ব্রেকিং নিউজ
Home / বাংলাদেশ / শরীয়ত বয়াতির মন্তব্য বাউল সংগীতকে ধ্বংস করবে: মাকসুদ

শরীয়ত বয়াতির মন্তব্য বাউল সংগীতকে ধ্বংস করবে: মাকসুদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাউল শিল্পী শরীয়ত সরকারকে। বিষয়টি নিয়ে লোকসংগীত শিল্পীদের অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকেও অনেকে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। অনেকেই আবার শরীয়ত বয়াতিকে গ্রেপ্তারের স্বপক্ষে মত প্রকাশ করছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ ব্যান্ডের দলপ্রধান ও ভোকালিস্ট মাকসুদুল হক মাকসুদের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শরীয়ত বয়াতি যে কথাগুলো বলেছেন, সে বিষয়ে একজন মানুষ প্রশ্ন করতে পারেন। কিন্তু এসবের সঙ্গে বাউল গানের কোনো সম্পর্ক নেই। গান-বাজনা হারাম এটি পবিত্র কোরআনের কথা নয়। এটি কোনো গানেরও কথা নয়। এটি ব্যক্তিগত কথা। শরীয়ত বয়াতি ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। এজন্য কেউ যদি মামলা করেন তবে আমাদের বলার কিছু নেই। তার এই কথাগুলো যদি বাউল গানে থাকত তবে অবশ্যই আমরা প্রতিবাদ করতাম।’

শরীয়ত বয়াতির বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে অন্তর্জালে। সেখানে ৫০ লাখ টাকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে দেখা যায় তাকে। এ প্রসঙ্গে মাকসুদ বলেন, ‘‘শরীয়ত বয়াতি তার বক্তব্যে জুয়ার বিষয় জুড়ে দিয়ে বলেছেন- ‘আমি ৫০ লাখ টাকার চ্যালেঞ্জ দিলাম।’ এখন প্রশ্ন হলো তার কাছে কি ৫০ লাখ টাকা আছে? যদি থাকে তবে এই টাকা তিনি কোথা থেকে পেলেন? এই যে কথাটি তিনি বললেন- এই কথা কি টাকা তাকে দিয়ে বলাচ্ছে নাকি তিনি নিজেই বলছেন? বাউল সাধনা কি টাকা নিয়ে ছোড়াছুড়ির বিষয়? শরীয়ত বয়াতির এই বিষয় আমার কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে জানান, নির্দিষ্ট অপরাধের ভিত্তিতে শরীয়ত বয়াতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে মাকসুদ বলেন, ‘আমার গুরু এ বিষয়ে একদম নীরব থাকতে বলেছেন। কারণ এটা বাউল গানের কোনো বিষয় না। এটা শরীয়ত বয়াতির ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তিগত কারণে এই মামলা হয়েছে। আমি সংগীতশিল্পী বলেই অন‌্যায় করে পার পেয়ে যাব- এটা হতে পারে না। এর সঙ্গে বাউল গানের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা ক্রাইম।’

শরীয়ত বয়াতির এই ধরনের মন্তব্য বাউল সংগীতকে ধ্বংস করছে। এতে দুই হাজার বছরের পুরোনো বাউল সংগীত নিয়ে বিরূপ একটি ধারণা তৈরি হচ্ছে। এটা বাউল সংগীতকে ধ্বংস করার একটা চক্রান্ত বলেও মনে করেন মাকসুদ।

এদিকে কুষ্টিয়া লালন একাডেমির খাদেম মুহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান। বিস্তারিত বলার পর মাকসুদের সঙ্গে কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন তিনি। মুহাম্মদ আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ধর্ম ও নবীকে নিয়ে যদি শরীয়ত বাউল কটূক্তি করে থাকেন তবে তিনি জেনেশুনেই করেছেন। তবু বাউলকে গ্রেপ্তারের আগে বিষয়টি আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল।’

এদিকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকে শরীয়ত বয়াতির মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ হয়েছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এ দাবি কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাকসুদ বলেন, ‘প্রতিবাদ যেকোনো লোক করতে পারেন। কিন্তু প্রতিবাদেরও একটা কারণ থাকে। বাউল গান নিয়ে, লালন সাঁইজিকে নিয়ে যদি কোনো মামলা হতো তবে অবশ্যই তার প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু যে ঘটনা ঘটেছে সেটা শরীয়ত বয়াতির ব্যক্তিগত কথা নিয়ে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা সাধুসঙ্গে হয়, জনসম্মুখে নয়। বাউলদের একটা নিয়ম-নীতির মধ্যে থাকতে হয়। বাউল বলেই যা খুশি তাই করতে পারি না। কারণ আমাদের গুরুকুল আছে।’

অনেকে বলছেন, ‘ওয়াজে এর চেয়েও বেশি খারাপ কথা বলা হয়।’ মানলাম, ওয়াজে এর চেয়ে খারাপ কথা বলা হয়। কিন্তু এটাও তো খারাপ।’ মাকসুদ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘ওয়াজে খারাপ ভাষা প্রয়োগ হয় বলেই কি বাউলদেরও খারাপ ভাষা প্রয়োগ করতে হবে?’

অন্যদিকে ‘লালন কন্যা’খ্যাত সংগীতশিল্পী বিউটি বলেন, ‘একজন শিল্পী হিসেবে বলব, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে পর্যবেক্ষণ করে তারপর যেন পদক্ষেপ নেন। আর শরীয়ত বয়াতি আবার গানে ফিরে আসুক এটা কামনা করি।’

সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক অনুষ্ঠানে গানের আগে দেয়া বক্তব্যে শরীয়ত সরকার ইসলাম ধর্ম ও নবীকে নিয়ে কটূক্তি করেন। এমন অভিযোগে এলাকায় বিক্ষোভ হয় এবং স্থানীয় এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।