ব্রেকিং নিউজ
Home / নির্বাচিত কলাম / গণ-আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থান: ১৯ কারণে সফলতার দ্বারপ্রান্তে

গণ-আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থান: ১৯ কারণে সফলতার দ্বারপ্রান্তে

ড. এম মুজিবুর রহমান:

৫ জানুয়ারির নিবাচন যাকে দেশের অধিকাংশ জনগণের পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও প্রহসন ও তামাশার নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন। ঐ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে দেশের ল-মেকার হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন নির্বাচন না করেই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদকে করা হয়েছে হাস্যস্পদ আর দেশের মানুষের ভোটের মৌলিক অধিকার থেকে করা হয়েছে বঞ্চিত। বিগত ছয় বছরের কেবলমাত্র দুর্নীতি, লুটপাট, অপশাসনই নয়,গত এক বছরের লাগামহীন দূর্নীতির দৌরাত্ব ছাড়াও ৫ জানুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচন নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেশে চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা সহজেই প্রমান করা সম্ভব।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি গণফোরাম সভাপতি ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্র আজ অমানবিক হয়ে গেছে, এখন যারা রাষ্ট্রের দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের মন ও কানের চিকিৎসা করানো জরুরি হয়ে পড়েছে’। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পছন্দমত প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ ছিনিয়ে বর্তমান সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে’।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, ‘সাংবিধানিকভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হবে। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের অনুসারী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাতে ১৫৩টি আসনে প্রত্যক্ষ কোনো নির্বাচন হয়নি। এ ধরনের নির্বাচন ইতিহাসে নজিরবিহীন। দেশের মানুষ এ নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে বলে আমি মনে করি না।’ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এখন হানাহানি শুরু হয়েছে। এই হানাহানি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় মধ্যবর্তী নির্বাচন।’

৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে বিশিষ্ট টিভি ব্যাক্তিত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড.আসিফ নজরুল গত সপ্তাহে বাংলা ভিশন টক্ শোতে বলেছেন ৫ জানুয়ারীতে এমন একটা নির্বাচন হয়েছিল যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এরকম অদ্ভূত, অচিন্তনীয়, হাস্যকর ও প্রহসনমূলক নির্বাচন সারা পৃথিবীতে গণতন্ত্র উন্মেষ হওয়ার পর থেকে কোনদিন হয় নাই। এমন নির্বাচন যেখানে ভোট হয় নাই, একটা লোকও ভোট দেয় নাই, ভোটের দিনও আসে নাই। এর পরেও ১৫৩ জন জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে গেলন। ভোটের আগেই সরকার গঠনের মত প্রয়োজনীয় সংসদ সদস্যকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হল। নির্বাচনের পূর্বেই নির্বাচন শেষ! এর পরেও বাকি যেটুকু নির্বাচনের অভিনয় হয়েছে, সেখানে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। মিডিয়াতে পরিস্কারভাবে দেখা গেছে কিভাবে ব্যালট পেপারে স্ট্যাম্প মারা হয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিভাবে নানান কিসিমের কারচুপি করা হয়।

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন শুধু অগ্রহনযোগ্য ও প্রশ্নবিদ্ধই নয় অনেক দিক থেকে অবৈধও ছিল। নির্বাচনটি তখন সর্বদলীয় সরকারের অধীনে হয়েছিল বিধায় জাতীয় পার্টির যেসকল মন্ত্রী ছিলেন তারা পদত্যাগ করেছিল কিন্তু তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ হয় নাই। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহন থেকেও বিরত ছিল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বলেছিলেন তারা নির্বাচনে নাই। নির্বাচন থেকে তাদের প্রার্থীতাও প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এমনকি নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে প্রতীক বরাদ্দ না করতেও বলেছিলন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের উইথড্রয়াল গ্রহণ করে নাই। পার্টি প্রধানের চিঠি অগ্রাহ্য করে নির্বাচন কমিশন অবৈধ কাজ করেছিল। মনোনয়নের প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর যারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বিনা নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার দেখানো হয়েছে। এরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে নির্বাচন কমিশন ঐ দিন যা করেছে এটা পুরোপুরি অবৈধ ছিল।

