সাত বছর আগে অনিক মাহমুদ হূদয়ের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের একসময়কার তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। বিয়ের পরের বছরই এ দম্পতির ঘর আলোকিত করে আসে এক পুত্রসন্তান। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভেঙে গেল সেই সংসার!
গত ২৬ জানুয়ারি স্বামী অনিককে তালাক দিয়েছেন শারমীন নাহিদ নূপুর ওরফে শাবনূর। নিজের সই করা নোটিশটি অ্যাডভোকেট কাওসার আহমেদের মাধ্যমে স্বামীকে পাঠিয়েছেন তিনি। নোটিশে অনিকের সঙ্গে ‘বনিবনা হয় না’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশের অনুলিপি অনিকের এলাকার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং কাজী অফিস বরাবরও পাঠানো হয়েছে। এই তালাক নোটিশে সাক্ষী রয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম ও শামীম আহম্মদ নামে দুজন। তালাক নোটিশের একটি অনুলিপি এসেছে।
শাবনূর বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে জানতে গতকাল মঙ্গলবার তাঁর অস্ট্রেলিয়ার ফোন নম্বরে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে সেখানে থাকা তাঁর ছোট বোন ঝুমুরের হোয়াটসঅ্যাপে শাবনূরের বক্তব্য জানতে চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়। তিনি বার্তাটি দেখলেও কোনো উত্তর দেননি।
বিষয়টি জানতে অনিকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে শুরুতে তিনি কল ধরেন। কিন্তু পরিচয় দেওয়ার পরই তিনি বলেন, ‘আমি এখন ওয়াশরুমে। পরে কথা বলব।’ পরে অনেকবার সেই নম্বরে কল করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।
তবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন তালাকের নোটিশ এবং হলফনামা প্রস্তুতকারী অ্যাডভোকেট কাওসার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘গত ২৬ জানুয়ারি অনিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করেছেন শাবনূর। গত ৪ ফেব্রুয়ারি অনিকের উত্তরা এবং গাজীপুরের বাসার ঠিকানায় সেই নোটিশ পাঠানো হয়।
উত্তরার নোটিশটি ফেরত এলেও গাজীপুরের ঠিকানায় পাঠানো নোটিশ এখনো ফেরত আসেনি। নোটিশটি অনিক গ্রহণ না করলে এর মধ্যেই ফেরত আসত। তবে আইনগতভাবে তাঁদের এই তালাক কার্যকর হবে ৯০ দিন পর।’
জানা গেছে, ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর অনিক মাহমুদ হূদয়ের সঙ্গে আংটি বদল করেন শাবনূর। এরপর ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তাঁরা। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর আইজান নিহান নামে এক পুত্রসন্তানের মা হন শাবনূর। পুত্রকে নিয়ে তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন।
তালাক নোটিশে শাবনূর বলেছেন, ‘আমার স্বামী অনিক মাহমুদ হৃদয় সন্তান এবং আমার যথাযথ যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন না। সে মাদকাসক্ত। অনেকবার মধ্যরাতে মদ্যপ অবস্থায় বাসায় এসে আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমাদের ছেলের জন্মের পর থেকে সে আমার কাছ থেকে দূরে সরে থাকছে এবং অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে আলাদা বসবাস করছে।
একজন মুসলিম স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর স্বামী যে ব্যবহার করেন অনিক সেটা করছেন না, উল্টো নানাভাবে আমাকে নির্যাতন করে। এসব কারণে আমার জীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। চেষ্টা করেও এসব থেকে তাকে ফেরাতে পারিনি। বরং আমার সন্তান এবং আমার ওপর নির্যাতন আরো বাড়তে থাকে। উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য মনে হয়ে তার সঙ্গে আমার আর বসবাস করা সম্ভব নয় এবং আমি কখনো সুখী হতে পারব না।
তাই নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং সুন্দর জীবনের জন্য তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছেদ করতে চাই। মুসলিম আইন এবং শরিয়ত মোতাবেক আমি তাকে তালাক দিতে চাই। আজ থেকে সে আমার বৈধ স্বামী নয়, আমিও তার বৈধ স্ত্রী নই।’
উল্লেখ্য, বছর তিনেক আগেও মিডিয়ায় শাবনূর-অনিকের ছাড়াছাড়ির গুঞ্জন ওঠে। সে সময় অনিক মিডিয়াকে বলেছিলেন এমন কিছু হয়নি। তাঁরা একসঙ্গেই আছেন, ভালো আছেন। কিন্তু অনিকের নতুন পাসপোর্টে এখন স্ত্রীর নামের জায়গায় আয়েশা আক্তারের নাম দেওয়া আছে।
জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর পেছনে চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ‘অতি-অন্তরঙ্গতা’কেও দায়ী করে সম্প্রতি আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে পিবিআই। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, সালমান শাহ্ খুন হননি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর আত্মহত্যার পেছনে রয়েছে পাঁচ কারণ। কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শাবনূরের সঙ্গে ‘অতি-অন্তরঙ্গতা’। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে শাবনূর দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।