় অধিদপ্তরকে নিতে হবে, এটা আমি জানি।’ বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজি যে সেদিন গণমাধ্যমে দেওয়া ব্যাখ্যায় বললেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে সব করেছে, তাহলে সেই নথি কোথায়? আমি এ ধরনের কোনো নথি পাইনি।’
গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেছেন, ডিজির অনুরোধে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির অনুষ্ঠানে তিনি গিয়েছিলেন।
যদিও গত রোববার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছুই জানে না। মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়নি, মন্ত্রণালয়ে কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি।’
ডিজি আবুল কালাম আজাদ গতকাল বলেন, ‘আমরা ব্যাখ্যাতেই সব জানাব। সেটা জমা দিলেই সব জানতে পারবেন।’
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের পরও মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে বলে তিনি মনে করেন না। হয়তো সাময়িক একটা ভুল–বোঝাবুঝি হতে পারে। আর সেটার জন্য কোনো স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে না।
জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী গতকাল বলেন, দুটি সংস্থাকে কিছু কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। একটা হলো জেকেজি। যদি অন্যায় কাজ করে থাকে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দায়ী। আরেকটি হলো, রিজেন্ট হাসপাতাল। সেই হাসপাতালকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে কিছু প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়া পালন করে অধিদপ্তর।
বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের বিষয়ে অভিযান চালানোর কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই অভিযান চালানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং একটি টাস্কফোর্স গঠন করে দেওয়া হচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করবে এবং যাচাই করবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান ও স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূরের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। বৈঠকে সচিবদের দেশের সব ক্লিনিক ও হাসপাতালে সাধারণ মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে তৎপর থাকার নির্দেশ দেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।