অবৈধ সরকারে যারা রয়েছেন তারা বলেছিলেন ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। ৫ জানুয়ারীর পর বিএনপি অনেকগুলো বড় বড় সমাবেশ করেছে যার একটিতেও সহিংসতা হয় নাই। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে যেখানে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের বাইরে ছিল, সেই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল সরকারী কর্মকর্তাকে ঐ সময়কার সরকারের আদেশ অমান্য করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রকারান্তরে বিএনপি দেশের আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে সরকারী ডিএমপি কর্মকর্তার কাছে চিঠি লিখে এবং প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল। ডিএমপি কর্মকর্তা বিএনপি প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা পর্যন্ত করে নাই। এতটুকু ছাড় দেয়ার পরেও বিএনপিকে একটা সমাবেশ করতে দেয়া হয় নাই।

আওয়ামী লীগ বাইরে যতই হম্বি তম্বি দেখাক না কেনো আসলে এরা বিএনপিকে আর বিশেষ করে এই দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে প্রচন্ডভাবে ভয় পায়।

বর্তমানে তাদের মধ্যে জনগণ ভীতিও কাজ করছে প্রচন্ডভাবে। এটা আরো পরিস্কারভাবে ধরা পড়েছে কিছু দিন পূর্বে যখন শিশু জিহাদ নিখোজ হলে উল্টো তার পিতাকে পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। প্রশাসন মনে করেছিল শিশু জিহাদকে উদ্ধারের দাবিতে সাধারণ জনতা বিক্ষোভ দেখাতে পারে। আর সাধারণ জনতা জমায়েত হলেই সরকারের বুকে কাপন ধরে যায়। কারণ জনগনের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে এদের ‘চোরের মনে পুলিশ পুলিশ’ ভয় ঢুকেছে ।

বর্তমান অবৈধ সরকার কর্তৃক বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পূর্ব নির্ধারিত ২৭ ডিসেম্বরের গাজীপুরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিকভাবে নিষিদ্ধ করা স্বত্বেও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৩১ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে একটি অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা সহ সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ৭ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন। ৭ দফা প্রস্তাবনার সাথে তিনি পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেন যে বর্তমান সরকার একটা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় অধিষ্টিত থাকলেও দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্টানিক রূপ দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগকে সংলাপ শুরুর আহ্বান জানান।

কিন্তু জবরদখলকারীরা বেগম খালেদা জিয়ার আহবানে সাড়া না দিয়ে বরং ক্ষমতাসীনদের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দাম্ভিকতার সাথে ২০১৯ সালের নির্বাচনের কথা স্মরণ করানোর পাশাপশি অনেকে আবার কেয়ামত পর্যন্ত সংলাপ হবে না বলে জানিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিতে থাকেন। দেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় ও সাধারণ জনগনের যান মালের নিরাপত্তার স্বার্থে খালেদা জিয়ার শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল প্রস্তাবনাকে দূর্বলতা হিসেবে উপস্থাপন করতে দেখা যায়। সর্বশেষ ৫ জনুয়ারী উপলক্ষে বিএনপি শুধু একটা সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিশ্বজিতসহ অসংখ্য খুন গুম, টেন্ডারবাজি ও ছিনতাইয়ের সাথে সম্পৃক্ত এবং আওয়ামী সাংবাদিক গাফফার চৌধুরীর ভাষায় ডাকাতদের সংগঠন ছাত্রলীগ ঘোষণা দেয় যে বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের কোথাও সভা করতে দিবে না।

তাই সমাবেশের অনুমতি দেয়া দুরের কথা উল্টো বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে তার গুলশান অফিসে গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ঢাকার সভায় বলেন যে খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ নয়, তার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশী নিরাপত্তা নিয়ে তিনি সারা দেশ সফর করতে পারলেও খালেদা জিয়াকে তার অফিসে অন্তরীণ রেখে এ কোন ধরণের নিরাপত্তা। গ্রাম্য মাস্তানের মত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বালু আর ময়লা আবর্জনার ট্রাক দিয়ে আটকাতে পারে তা কল্পনারও অতীত। এটা স্রেফ প্রতিহিংসা বা মানসিক বিকারগ্রস্ত কাজ বৈ কিছু নয়। সারা দেশ বাসীর চোখের সামনের ঘটনাকে যারা নির্লজ্জ মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে চায় তাদের পক্ষে কি করা সম্ভব নয় এটা জাতি ভালো করে বুঝে ফেলেছে।

তাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র আজ বালু আর ময়লার ট্রাকে বন্দী। দুর্নীতি,দু:শাসন, জুলুম নির্যাতনে মানুষ অসহায়। পিপার স্প্রে প্রয়োগের আইনী বৈধতা নিয়ে হাই কোর্টের রুল থাকা স্বত্বেও অমানবিকভাবে অবরুদ্ধ অবস্থায় একেবারে কাছে থেকে সুনির্দিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপর বিষাক্ত রাসায়নিক কেমিক্যাল পিপার স্প্রে প্রয়োগ করার ঘঠনা জাতি মিডিয়ার কল্যানে দেখেছে। যার ফলে নেতা কর্মীর সাথে খবর সংগ্রহ করতে আসা সাংবাদিকসহ বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে দেশের সচেতন মহল এর তীব্র নিন্দা করেছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নিষিদ্ধ পিপার স্প্রে প্রয়োগের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিচারেরও দাবি উঠছে। বিষয়টি আগামীতে দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে।

এদিকে আবার দেশের সকল পত্রিকা, ইলেট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রকাশ, প্রচার, সম্প্রচার, পুন:উৎপাদন না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তথ্য সচিবের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অথচ সেনাবাহিনী সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে শেখ হাসিনা জামিন না নিয়েই বেদেশে পাড়ি জমান এবং ফেরারী আসামী হিসাবেই বিদেশে থেকে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা দেশের পত্র পত্রিকায় প্রকাশও হয়েছিল। এমনকি একটা মামলায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকাকালীন অবস্থায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথও নিয়েছিলেন। যা ঐ সময় সাংবাদিক ওয়ালিউল্লাহ নোমানের রিপোর্ট থেকে দেশবাসী জানতে পারে। কিন্তু তারেক রহমান সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য বৃটেনে এসেছিলেন। ফেরারী হিসাবে পালিয়ে আসেননি। তারেক রহমান সরকারের অনুমোদনে প্যারোলেও আসেননি। সুপ্রিমকোর্ট থেকে সকল মামলায় জামিনের পাশাপাশি বিদেশে তাঁর চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশনা ছিল। এই নির্দেশনার আলোকেই তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাঁর চিকিৎসা এখনো চলছে। সুতরাং তারেক রহমানকে আইন অনুযায়ী ফেরারী বলার কোন সুযোগ নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে পরিকল্পিতভাবে কারচুপি করে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তিকে ক্ষমতার বাইরে রাখার অভিযোগ করলেও চানক্যবাদের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে বেগম জিয়া আবেগধর্মী ও দেশের স্বার্থ বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করে বিক্ষুব্ধ জাতিকে সুচিন্তিতভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন । এমনকি ৫ জানুয়ারীর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম প্রহসনের নির্বাচনের পরেও পরোক্ষভাবে সংবিধান রক্ষার নির্বাচন মেনে নিয়ে অবৈধ সরকারকে এক বৎসর সময় দেন যাতে তারা সকলের অংশগ্রহনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্নের মাধ্যমে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়। যে কারণে সম্প্রসারণবাদের উপর্যপুরী উস্কানি স্বত্বেও তাদের ফাদে পা না দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছেন। যার সর্বশেষ প্রচেষ্টা হচ্ছে বেগম জিয়া কর্তৃক ৭ দফা প্রস্তাবনা। ইতিহাসে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে কখনো দেশের মানুষকে জিম্মি করে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণয়ন করতে দেখা যায় নি। কিন্তু সম্প্রসারনবাদের স্বার্থ রক্ষাকারী দেশের স্বার্থবিরোধী অবৈধ ক্ষমতাসীনরা হাঠছেন উল্টোপথে।

