সৌদি আরবের রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন– বাদশাহ সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ ও ভাগনে মোহাম্মদ বিন নায়েফ।
এ সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর দিয়েছে। চাচাতো ভাই নায়েফকে সরিয়ে দেয়ার পর থেকে নিজের ক্ষমতা দৃঢ় করতে উঠেপড়ে লেগেছেন বাদশাহর ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
২০১৭ সালের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নায়েফকে সরিয়ে সিংহাসনের উত্তরসূরি হন সৌদি আররবের এই কার্যত শাসক। তখন ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত চাচাতো ভাইকে মক্কায় রাজকীয় প্রসাদের ভেতরে আটকে রেখেছিলেন যুবরাজ সালমান।
নিউইয়র্কের টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি জ্যেষ্ঠ যুবরাজরা গোপন ব্রিফিংয়ে বলেন– নায়েফকে বাদশাহ হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করতে তাকে ব্যথানাশক আসক্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।
সৌদি সরকার তখন দেখাতে চেয়েছে, এই চাচাতো ভাইদের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে কোনো ধরনের ক্ষোভ নেই। পথের কাঁটা নায়েফকে সরিয়ে দেয়ার পর থেকেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে বেশ কয়েক রাজপুত্রকে গ্রেফতার করেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
একটি সূত্র জানায়, শুক্রবারই আহমেদ বিন আবদুল আজিজ ও নায়েফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু কেন তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নিয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে জানা গেছে, শুক্রবার সকালেই রাজপরিবারের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভ্যুত্থানচেষ্টা সংশ্লিষ্ট ঘটনায়ই তাদের ধরা হয়েছে।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা সুসংহত করার ক্ষেত্রে শাসক রাজপরিবারের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত শাখায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে বিখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশ পরিচালনায় যুবরাজের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, ক্ষমতার ধারায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন রাজপরিবারের সদস্যরা। বাদশাহ সালমানের একমাত্র জীবিত ভাই প্রিন্স আহমেদকেই সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য পছন্দ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজপরিবার, নিরাপত্তা সংস্থা ও কিছু পশ্চিমা শক্তির সমর্থনও রয়েছে তার ওপর।
কিন্তু ৮৪ বছর বয়সী বাদশাহ জীবিত থাকাবস্থায় কার্যত শাসক যুবরাজের বিরোধিতা অসম্ভব বলেই মনে করছেন পশ্চিমা কূটনীতিকরা। আর বাদশাহ নিজেও কখনো তার প্রিয়পুত্রের বিরুদ্ধে যাবেন না।
নিজের শাসনের অধিকাংশ দায়িত্ব ছেলের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন বাদশাহ। কেবল মন্ত্রিসভার বৈঠকের সভাপতিত্ব ও বিদেশি অতিথিদের অভ্যর্থনার দায়িত্বই তিনি পালন করছেন।
বছর দুয়েকের মতো দেশের বাইরে থাকার পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে রিয়াদে ফেরেন প্রিন্স আহমেদ। এরপর তিনি নিম্নপদের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক র্যান্ড কর্পোরেশনের নীতিবিশ্লেষক বেকা ওয়াসের বলেন, যুবরাজ মোহাম্মদ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। তার উত্থানের ক্ষেত্রে সব হুমকি ইতিমধ্যে তিনি সরিয়ে দিয়েছেন। পাল্টা প্রতিক্রিয়া ছাড়াই তার সমালোচকদের হত্যা করছেন।
‘আর ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে এটা তার আরও বড় পদক্ষেপ। তাকে যাতে অতিক্রম করার চেষ্টা করা না হয়, রাজপরিবারের সদস্যদের তিনি সেই বার্তা দিতে চেয়েছেন নতুন এই ধরপাকড়ের মাধ্যমে,’ বললেন এই বিশ্লেষক।