টিআইবির সংবাদ সম্মেলনট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের হিসাব মতে, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের সংখ্যা কমপক্ষে আড়াই লাখ। এদের মধ্যে অধিকাংশই পর্যটন ভিসা নিয়ে দেশে এসে অনুমতি না নিয়েই অবৈধভাবে কাজ করছে। তাদের হাত ধরে দেশ থেকে প্রতিবছর পাচার হয়ে যাচ্ছে ২৬.৪ হাজার কোটি টাকা। কোটি কোটি টাকা পাচার হওয়ার পাশাপাশি বিদেশিরা অবৈধভাবে দেশে কাজ করায় রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণে কর হারাচ্ছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মাইডাস সেন্টারে টিআইবির এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ‘বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থান: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একটা সময় আমরা কৃষিনির্ভর দেশ ছিলাম। সেটা রূপান্তরিত হয়ে আজ শিল্প এবং সেবা খাতের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। যেটা আমাদের উন্নয়নের লক্ষণ। সময়ের সঙ্গে আমাদের বিনিয়োগও বেড়েছে। তবে তা আরও বেশি হতে পারতো। যেটুকু হয়েছে তা লক্ষ করার মতো। শিল্পের প্রয়োজনেই আমাদের এখানে বিদেশি জনবলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু নানা অনিয়মের কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।’
টিআইবির গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা ভিসা নিয়ে দেশে অবস্থান করে। তবে সবাই অনুমতি নিয়ে কাজ করে না। যারা অনুমতি ছাড়া কাজ করে, তারা মূলত পর্যটক ভিসা নিয়ে অবস্থান করে, যার মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন মাস। এক্ষেত্রে প্রতি তিন মাস পর পর তারা নিজ দেশে ফিরে যায়। আবার দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন করে পর্যটন ভিসা নিয়ে একই কাজে বা একই ধরনের কাজে যোগদান করে। বাংলাদেশ পর্যটন ভিসায় আসা পর্যটকদের ৫০-৭০ ভাগ কাজের উদ্দেশ্যে আসে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
গবেষণা কাজ ও প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মনজুর-ই-খোদা। তিনি জানান, ৪৪টির বেশি দেশ থেকে আসা বিদেশিরা বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কর্মরত। দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। রাজস্ব আয় যা হওয়ার কথা, সেটা আমরা ব্যাপকভাবে হারাচ্ছি। এতে যারা অনিয়ম করে কাজ করছে বা কাজ দিচ্ছে তাদের যেমন দায় আছে, একইভাবে যাদের মাধ্যমে পর্যটন ভিসা অল্প সময়ের মধ্যে একই ব্যক্তিকে দেওয়া হয়, তাদেরও দায় রয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ন্যূনতম হিসাবে আড়াই লাখ বিদেশি কর্মী বাংলাদেশে কর্মরত থাকলেও কর অঞ্চল-১১ এ কর দেওয়া বিদেশি কর্মীদের সংখ্যা মাত্র ৯ হাজার ৫০০ জন। বাকিদের আয়ের কোনও হিসাব নেই। এর মধ্যে যে ৯ হাজার ৫০০ জন কর দিচ্ছে তারাও আয়ের সঠিক তথ্য গোপন করছে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যারা রিটার্ন দিচ্ছে, তারাও মূল আয় গোপন করে অল্প পরিমাণ রিটার্নে ঘোষণা করছে। এতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ও নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি উভয়ই লাভবান হচ্ছে। তবে রাষ্ট্র রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
যে পরিমাণ রেমিট্যান্স বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসে তার তুলনায় বেশি পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন টিআইবির এ নির্বাহী পরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) শাহজাদা এম আকরামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।