এরপরে বাধ্য হয়েই দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। গুলশান কার্যালয় থেকে অবরুদ্ধ অবস্থায় দেশবাসীকে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার পরদিন ৪ জানুয়ারী লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশের মানুষসহ সারা বিশ্ব দেখলো ‘বেটার বাংলাদেশ’ গড়ার দৃপ্ত শপথে চলমান আন্দোলনের এক পাঞ্জেরী হিসেবে । তারেক রহমানের সর্বাত্বক আন্দোলনের আহ্বানের সাথে যুক্ত হলো স্বৈরাচার পতনের পর কেমন হবে নতুন বাংলাদেশ। নতুন প্রজন্মকে আন্দোলনে শরিক হবার পাশাপাশি তাদের জন্য অনাগত বাংলাদেশের চিত্রও তুলে ধরেন। তাই আন্দোলনে যোগ হয় নতুন উদ্দীপনা, নতুন মাত্রা। এর পরেই শুরু হয় এক দফার আন্দোলন। আন্দোলনকে সফল করতে হবে। এ আন্দোলন থেমে গেলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই নিজে বাঁচতে, পরিবার বাঁচাতে, দেশ বাঁচাতে, জনগণ ও গণতন্ত্র বাঁচাতে চলমান এই আন্দোলনের বিকল্প নেই। এই আন্দোলন কোনো দলের নয়, এ আন্দোলন দেশ রক্ষার। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দলের নেতৃত্বে ২০ দলের পক্ষ হতে দেয়া লাগাতার অবরোধ জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির সাথে সাথে শক্তভাবে দানা বাঁধতে শুরু করেছে। যার দরুন সারা দেশে ডে বাই ডে আন্দোলনের মাত্রা বেড়েই চলছে। বর্তমানে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার কোনো প্রকার আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি নয়। এমতাবস্থায় বিএনপি ও জোটের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে এবং বাধ্য হয়েই তারা অবরোধের পথ বেছে নিয়েছে। সারা দেশ জুড়ে ‘সরকারি অবরোধ’ সৃষ্টি করা আওয়ামী লীগের কর্তা ব্যাক্তিরা ভেবেছিল কিছুই হবেনা। কিন্তু, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি জোটের কর্মীরা পুলিশ, ছাত্রলীগের ক্যাডারদের নিপীড়ন উপেক্ষা করে যেভাবে রাজপথে নেমেছে তা অপ্রত্যাশিত ছিল আওয়ামী লীগের জন্য। আন্দোলনে তৃনমূল কর্মীদের চাঙ্গা ভাবের সাথে বেগম খালেদা জিয়ার লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ এখন পুরোই হতবিহ্বল। কারণ, এই প্রথম বাংলাদেশে সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন একদিনেই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। যা অতীতে কখনই দেখা যায়নি। বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট প্রথমদিনেই আন্দোলনকে যে পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে তাতে পুরো দেশের সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা পেয়েছে। আর এখানে বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিকভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা ও তারেক রহমানের ‘বেটার বাংলাদেশের’ দৃপ্ত প্রত্যয়ের পাশাপাশি তার আবেগগণ আবেদনময়ী আহ্বান বিএনপির তৃণমূলের নেতা কর্মীকে আন্দোলনে শরীক হতে জোরালোভাবে করেছে আন্দোলিত।

বর্তমানে দেশে একটি অনির্বাচিত সিভিলিয়ান স্বৈরাচারী সরকার পুলিশ, বিজেবি ও র্যেব দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। গণবিরোধী ও অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে রাজপথ এখন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। বীর জনতা অবরোধ কর্মসূচি সফল করে ফ্যাসিবাদী ও জুলুমবাজ সরকারের প্রতি গণঅনাস্থা জানিয়েছে। সচেতন জনগণ ও সকল শ্রেণী পেশার মানুষ বাকশালী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কোন ভাবেই রাজপথ ছাড়বে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন গণবিস্ফোরণে সরকারের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বর্তমান গণ-আন্দোলনের যৌক্তিকতা ও সফলতার দ্বারপ্রান্তে যে কারণে:

১. বর্তমান গণ-আন্দোলনের গ্রাউন্ড ও যৌক্তিকতা সর্বজনস্বীকৃত। দেশের সচেতন নাগরিকসহ বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা মনে করেন রাজপথের ব্যাপক আন্দোলন ছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের আর কোনো পথ নেই। ৫ জানুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন মেনে নিয়ে পুরো এক বৎসর সরকারকে সময় দেয়া এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দেশের নাগরিকবৃন্দের মধ্যে একটা পরিস্কার বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে যে জবরদখলকারীরা শান্তিপূর্ণ সমাধানের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে এবং অবৈধ ক্ষমতাসীনরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের সংলাপ থেকে সরে যাওয়ায় আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

২. ২০ দলীয় জোটের প্রধান বিএনপির চেয়ারপারসনকে তার অফিসে অন্তরীণ রেখে জবরদখলকারীরা বর্তমানে বেশ বিব্রত পরিস্থিতে রয়েছে বিধায় জনরোষ প্রতিনিয়ত বিরোধী দলের গণ-আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি শক্ত করেছে।

