ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / খালেদা জিয়া মুক্ত মানুষের মতো চিকিৎসা পাবেন না ঃ হাইকোর্ট

খালেদা জিয়া মুক্ত মানুষের মতো চিকিৎসা পাবেন না ঃ হাইকোর্ট

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়ে আদালত বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া একজন দণ্ডিত ব্যক্তি। সাধারণ মুক্ত মানুষ আদালত থেকে যে ধরনের সুবিধা পাবেন, দণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়া তার ইচ্ছে অনুযায়ী চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না। তাকে জেল কোড অনুসারে চিকিৎসা নিতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদেশে আরও বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) দেশের সেরা হাসপাতাল। সেখান থেকে মেডিকেল বোর্ড হাইকোর্টে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে ওই প্রতিবেদনের কোথাও উল্লেখ নাই যে তারা খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে সক্ষম নন। আমরা মনে করি- খালেদা জিয়া সম্মতি দিলে সেখানেই তার চিকিৎসা শুরু হতে পারে। উনি যদি সম্মতি দেন- তাহলে যেন তাঁকে চিকিৎসা দেয়া হয়। মেডিকেল বোর্ড মনে করলে অন্য কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে অন্তর্ভূক্ত করতে পারবে বলে আদেশে বলা হয়।’

আদালত আদেশে খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে যুক্তিতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি করা হয়েছে তার কোন সারবত্ত্বা নাই। এ কারণে জামিন আবেদনটি খারিজ করা হলো।’

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনে বলা হয়েছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জামিন পেলে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে চান। জামিন আবেদনে যুক্তিতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ্য এবং তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তার উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই জামিন পেলে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন। একইসঙ্গে খালেদার শারীরিক অবস্থা জানতে চেয়েও আবেদন করা হয়।

পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের (উন্নত চিকিৎসা) জন্য খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন কিনা, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কিনা এবং শুরু হলে বর্তমানে তার কী অবস্থা তা জানাতে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্যকে বুধবারের (২৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

ওই আদেশ অনুসারে বুধবার বিএসএমএমইউ থেকে সুপ্রিম কোর্টে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) আবেদনটি উপস্থাপনের পর আদালত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) এই আবেদনটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সগীর হোসেন লিয়ন।

এর আগে, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ মামলায় তার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তবে আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) যদি সম্মতি দেন, তাহলে বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী তার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। পরে তিনি আপিল করলে হাইকোর্টে দণ্ডের মেয়াদ বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।

২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অন্য তিন আসামিরও।

এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। পরে গত বছরের ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত ও সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।

এরপর গত ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরে ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া। এ আবেদনের শুনানির পর ১২ ডিসেম্বর সেটি খারিজ হয়ে যায়। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।