জুবায়ের আহমেদ: নভেল কোরোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আতঙ্কে পুরো বিশ্ব আজ তটস্থ।যার নাম শুনেন নাই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর।চীনে প্রথম যখন কোরোনার আবির্ভাব হয় তখন থেকেই এটার প্রতিষেধক আবিস্কারে বিশ্বের বাঘা বাঘা মেডিকেল গবেষকরা কাজ করে আসছেন।রাত দিন কাজ করেও কোন কূল-কিনারা করতে পারছেন না তারা।মেডিকেল সাইন্সের সব অহংকারের প্রতি বৃদ্ধাংঙ্গুলি দেখিয়ে কোরোনা তার ত্রাস অব্যাহত রেখেছে।
এই ভাইরাস কে প্রতিরোধে শুধুমাত্র নিজেদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি কঠোর ভাবে মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা।নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি করে ফল,শাকসবজি খেতে বলছেন তারা।
মানবজাতির অদৃশ্য শত্রু কোরোনা ভাইরাস দাপটের সাথে বিস্তার করে বেরাচ্ছে এখন এশিয়া শুরু করে আফ্রিকার দেশে দেশে।পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী দেশ আমেরিকা,ব্রিটেন,ফ্রান্স,চীনসহ প্রতিটি দেশেরই বিখ্যাত সব মেডিকেল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতনামা সব ডাক্তারদের এই ভাইরাসের ধরন নির্ণয় করতেই বেগ পেতে হচ্ছে।কাজে আসছে না প্রযুক্তির কোন বড়াই ।
পৃথিবীর মানুষজন আজ ঘর হতে বেরুতে ভয় পায়। পরিচিত কাউকে দেখলে এখন আর হাত মেলানো বা আলিঙ্গন করার প্রতি উত্সাহী নন কেউও। নিরাপদ দূরত্বে থেকেই আলাপচারিতা সেরে নিচ্ছেন সবাই।উপাসনালয় গুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ফুটবল,ক্রিকেটসহ খেলাধুলার ইভেন্ট প্রত্যাহার করা হচ্ছে।মানুষ তার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো মজুদ করতে এখন তৎপর যদি দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। অনেকের অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করার কারণে অন্যান্যরা পরে বাজারে গিয়ে পাচ্ছেন না কোন কিছুই।এ সুযোগে বাজারের কৃত্রিম দর বাড়াচ্ছেন আবার আমাদেরই এশিয়ান স্টোরগুলোর লোভী কিছু ব্যাবসায়ী।সব মিলিয়ে টালমাটাল অবস্হা সব যায়গায়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাজেশন (হু) ইতিমধ্যে কোরানা (কোভিড-১৯) কে ঘোষণা করছে মহামারী হিসেবে।চীন নয় ইউরোপকে ঘোষণা করেছে করোনা ভাইরাসের কেন্দ্রস্হল হিসেবে।সাড়া ইউরোপ আজ অবরুদ্ধ।ব্রিটেন,ফ্রান্স, ইটালী,স্পেন,জার্মানী,পর্তুগালে রোগে আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।এখন পর্যন্ত এ রোগে মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজারেরও উপরে,আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ সত্তোর হাজারের উপর।আর ব্রিটেনেই এর মৃত সংখ্যা ৫৫জন। আক্রান্ত ১৫৪৩ জন। যদিও ধারণা করা হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারেরও উপর।
পৃথিবীর ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দু ইউরোপ আজ যেন মৃত্যপূরী,যার আকাশে দিনে হাজার হাজার বিমান উড়তো সে আকাশে আজ পাখিও যেন চলা নিষিদ্ধ।স্কুল,কলেজ,ইউনিভার্সিটি,শপিংমল, রেস্টুরেন্ট,সিনেমা সব কিছু বন্ধ। এক দেশ আরেক দেশের সঙ্গে বন্ধ করে দিচ্ছে বিমান,পর্যটন ভিসা সহ সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্হা।অধিকাংশ দেশেই তার জনগনকে ঘর হতে বেরুতে নিষেধ করছে।
চিরচেনা জীবনের রুটিন যেন পাল্টে যাচ্ছে অদৃশ্য এক শত্রুর কারনে।এ শত্রু কোন বিশাল বাহিনী নয় বা নয় অন্য গ্রহের শক্তিশালী কোন দৈত্য।এটা এমনি এক শক্র যাকে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, তাকে চিহ্নিত করতে সাহায্য নিতে হয় ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের। করোনা ভাইরাস দিন দিন তার জিন বদলের মাধ্যমে হয়ে ওঠছে আরো শক্তিশালী।চীনের উহান শহরে যখন কোরোনা আবিস্কার করা হয় তখন এতোটা আক্রমনাত্মক ছিল না যতটা সে এখন আছে। হয়তো বা ভবিষ্যতে আরো ভয়ংকর রুপ ধারণ করবে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, গতকাল (১৬ মার্চ) আমেরিকার একদল ডাক্তার এ কোভিড-১৯ রোগের ভেকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম কোন মানব দেহে প্রয়োগ করেছেন।এখন দেখার বিষয় এটা কতটুকু কার্যকরী হয়। যদি সেটা সফলও হয় তবে বাজারে আসতে সময় লাগবে আরো বছরেরও উপর।ততদিনে হয়তোবা দেখতে হবে বিশ্বজুড়ে কোরোনার আরো ভয়ংকর ছোবল।
জুবায়ের আহমেদ
লন্ডন
London Bangla A Force for the community…