৩. বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শুধু গণ-আন্দোলনের ডাকই দেননি, দলের নেতা কর্মীর সাথে একাত্ম হয়ে বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকেও তৃণমূল নেতা কর্মী এবং বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের প্রতিরোধের প্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। অন্তরীণ অবস্থা থেকে তার হৃদয়গ্রাহী আহবান দেশব্যাপী সাড়া জাগিয়েছে।

৪. বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আবেদনময়ী ও বাস্তবধর্মী বক্তব্য চলমান গণ-আন্দোলনকে বেগবান করেছে। তার ‘বেটার বাংলাদেশ’ গড়ার দৃপ্ত প্রত্যয় আন্দোলনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা যা তরুণ প্রজন্মসহ সকল স্তরের নাগরিকদের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে তার বক্তব্য জনগনের কাছে পৌছানো বাধাগ্রস্থ করতে আজ্ঞাবহ আদালতের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর এর মাধ্যমে গণ আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

৫. স্বৈরাচারী সরকার গণ-আন্দোলনে হতবিহ্বল হয়ে দেশকে গৃহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশে গৃহযুদ্ধ অত্যাসন্ন। কারণ আমরা সাধারণত দেখি যে, আন্দোলনরত মানুষ তাদের ক্ষোভ বিভিন্নভাবে প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রশক্তির সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে তাদের পেটোয়া বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে শুরু করেছে দেশের জনগনের বাসা বাড়িতে হামলা আর গুলি চালিয়ে গুপ্ত হত্যার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। গাপালগঞ্জের র্যাব আর পুলিশের বন্দুকের বুলেট এই সরকারের প্রাণ ভ্রমরা। কিন্তু গাপালগঞ্জের র্যাব আর পুলিশের বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ জনগণ ছাড়াও দেশের সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাকি সদস্যদের ক্ষোভ ফুসে উঠছে। তাই দেশের অস্তিত্বের স্বার্থে বর্তমান গণ আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতির দিকে যেতে বাধ্য। আর বর্তমান গণ-আন্দোলনের বিপরীতে জবরদখলকারী সরকার কোনো ধরনের যৌক্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করতে না পারায় গত ১২ তারিখের আওয়ামীলীগের সমাবেশ ফ্লপ করেছে।

৬. বিদেশী মিডিয়া, দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহ এবং উন্নয়ন সহযোগীরা দেশের নাগরিকদের প্রতিক্রিয়ার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। যে কারণে শেখ হাসিনা ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করেই চলছেন।

৭. দেশের সকল নাগরিকের চিন্তায় এই কথা বদ্ধমূল হয়েছে যে, শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারকে কঠোর আন্দোলন ছাড়া রাজনৈতিক সমাধানে বাধ্য করা সম্ভব নয়। তাই গণ আন্দোলনকে গণ অভ্যুত্থানে রুপান্তরের প্রচেষ্টায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ পুরো জাতি।

৮. বর্তমান জবরদখলকারীদের দ্বারা সংশোধিত সংবিধান ও আদালতকে নগ্নভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থে ব্যবহারের কারণে দেশের জনগণ মর্মে মর্মে অনুধাবন করছে যে শেখ হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালের চেয়েও ভয়ংকর একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছেন।

৯. ভয়, ভীতি এবং প্রলোভন দিয়ে দেশের সকল মিডিয়ার কন্ঠ রোধ করার কারণে দেশবাসী বিক্ষুব্দ হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আন্দোলনকে প্রতিনিয়ত বেগবান করছে।

১০. বিগত কয়েকদিনের অবরোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগী বিশেষ করে দুই একটি জেলার পুলিশ ব্যতিত অন্যরা আর আগের মত বিরোধী দলের নেতা কর্মীর উপর ঝাপিয়ে পড়ছে না।

১১. আওয়ামী লীগের দলীয় সুবিধাভোগি কিছু কার্টুন চরিত্র ব্যাতিত এখনো দেশের জনগণ যাদেরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে থাকে তারাও বর্তমান ফ্যাসিবাদী আচরণকে ভবিষ্যত রাজনীতি ও নিজেদের নিরাপত্তার অন্তরায় বলে মনে করছে বিধায় তারা মাঠ থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে।

১২. দেশের আপামর জনসাধারণের মনে যৌক্তিক বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে যে এ গণ আন্দোলন ব্যর্থ হলে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব বিলীন হবে এবং বাংলাদেশ স্ট্রাটেজিক্যালি সম্প্রসারনবাদের করতলগত হবে।

