বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের দুই মাস অবরোধের পর এবার সরকারি অবরোধের কবলে পড়েছে দেশ। আবারও দুর্ভোগে পড়েছে দেশের মানুষ। বিভিন্ন জেলার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজধানী। টিকিট সংকট দেখিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। কোথাও কোথাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও যান চলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে তারা বাধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ২৯ ডিসেম্বরের ঢাকা অভিমুখে যাত্রার দুদিন আগেই সরকার যানচলাচলে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
জেলাগুলোতে স্বাভাবিক যানচলাচলে বাধা দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। জেলার ভেতরের যান চলাচলে কেবল অনুমতি মিলছে। জেলার বাইরে কোনো গাড়ি বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
>বরিশাল :
বরিশাল-ঢাকা রুটের বাস চলচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বরিশাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. আফতাব হোসেন জানান, নাশকতার আশঙ্কায় মালিকপক্ষ নিজেরাই বরিশাল থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া ঘণকুয়াশার কারণে ফেরি চলাচলও বন্ধ রয়েছে। তিনি আরা জানান, বিগত দিনে হরতাল ও অবরোধের সময় বাস ও মানুষ পুড়িয়ে দেয়ার নজির স্থাপন করেছে বিএনপি। এজন্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। আগামী ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় বিরোধী দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনার আশংকায় বাস মালিকেরা নিজেরাই ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কবে নাগাদ বাস চলাচল সচল করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
অপরদিকে শুক্রবার সকাল থেকে ভোলা-লক্ষীপুর-ঢাকা রুটে ও ভোলা-বরিশাল রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ, স্পিডবোট, ইঞ্জিন নৌকা, বাস সি-ট্রাক, ফেরিসহ সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সকাল থেকে ভোলার ইলিশা ফেরি ঘাট, ভেদুরিয়া লঞ্চ ঘাট ও ফেরিঘাটে কয়েক হাজার দূরপাল্লার যাত্রী আটকা পড়েছে। দূর দূরান্ত থেকে আসা এসব যাত্রী সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি ঘাটে অপেক্ষা করছে। কেউ কেউ আবার বাড়ি ফিরে গেছে। ভোলা-লক্ষীপুর রুটের এমভি মাহিমা লঞ্চের মাস্টার জানান, সকালে পুলিশ ঘাটে গিয়ে তাদেরকে এ ঘাট থেকে আগামী দুদিন লঞ্চ না ছাড়ার জন্য নির্দেশ দেয়। তাই তারা লঞ্চ ছাড়তে পারছে না। এছাড়া সরকারি সি-ট্রাক ও ফেরিও চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ভোলা ইলিশা তদন্ত কেন্দ্রের উপ পরিদর্শক আবু সাইদ বলেন, লঞ্চ ছাড়তে পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে নিষেধ করা হয়নি। কেন তারা লঞ্চ-ফেরি চালাচ্ছে না তা তারা জানেন না।
পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা জেলা থেকেও কোনো গাড়ি ও লঞ্চ ছেড়ে আসছে না ঢাকার উদ্দেশ্যে।
>যশোর :
যশোর থেকে দেশের রাজধানী অভিমুখে যাত্রীবাহী পরিবহনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীরা পরিবহন কাউন্টারে এসে টিকিটের অভাবে ঢাকা যেতে পারছে না। দিন ও রাতের সব পরিবহনের টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানানো হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, বিরোধী দলের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বানচাল করার জন্যই পরিবহন মালিকদের পরিবহন না ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতির ভয়ে পরিবহন মালিকরা খুব কম পরিবহন ছাড়ছেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সরকার পরিবহন মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে পরিবহন ছাড়তে দিচ্ছে না। তাদের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি যাতে সফল না হয় তার জন্য টিকিট সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
যশোরের পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছে, যশোর থেকে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিনশ পরিবহন ঢাকায় যায়। এসব পরিবহনে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ রাজধানীতে যায়। গত তিন দিন ধরে এ রুটের প্রায় সব পরিবহনেই টিকিট হাওয়া হয়ে গেছে। ফলে অনেকে জরুরি কাজে রাজধানীতে যেতে পারছে না। পরিবহন টিকিট সংকট প্রসঙ্গে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জানান, ১৮ দলীয় জোটের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বানচাল করার জন্য সরকার পরিবহন চলতে দিচ্ছে না। যা দুএকটি চলছে তাতেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
>খুলনা :
কুয়াশার কথা বলে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সকল যান বন্ধ রয়েছে। কাউন্টার থেকে যাত্রীদের বলা হচ্ছে কুয়াশার কারণে বাস চলাচল ব্যহত হচ্ছে। তাই বাস যাচ্ছে না। বিভাগের অন্যান্য জেলা গুলো থেকেও ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়ি ছেড়ে আসছে না।
>রাজশাহী :
আগামী ২৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের ঢাকামুখী অভিযাত্রাকে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় রাজশাহী-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার পর থেকে থেকে ওই রুটের সব ধরণের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাজশাহী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও মটর শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রাজশাহী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনজুর রহমান পিটার জানান, নিরাপত্তার আশংকায় সকাল থেকে রাজশাহী-ঢাকা রুটের বিলাসবহুল যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্যগুলোও বন্ধের ব্যাপারে শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মালিকগ্রুপের বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কোনো বাধা নেই বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামাল হোসেন রবি জানান, ঢাকামুখী অভিযাত্রা যে কোনো মূল্যে সফল করার উদ্যোগ নিয়েছে ১৮ দল। একইভাবে তা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল।
এ নিয়ে নিরাপত্তার আশংকায় বৃস্পতিবার বিকাল থেকে শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলার সঙ্গে ঢাকার বাস যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালের পর থেকেই ঢাকামুখী সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন সুপারিনডেনডেন্ট আব্দুল করিম জানান, ঢাকাগামী আন্ত:নগর পদ্মা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময় বিকাল ৪টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে তা রাত ৮টায় রাজশাহী স্টেশন ছেড়ে যাবে। চার ঘন্টা বিলেম্বে চলছে ট্রেনটি। এছাড়া আন্ত:নগর ধুমকেতু ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিও সিডিউল বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে চলছে বলে জানান তিনি।
>রংপুর :
শুক্রবার দুপুর থেকে রংপুর বিভাগের ৫৬টি উপজেলায় দূরপাল্লার সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সড়ক-মহাসড়কে নাশকতার আশঙ্কায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন রংপুর বিভাগীয় সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন বাদল। এর ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন রংপুর থেকে ঢাকামুখী যাত্রীরা। শ্রমিক নেতা বাদল জানান, বাস চালকদের পুড়িয়ে হত্যা এবং গাড়ি ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ দাবিতে চালকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার চালক হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে পারলে ২৯ তারিখের পর চালকদের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এদিকে আকস্মিক এ যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় রংপুর বিভাগের হাজার হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েছে। রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোজাফ্ফর হোসেন জানান, সরকার ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বাতিল করার জন্য শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের দিয়ে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। তারা যে কোনো মূল্যে ঢাকার অভিমুখে রওয়ানা হবেন বলে জানান মোজাফফর।
>চট্রগ্রাম :
চট্রগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বিকালে বেশ কিছু গাড়ি ছেড়ে গেছে। তবে পরিবহন ও বিআরটিসি বাস চললেও রিজার্ভ করে কেউ গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছে না।