করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যে এনএইচএস এর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাতে আজ স্থানীয় সময় ১১.০০ ঘটিকায় এক ‘কার ৱ্যালি’র আয়োজন করে পূর্ব লন্ডনের মানবিক সংগঠন ‘গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট’। ‘থ্যাংক ইউ এনএইচএস’, ‘থ্যাংকস ইউ ডক্টর’, ‘থ্যাংক ইউ নার্স’, ‘উই আর রিয়েলি প্রাউড অব ইউ’ ইত্যাদি লেখা পতাকা, ব্যানার ও পোষ্টারে ছেয়ে ফেলা গাড়ি নিয়ে জানালা দিয়ে হাত নাড়িয়ে পূর্ব লন্ডন প্রদক্ষিণ করে ব্যতিক্রমী এক ‘কার ৱ্যালি’ তে মেতে উঠে মানবিক সংগঠন ‘গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট’।
‘গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট’ এর অফিসের সামনে থেকে এই ‘কারৱ্যালি’ শুরু হয়। তারপর সিডনী স্ট্রিট থেকে কমার্শিয়াল রোড – এডলার স্ট্রিট হয়ে হোয়াইট চ্যাপেলে রয়েল লন্ডন হাসপাতালের সামনে গিয়ে হুইসেল বাজিয়ে, হাত নেড়ে অভিবাদন জানিয়ে এনএইচএস কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে র্যা লি’টি মাইল এন্ড রোড হয়ে বো রোড – বো ফ্লাইওভার – পপলার – ইস্ট ইন্ডিয়া ডক রোড প্রদক্ষিণ শেষে কমার্শিয়াল রোডের ওয়াটনি মার্কেটে এসে শেষ হয়।
‘কার ৱ্যালি’ শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এ প্রসঙ্গে গ্লোবাল এইড ট্রাস্টের সিইও ড. আশরাফ মাহমুদ বলেন, এনএইচএস আমাদের গর্ব। করোনার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চলছে, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সেই যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন ফাইটার। এই ফাইটারদের উজ্জীবিত করতেই আমরা এই আয়োজন করেছি। একটা হিউম্যানিটেরিয়ান সংগঠন হিসাবে আমরা আরেকটা হিউম্যানিটেরিয়ান সংগঠনকে ধন্যবাদ জানাতেই আমরা এই আয়োজন করেছি। এই দু:সময়ে এনএইচএস কর্মীরা যা করেছেন এবং গত ৭২ বছর থেকে মানবতার সেবায় তারা যা করছেন- এর চাইতে বেশি কিছু তারা ডিজার্ভ করেন। তারাই সবার আগে রোগীর কাছে আসেন। আপন মমতায়-পরম যত্নে রোগীদের সেবা দেন। তাদের ঝুঁকিটাই সবচেয়ে বেশি। সারা বিশ্বেই তারা সম্মানিত। আমরাও তাদেরকে সন্মান জানাচ্ছি, ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরাও তাদের স্যালুট করছি এবং আজকে তাদের সন্মানে তাদের ধন্যবাদ জানাতে, কৃতজ্ঞতা জানাতে আমরা এই কার র্যা লি’র আয়োজন করেছি। সেই সাথে আমাদেরকে সুস্থ রাখতে গিয়ে যেসব এনএইচএস কর্মী জীবন উৎসর্গ করেছেন আমরা তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
গ্লোবাল এইড ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. জিয়াউল হক এনএইচএসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এনএইচএস ইংল্যান্ড জন্মলগ্ন থেকে স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষ অবদানসহ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের মাধ্যমে সারা বিশ্বে একটি প্রথম সারির স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট্রও জন্ম থেকে স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষ অবদান রাখছে। তার ভেতর অন্যতম হলো চোখের ছানি অপারেশন। প্রতি বছর গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট্র এর মাধ্যমে একটি বিশেষ টিম বাংলাদেশে গিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় গরীব রোগীদের চোখের চিকিৎসা এবং ছানি অপারেশন করে যাচ্ছে। এনএইচএস ইংল্যান্ড গত ৭২ বছর থেকে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবায় এক অনন্য অবদান রেখে যাচ্ছে। বিশেষ করে কভিড-১৯ মহামারিতে অনবদ্য অবদান রেখেছে। একজন ডাক্তার হিসাবে এনএইচএসের সাথে জড়িত থাকতে পেরে এবং কভিড-১৯ মোকাবেলায় অংশ নিতে পেরে আমি গর্ববোধ করি। এনএইচএস দীর্ঘজীবি হোক।
হাউস অব লর্ডসের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সদস্য ব্যারোনেস পলা মনজিলা উদ্দিন ও লন্ডন নিউহ্যাম কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ আজকের এই এনএইচএস থ্যাংক ইউ কার র্যা লিতে অংশ নেন এবং এনএইচকে ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে ‘কার র্যা লি’র আয়োজক গ্লোবাল এইড ট্রাস্টকেও এই আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
এ সময় ‘গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট’ এর ম্যানেজমেন্ট কমিটির মেম্বার শায়খ আবদুর রহমান মাদানী, শায়খ আবু সাইদ আনসারী, হাফেজ আবু তাহের ও গ্লোবাল এইড ট্রাস্টের ভলান্টিয়াগণসহ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পূর্ব লন্ডনের সর্বস্তরের মানুষ এই অভিনব ‘কার র্যা লি’ প্রত্যক্ষ করেন এবং হাত নেড়ে, হাততালি দিয়ে স্বাগত জানিয়ে ‘কার র্যা লি’ র সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯)-এর প্রার্দুভাবের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের কর্মহীন ও দুস্থ অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে পূর্ব লন্ডনের মানবিক সংগঠন ‘গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট’। গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শীত, আইলা, সিডর এবং অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি খাদ্য সামগ্রী, ঔষধ সরবরাহ, পানীয় জলের ব্যবস্থা, শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন সঙ্কটে মানুষকে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে খুব অল্প সময়েই কমিউনিটির মানুষের নজর কেড়েছে। গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট বিগত ১২ বছরে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষের সেবা দিয়ে আসছে।