আওয়ামী লীগের কাছে গুরুত্ব হারিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দলের তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আপাতত সাঈদ খোকনকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ডিএসসিসির মেয়র পদে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি সাঈদ খোকন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে মেয়র হিসেবে জয়লাভ করেছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তাপস যখন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তখনই সাঈদ খোকন আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এখন সবচেয়ে কঠিন সময়। সেই কঠিন সময় পার করতে না করতেই আবারও কঠিন সময়ে পড়লেন খোকন।
শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১০ আসনে সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করে ঢাকার মেয়র হন। তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন খোকন। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হয়েছেন দলের নজর কাড়তে। ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। খোকনের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এমন অবস্থা হওয়ার কারণ নিয়ে আছে নানা আলোচনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, সাঈদ খোকন রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ব নন। তা ছাড়া মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দলের ভাবমূর্তি তো বাড়াতে পারেননি, উল্টো বিতর্কিত করেছেন। ওই দুই নেতা বলেন, সাঈদ খোকনের ওপর দল যে আস্থা রেখেছিল, তা তিনি পূরণ করতে পারেননি। ফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বড় পরিসরে তাঁর ভূমিকা রাখার সুযোগ দেখা যাচ্ছে না।
ওই দুই নেতা বলেন, ২০১৫ সালে সাঈদ খোকন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পেছনে নিজের চেয়ে তাঁর প্রয়াত বাবার অবদানই বেশি কাজ করেছে। সাঈদ খোকনের বাবা ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ বড় রজনীতিক ছিলেন। দলের জন্য তাঁর আজীবন অবদান ছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন বাজি রেখে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) জীবন রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাবার কারণে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও নিজের উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি। নিজে রাজনীতিক হিসেবে দলে প্রভাব ফেলতে পারেননি। অন্যদিকে, ঢাকার জনগণও তাঁকে ভালোভাবে নেয়নি। ফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব পাওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। এই দুই নেতার মতে, সাঈদ খোকন যে সুযোগ পেয়েছিলেন, তা কাজে লাগাতে পারেননি।
যেদিন ঢাকা-১০ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কেনেন, সেদিন সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সফলতার সঙ্গে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এখন ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে আগ্রহী। তাই দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আশা করি, দল আমাকে সমর্থন দেবে।’ অবশ্য মনোনয়ন না পাওয়ার পর এ নিয়ে আর কথা বলতে চান না বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ একজন। কাল রাত থেকে ফোনও ধরছেন না তিনি।
ঢাকার মেয়র পদে নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর কেন আবার ঢাকা-১০ আসনের মনোনয়ন চাইলেন, তা বুঝতে পারছেন না আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই। তাঁরা বলছেন, ব্যবসায়ী নেতা শফিউল ইসলাম মনোনয়ন চাওয়ার পর সাঈদ খোকনের বোঝা উচিত ছিল শফিউল নিশ্চয়ই কোনো ইঙ্গিত পেয়েই নেমেছেন। কিন্তু তারপরও খোকন কেন, কার কথায় মনোনয়ন চেয়েছেন, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।
মেয়র পদে দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন না পাওয়ার পর সাঈদ খোকনকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়। আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মনে করেন, আপাতত সাঈদ খোকনকে দলের কাজে মনোযোগী হওয়া উচিত। বিভিন্ন কর্মসূচিতে থাকা উচিত। তাহলে একসময় আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। এই নেতার মতে, সাঈদ খোকনকে বুঝতে হবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বা সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়ার এই মুহূর্তে তাঁর (সাঈদ খোকন) ‘শর্টকাট’ কোনো পথ নেই।