আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারোল: লগ ডাউনের কারণে ব্রিটেনের প্রায় প্রিতিটি মসজিদ বন্ধ, মসজিদের গিয়ে জামাত থেকে সবাই বঞ্চিত,
আজ পবিত্র জুম্মাবার, ভাবতে অবাগ লাগে প্রায় নয় সপ্তাহ অর্থাৎ নয়টি জুম্মা চলে গেলো আমার প্রিয় ইস্ট লন্ডন মসজিদে এসে জুম্মার নামাজ পড়া হয়না! কত মিস করছি মসজিদ এ জামাতের সাথে নামাজ ও জুম্মা!! মসজিদ দুনিয়ার সবচেয়ে শান্তির জায়গা, সেই প্রিয় স্থান আল্লাহর ঘরে যেতে পারছি না বলে নিজের অজান্তে মনের ভিতরটা শিউরে উঠে !! আর কতদিন এ ভাবে মনে কষ্ট নিয়ে আল্লাহর এ রহমত থেকে বঞ্চিত থাকবো ? মুসলিম জাতি অপেক্ষায় আছে l
ইস্ট লন্ডন মসজিদের সাথে বিভিন্ন ভাবে আমরা জড়িত, আমার আব্বা একসময় মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, আমার ভাই বোনেরা মসজিদের মক্তবে লেখাপড়া করেছে, আমিও সেই ১৯৮৫ সালের ১২ জুলাই শুক্রবার ( নতুন ইস্ট লন্ডন মসজিদ উদ্ভোধন করেন কাবা শরীফের ঈমাম ) থেকে ভিবিন্ন ভাবে জড়িত মসজিদের একজন খাদিম হিসাবে l যদিও এই মসজিদের ইতিহাস অনেক দিনের পুরাতন, প্রায় একশত দশ বছর আগে ১৯১০ সালে কিছু উল্লেখযোগ্য মুসলিম ব্যক্তিত্ব লন্ডনে একটি মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং লন্ডন মসজিদ তহবিল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ সালের মধ্যে তহবিল একটি বিশাল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং ট্রাস্টের ডিক্লারেশন অফ ডিড করা হয়েছিল। প্রথম তিন দশকের জন্য, শুক্রবারের নামাজ এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য কক্ষগুলি ভাড়া করা হত। ১৯৪০ সালে তিনটি বাড়ি পূর্ব লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডে কেনা হয়েছিল এবং মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছিল। ১৯৪১ সালের ১লা আগস্ট শুক্রবার মসজিদ ওপেন করা হয় ; লন্ডন মসজিদ তহবিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান লেঃ কর্নেল স্যার হুসেন সোহরাওয়ার্দী নব প্রতিষ্ঠিত পূর্ব লন্ডন মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটিতে উপাসকদের স্বাগত জানিয়েছেন। প্রথম নামাজের নেতৃত্বে ছিলেন সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত মহামান্য শায়খ হাফিজ ওহাব।
এই মসজিদের মিম্বর থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সমসাময়িক আলোচনা ও খুৎবা পেশ করেন অনেক গুণীজন, সুবক্তা ও উঁচু মানের ইমামগণ, যাদের সুন্দর বক্তব্য শুনে আমার মতো অনেকেরই জীবন পরিবর্তন হয়েছে, সম্পর্ক হয়েছে মসজিদ, ইসলামী ব্যক্তিত্বদের সাথে ও ইসলামী প্রতিষ্টানের সাথে l মসজিদে গেলে মনে শান্তি মিলে, আল্লাহর হেদায়তের আশা থাকে, হারাম হালাল বুঝা ও বিভিন্ন গোনাহ থেকে মুক্তির পথ মিলে আল্লাহর রহমতে! কবে এ মসজিদের দরজা খুলে দেয়া হবে সাধারণ মুসল্লিদের জন্য ? মসজিদে গেলে বাবার বয়সি অনেক মুরব্বি, অনেক সাংবাদিক, বন্ধু বান্ধব এবং অনেক প্রিয়জনদের দেখা মিলতো, এদের দেখে মনের ভিতরটা জুড়িয়ে যেত কত আনন্দে ! অনেক দিন হয় তাদের দেখিনি, করিনি কুলাকুলি তাদের সাথে! দারুন করোনা বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে আমাদের, একে একে নিয়ে যাচ্ছে অনেক পরিচিত, আত্নীয়স্বজন ও অগ্রজদের, আমাদের করুনা করো মাবুদ!
আজ পবিত্র জুম্মাবার, মসজিদ বন্ধ, তবুও লগ ডাউনের আগের মতো গুছল করে পাঞ্জাবি পরে রেডি হয়ে নিজের ঘরের ভিতর পরিবার নিয়ে জোহরের নামাজ জামাতে আদায় করে প্রিয় মসজিদটি একবার দেখার জন্য ছুটে যাই, যদি ও পবিত্র জুম্মাবারের সেই সুন্দর পরিবেশ নেই, তারপর মসজিদের খতিব শেখ আব্দুল কাইয়ুম, শেখ মোহাম্মেদ, মসজিদের সিনিয়র স্টাফ আসাদুজামান, কয়েস, আবুল খায়ের, আল আমিন গং থেমে নেই, কাজ করছেন অবিরাম, এই মহামারী করোনা ভাইরাসের সময় বিভিন্ন সেবামূলক সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন আগের চেয়ে অনেক বেশি, ফুড ব্যাংক, NHS স্টাফদের ও অন্যান নিরীহ মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ, কাউন্সিলিং সহ অনেক বাড়তি সার্ভিস দিচ্ছেন তারা, শত শত মানুষ উপকৃত হচ্ছেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের সেবার মাধ্যমে l তাদেরকে আল্লাহ জাজা দান করুক l
আলহামদুলিল্লাহ, দীর্ঘদিন পর মসজিদের ভিতর ঢুকে তাদের দেখে অনেক ভালো লেগেছে, দু’রাখা নফল নামাজ আদায় করার পর তাদের সাথে কথা বলে অনেক শান্তি পেলাম, দীর্ঘ দিন বন্ধের সুযোগে মসজিদের ভিতরে অনেক কাজ ও মেরামত করা হচ্ছে, সেগুলো আসাদ ভাই আমাকে দেখালেন, অনেক পরিবর্তন হচ্ছে, ক্ষনিকের জন্য ফিরে গেলাম প্রিয় মসজিদের পুরোনো দিনের হাজারো স্মৃতিময় ইতিহাসে, আর ভাবছি কতদিন পরে খুলবে আমাদের রহমতের বাতিঘর….
হে আল্লাহ, তোমার রহমতের দরজা খুলে দিয়ে তোমার ঘরে গিয়ে তওবা করার সুযোগ দিন, তুলে নিন মহামারি করোনা ভাইরাস, ক্ষমা করুন আমাদের হে মহান দয়াময় প্রভু! ফিরে দিন আবার সেই সাধারণ জীবন যাপন, মুক্ত করুন সকল ধ্বংসের হাত থেকে । এই মহামারি থেকে সবাই কে হেফাজত করুন। আমিন।
London Bangla A Force for the community…
