সপ্তাহ খানেক আগে সারা দেশে চিরুণী অভিযান (কম্বিং অপারেশন) শুরু করলেও বুধবার রাত থেকে যৌথ বাহিনী অভিযানে নেমেছে রাজধানীতে।
বোমা বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা করার পর যৌথ বাহিনীর এই অভিযান শুরু হয়।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির কর্মকর্তাদের এ অভিযানে শতাধিক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।
এদের মধ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে ৩৭ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে ধানমন্ডির জিগাতলা থেকে রুবেল হোসেন নামের এক ছাত্রদলের কর্মীকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। রুবেল জিগাতলার নতুন কাঁচাবাজার এলাকার ৪১/২৩-৩ নম্বর বাসায় থাকেন।
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বুধবার গভীর রাতে একটি মেসে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করেছে। তারা সবাই ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে দাবি পুলিশের। আটককৃতরা হলেন- মোস্তফা কামাল, মুকুল হোসেন, জুলহাস ও রাজু শেখ।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে আরো ২০ জন আটকের খবর পাওয়া গেছে।
গাজীপুর থেকে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে দেড় শতাধিক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। এদের বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী। জেলার ছয়টি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে।
মেহেরপুর মুজিবনগরে বাগোয়ান ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সরদার আলীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে নিজ গ্রাম সোনাপুর বাজার থেকে পুলিশ তাকে আটক করে।
জয়পুরহাটে পৃথক অভিযান চালিয়ে জেলার চারটি উপজেলা থেকে ১৮ দলের ১৫ কর্মী-সমর্থককে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত অভিযানে নেতৃত্বে দেন পুলিশ সুপার হামিদুল আলম।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ অভিযানে জেলার জয়পুরহাট সদর উপজেলা থেকে ৫ জন, পাঁচবিবি থেকে ৪ জন, কালাই থেকে ২ জন ও আক্কেলপুর উপজেলা থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতরা বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের কমী-সমর্থক। এরা ১৮ দলের হরতাল ও অবরোধ চলাকালে জেলায় জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষ, রেল লাইন উৎপাটন, গাড়ি-বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপসহ বিভিন্ন নাশকতার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি পুলিশের।
যশোরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের বেশিরভাগই বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের কর্মী-সমর্থক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রংপুরে বুধবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী বিরোধী জোটের ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার বিভিন্নস্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বিএনপি অধ্যুষিত সয়দাবাদ ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী ২৩ জনকে আটক করেছে। বিজিবির প্লাটুন কমান্ডার মেজর আরিফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন, র্যা ব-১২ ক্যাম্প কমান্ডার এএসপি অশোক কুমার পালের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক র্যা ব-বিজিবি-পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সকাল ১০টা থেকে এ অভিযান পরিচালনা করেন।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সয়দাবাদ, মুলিবাড়ী ও মোহনপুরসহ কয়েকটি গ্রামে আভিযান চালিয়ে এদের আটক করা হয়।
আটককৃতদের বিরুদ্ধে মহাসড়কের যানবাহন ভাঙচুর, নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে আটক করেছে। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- মহেশপুর উপজেলার খোর্দ্দখালিশপুর গ্রামের রওশন আলী (৪০), একই গ্রামের আলি মোস্তফা (৩০), শান্তি মন্ডল (৪০), ও আলমগীর হোসেন (২২)।
হাল-খালিশপুর গ্রামের আসাদুল ইসলাম (১৬), রাজু আহমেদ (১৫), শামসুদ্দিন (৪২), আব্দুস সাত্তার (৪০), দোলনসহ ১৫ জন।
ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, জেলার মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী ১৫ জনকে আটক করে।
গতরাতে টাঙ্গাইল মডেল থানা পুলিশ বিএনপির ৫ কর্মীকে আটক করেছে। টাঙ্গাইল মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, নাশকতার সৃষ্টি পায়তারার জন্য তাদের গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এছাড়া টাঙ্গাইলে ১৮ দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের পৌর উদ্যান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়।
পুলিশের বাধার মুখে পৌর উদ্যানের সামনে এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল ও জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক একেএম মনিরুল হক মনির প্রমুখ।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল বা বাধাগ্রস্ত করার মতো যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত অভিযান চলবে।