১৩. দেশের নাগরিকদের কাছে প্রতীয়মান যে মুক্তিযুদ্ধের ফসল গণ শত্রুদের কাছে চলে যাওয়ায় আজকের দু:সহ রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যা তারেক রহমানের কন্ঠে প্রতিধনিত হওয়ায় জনগণ তার সাথে একাত্বতা অনুভব করে গণ আন্দোলনকে গণ গণঅভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

১৪. বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি দেশের সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনগুলোও সরকারকে সংলাপসহ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করা শুরু করেছে বিধায় গণ-আন্দোলনের পালে নতুন হাওয়া যোগ হয়েছে।

১৫. বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এখন আর কেউ কারো স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু নয়। ভারতের সমর্থন এখন আর কোনো দলের পক্ষে থাকবে না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা আসার পর এটা পরিস্কার যে, ভারত বাংলাদেশের জনগণের বিরদ্ধে অবস্থান নিয়ে উটকো ঝামেলায় জড়িয়ে নিজেদেরকে আর বিতর্কিত করতে চাইবে না। এছাড়া ক্ষমতাসীন বিজেপির সাথে বিএনপি বা তার জোটের সহমর্মিতার সাথে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতাও রয়েছে।

১৬. সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের সময়েও বিএলএফ সৃষ্ঠি করে স্বাধীনতা যুদ্ধকে সাবোটাজ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এমনকি সম্প্রতি শিরীন শারমিন সম্পাদিত ‘তাজ উদ্দিন আহমেদ নেতা ও পিতা’ গ্রন্থে পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছেন যে ‘মুজিব বাহিনী’ তৎকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদকে হত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছিল। তাই চলমান আন্দোলনকে সরকারের পক্ষ থেকে অথবা ঘাপটি মেরে থাকা সুযোগ সন্ধানীরা সাবোটাজ করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু বিরোধী দলের গণ আন্দোলন থেকে রূপ নেয়া গণ অভ্যুত্থানকে দমিয়ে রাখার শক্তি কারোর নেই, এটা নিশ্চিত।

১৭. বর্তমান গণ-আন্দোলনকে বিরোধী দলসহ দেশের মানুষ বাচা মরার সংগ্রাম হিসেবে দেখছেন। কারণ এ আন্দোলন থেকে পিছপা হওয়ার অর্থ হলো নিজেকে বর্তমান ফ্যাসিবাদের কাছে জিম্মি করার পাশাপাশি নিজের জীবনকে অন্যের হাতে সপে দেয়া। খেলা যখন শুরু হয়েছে জীবন আর মরণের তাই কাপুরুষের মত মরণের চেয়ে বীরের মত মরাই উত্তম মনে করবে বিরোধী দলের নেতা কর্মীসহ দেশের মুক্তিপাগল জনগণ। ‘বীর মরে একবার আর কাপুরুষ মরে বার বার’। এই মন্ত্রই বর্তমান গণ আন্দোলনকে গণ অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

১৮. পরিশেষে এবারের গণ-আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত নেতা কর্মীসহ সাধারণ জনগনের তালিকা করা হচ্ছে। আন্দোলনে ত্যাগী নেতা কর্মীকে যথাযথ মূল্যায়নের পাশাপশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বীর সৈনিক হিসেবে জাতি যাতে তাদেরকে কৃতজ্ঞচিত্তে চির দিন স্মরণ রাখে তার দিকে লক্ষ্য রাখা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যার কারণে এবারের আন্দোলনে নেতা কর্মীরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত বিধায় আন্দোলন সফল হতে বাধ্য।

১৯. দেশে রক্তপাত ও আশু গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে আজ আবারো দেশ প্রেমিক সকল নাগরিকের ঐক্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে । যে ঐক্য রক্ষা করবে সম্প্রসারণবাদের কবলে জিম্মী জাতিকে এবং মুক্ত করবে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন সকল মানুষের ঐক্যের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ফিরে পাবে তাদের ভোটের অধিকার, দেশে পূণ: প্রতিষ্টিত হবে গণতন্ত্র আর আইনের শাসন। গণ-আন্দোলনে সফলতার মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় জাতি অপেক্ষার প্রহর গুনছে নতুন করে গড়তে তারেক রহমানের ‘বেটার বাংলাদেশ’।

লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাবেক সহকারী অধ্যাপক শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।