চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। এ কারণে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে সর্বাধিক জনসংখ্যার এ দেশটিতে। এর প্রাদুর্ভাবে চীনে এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে; আক্রান্ত হয়েছে আরও অন্তত ২০ হাজার মানুষ। সংক্রমণের শঙ্কায় বিভিন্ন দেশ তাদের চীনমুখী নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল করেছে। শুধু যাত্রী পরিবহনই নয়, পণ্য পরিবহনও স্থগিত হয়ে গেছে। আকাশপথের পাশাপাশি নৌপথেও চীনে যাতায়াত আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি যখন এতটাই উদ্বেগজনক, তখনো বাংলাদেশিদের উল্টোযাত্রা চলছে। উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতেও চীনে যাতায়াত করছেন এ দেশের অনেক মানুষ; বাংলাদেশ-চীন ফ্লাইট এখনো চলছে। ঢাকা থেকে সরাসরি চীনের গুয়াংজু ও কুনমিংয়ের ফ্লাইট আছে, যা এখনো অব্যাহত আছে। চায়না সাউদার্ন ও চায়না ইস্টার্নের প্রতিদিনের ফ্লাইট ছাড়াও বাংলাদেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলার প্রতিদিনের আপ-ডাউন ফ্লাইট এখনো চলছে। এ তিনটি সংস্থার বোয়িং ফ্লাইটে ১৬৪ যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। এসব ফ্লাইটে এখন প্রতিদিন আসনের ৩০ শতাংশ যাত্রী চীনে যাচ্ছেন এবং শতভাগ আসনে যাত্রী ফিরছেন। গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকিট বুকিং ও বোর্ডিং পাস পর্যালোচনা করে এ তথ্য মিলেছে। এর বাইরে কানেকটিং ফ্লাইট হিসেবে অন্য দেশ হয়ে চীন-বাংলাদেশ যাত্রী আসা-যাওয়াও অব্যাহত আছে।
ইমিগ্রেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এ মুহ‚র্তে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া চীনে যাওয়া সমীচীন নয়। নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনায় চীনে যাতায়াত নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের তরফে। এসব সতর্কতা ও সাবধান বাণী উপেক্ষা করে অনেক ব্যবসায়ী এখনো চীনে যাচ্ছেন।
এয়ারলাইন্স ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্বের কয়েকটি দেশে চীনের সঙ্গে আপাতত যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশে এখনো কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। তাই তাদের ফ্লাইট কার্যক্রম চলছে। তারা মনে করেন, শুধু সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করলেই হবে না। কানেকটিং ফ্লাইটেও যাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবার আগে দেখতে হবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ। আর এ স্বার্থরক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে সরকারকেই। সরকারের পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত প্রদান জরুরি। তবে শুধু দেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বন্ধ করলেই হবে না। সেক্ষেত্রে বরং চীনের এয়ারলাইন্সগুলো একচেটিয়া ব্যবসা পেয়ে টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেবে এবং যে উদ্দেশ্যে ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত, সে উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হবে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত এলে সব এয়ারলাইন্সই তাদের ফ্লাইট বন্ধ রাখতে বাধ্য। তবে গুয়াংজু নয়, মূলত উহান হচ্ছে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত শহর। তদুপরি কানেকটিং ফ্লাইটসহ দেশি-বিদেশি সব এয়ারলাইন্সের যাত্রা বাতিল করলে অবশ্যই সবাই তা মানতে বাধ্য। তবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে খতিয়ে দেখতে হবে, সে রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কিনা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বাংলাদেশ-চীন ফ্লাইট বা কানেকটিং ফ্লাইট বন্ধ করাটাই সমাধান নয়। যেসব মানুষ চীন থেকে বাংলাদেশে আসছেন, তাদের কোয়ারেনটাইনে যথাযথ ব্যবস্থা রাখাও বাঞ্ছনীয়।