ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / করোনা ভাইরাস: বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি ১ ট্রিলিয়ন ডলার

করোনা ভাইরাস: বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি ১ ট্রিলিয়ন ডলার

বিশ্বায়ন-পরবর্তী যুগে বিশ্ববাসী সম্ভবত এবারই প্রথম সত্যিকারের বৈশ্বিক সংক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে। করোনা ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাবের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। খবর গালফ নিউজ।

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির সংক্রমণ দেখা দিয়েছে বিশ্বের প্রায় ৪৮টি দেশে। ইউরোপে সংক্রমণজনিত কারণে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে ইতালি। এরই মধ্যে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে দেশটির অর্থনীতির সমৃদ্ধশালী উত্তর অংশ।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলমান এ স্বাস্থ্য সংকটে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বৈশ্বিক জিডিপি। কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, উৎপাদন হ্রাস, সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য কমে যাওয়ায় এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরাও উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টক বেঞ্চমার্কে গত সোমবার ৩ শতাংশের বেশি পতন হয়েছে। একইভাবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির পর সবচেয়ে দ্রুত হারে কমছে এসঅ্যান্ডপি-৫০০ সূচক।

তবে ভাইরাসের সংক্রমণ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ক্ষতির মুখে ফেলবে না বলে এক ধরনের বাজি ধরছেন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ও সরকার। তারা মনে করছেন, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রশমিত হলে অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে। কিন্তু এরই মধ্যে তাদের এ আত্মবিশ্বাসও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব বলছে, ভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস পেয়ে শূন্য দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াবে। আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোবিন্দ ইয়াহু ফিন্যান্সকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মহামারী ঘোষণার ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি সত্যিকার অর্থে ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

এদিকে দীর্ঘসময় বন্ধ থাকা চীনা কারখানাগুলো উৎপাদনে ফিরবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু ভাইরাসের সংক্রমণে দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালির উত্তরাঞ্চলের শিল্প এলাকায় আরো মৃত্যু ও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ইতালির সংক্রমণ ইউরোপের বাকি অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। দেশটিতে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

ইউবিএস গ্রুপের এজি চেয়ারম্যান অ্যাক্সেল ওয়েবার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নেমে যাবে। উল্লেখ্য, চীনের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও এ সংকোচন ঘটবে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮০৩ জন নিহত হয়েছে। শুধুমাত্র চীনে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৭৪৭ জন। চীনের বাইরে নিহত হয়েছে ৫৬ জন। এর মধ্যে ইরানে ১৯, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২, ইটালিতে ১২, জাপান ৭, হংকং ও ফ্রান্স ২, ফিলিপাইন এবং তাইওয়ানে ১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছে ৪০ জন।

এ ভাইরাসে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৪৯৯ জন এবং চীনের বাইরে ৩ হাজার ৬৬৭ জন। সবমিলিয়ে পুরো বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ১৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৮ হাজার ৪৬৯ জনের অবস্থা আশঙ্কানক। এখন পর্যন্ত মোট ৩২ হাজার ৮১২ জন সুস্থ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, চীনে নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৩৫ জন এবং মারা গেছে ৩২ জন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৭৮ হাজার ৪৯৯ জন এবং মারা গেছে ২ হাজার ৭৪৭ জন।

হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান, সেখানাকার একটি জীবন্ত প্রাণী বিক্রির বাজার থেকে ভাইরাসটির উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন হুবেই প্রদেশকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ওই অঞ্চলের সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ আক্রান্তের খবর আসছে, তাতে আক্রান্তের আসল খবর জানা যাচ্ছে না।কারণ, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, শুধু তাদের হিসেব পরিসংখ্যানে ধরা হচ্ছে।তাই এর প্রকৃত হিসেব বের করা বা জানা খুবই কঠিন ব্যাপার, যা আরেকটি আশঙ্কার কারণ।

চীনের সবগুলো প্রদেশসহ বিশ্বের ৪৮টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। চীনের বাইরে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৬৭ জন শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে জাপানে ৮৭৭ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ হাজার ৫৯৫ জন।

ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীন ভ্রমণে সতর্কতা, নিষেধাজ্ঞা জারি এবং কড়াকড়ি আরোপ করেছে অনেক দেশ।ভারত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশ চীন থেকে আগত যাত্রীদের ভিসা বাতিল করেছে।ভাইরাসের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।চীনে অধিকাংশ বিমান সংস্থার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্সসহ আরও অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের চীন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে।

এছাড়া, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে (কোভিড-১৯) চীনে ৮ স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চীনে ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। রবিবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এ তথ্য জানিয়েছেন।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের সহকারী পরিচালক জেং ইজিন জানান, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে এরইমধ্যে ৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৩ হাজার জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। যা ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্ত রোগীদের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশে রয়েছে ২ হাজার ৫০২।

গত ডিসেম্বরে চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা।এখন পর্যন্ত চীনের বাইরে বিশ্বের ৪৮টি দেশে ৩ হাজার ৬৬৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুধু চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৪৯৯ জন।

যেসব দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে-

চীন- ৭৮ হাজার ৮০ জন, দক্ষিণ কোরিয়া- ১ হাজার ৫৯৫, জাপান- ৮৭৭, ইটালি- ৪৭০, ইরান- ১৩৯, সিঙ্গাপুর- ৯৩, হংকং- ৮৯, যুক্তরাষ্ট্র- ৬০, থাইল্যান্ড- ৪০, বাহরাইন-৩৩, তাইওয়ান- ৩২, জার্মানি- ২৭, কুয়েত- ২৬, অস্ট্রেলিয়া- ২৩, মালয়েশিয়া- ২২, ফ্রান্স- ১৮, ভিয়েতনাম- ১৬, স্পেন- ১৩, যুক্তরাজ্য- ১৩, আরব আমিরাত- ১৩, কানাডা- ১২, ম্যাকাও- ১০, ইরাক- ৫, ওমান- ৪, ফিলিপাইন- ৩, ক্রোয়েশিয়া-৩, ভারত- ৩, অস্ট্রিয়া- ২, ফিনল্যান্ড- ২, ইজরাইল- ২, লেবানন- ২, পাকিস্তান- ২, রাশিয়া- ২, সুইডেন- ২, আফগানিস্তান-১, আলজেরিয়া- ১, বেলজিয়াম- ১, ব্রাজিল- ১, কম্বোডিয়া- ১, মিশর- ১, জর্জিয়া- ১, গ্রীস- ১, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া- ১, নেপাল- ১, নরওয়ে- ১, রোমানিয়া- ১, শ্রীলঙ্কা- ১ ও সুইজারল্যান্ড- ১ জন।